কঠোর নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দিয়েছিলেন ভুট্টো

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারির ভোরে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে লন্ডনের উদ্দেশে একটি চার্টার্ড বিমানে উঠিয়ে দিয়ে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো এক রহস্যময় বার্তায় বলেছিলেন, ‘পাখি উড়ে গেছে।’
১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত নিউজউইকের এক নিবন্ধে বলা হয়, পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ওইদিন মধ্যরাতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মুজিবকে (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সঙ্গে নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দরে যান এবং একটি চার্টার্ড বিমানে উঠিয়ে দেন।
বদমেজাজের জন্য কুখ্যাত জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের চারদিন পর ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। সেদিন থেকে তিনি পাকিস্তানের শীর্ষ দফতরটি নিজের দখলে নেন। এ সময় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে যা করছেন তা সঠিক মনে করেছেন।
সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও গন্তব্য নিয়ে ভুট্টো ব্যক্তিগতভাবে তাঁর (বঙ্গবন্ধু) সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
‘মুজিব ফ্লাইস টু ফ্রিডম’ এই শিরোনামের নিবন্ধে বলা হয়, মুজিবকে বহনকারী বিমানটি হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় ৫১ বছর বয়সী এই বাঙালি নেতাকে বিশ্ববাসী প্রথম দেখলো, যাকে গত বসন্তকালে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. ইয়াহিয়া খান কারাগারে পাঠায়।
লন্ডনের সবচেয়ে অভিজাত হোটেল ক্লারিজ-এ এক সংবাদ সম্মেলনে ক্লান্ত বঙ্গবন্ধু আবেগের সঙ্গে পাকিস্তানের কারাগারে তার অগ্নিপরীক্ষার দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারাগারের কনডেম সেলে ফাঁসির অপেক্ষায় প্রহর গুণছিলাম। কারাগারে যাওয়ার দিন থেকেই আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি জীবিত থাকবোÑ কি থাকবো না। আমি মৃত্যুর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই।’
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘তারা (পাকিস্তান) আমার জনগণের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তাতে তাদের সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।’
লন্ডনে যাত্রাবিরতির সময় বঙ্গবন্ধু একজন স্নেহশীল বাবা ও প্রেমময় স্বামী হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থানরত পুত্র ও স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
তিনি তার পুত্র শেখ কামালকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি বেঁচে আছ? তোমার মা কেমন আছে?’ কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মানসিক শক্তি যোগাতে যিনি স্তম্ভের মতো সবসময় পাশে থেকেছেন, সেই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কন্ঠ স্বামীর সঙ্গে প্রথম কথা বলার সময় আবেগে রুদ্ধ হয়ে আসে।
টাইম ম্যাগাজিনে ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘মুজিব’স রোড ফ্রম প্রিজন টু পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু নয়াদিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও ঢাকায় বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন।
মুক্তির পর ঢাকা বা কোন ঘনিষ্ঠ স্থানের পরিবর্তে লন্ডনকে কেন তিনি বেছে নিলেন, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনারা কি জানেন না, আমি কারাগারে ছিলাম? এটি পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্ত, আমার নয়। বাসস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর