রোগী নয়, ডাক্তারের মানসিক টেস্ট দরকার : মুনিরুদ্দীন আহমেদ

আজকাল অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পান। চিকিৎসকের কাছে গেলেই তাঁরা রোগীকে একগাদা ডায়াগনস্টিক টেস্ট বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগের সঙ্গে আদৌ সম্পর্কযুক্ত নয়।

তবে অনেক রোগের জন্য ডায়াগনস্টিক টেস্ট দরকার আছে। দুর্ভাগ্য হল, চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা শুরু করে দেন এবং অসংখ্য টেস্ট রিপোর্টসহ এক বা দুই সপ্তাহ পর আবার দেখা করতে বলেন। রোগী টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে দেখা যায়, টেস্ট রিপোর্ট চিকিৎসকের কাছে কোনো গুরুত্ব পায় না।

তাহলে এসব টেস্ট কেন? সাধারণ চিকিৎসক বা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তার দুই-তৃতীয়াংশই অপ্রয়োজনীয়। তার পরও চিকিৎসক অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ, উন্নত বিশ্বে কোনো অঘটন ঘটলে রোগী যাতে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে না পারেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আধুনিক বিশ্বে এই নির্মম প্র্যাকটিসই চলে আসছে।

অনেক চিকিৎসক সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যত বেশি সম্ভব অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার আদেশ দিয়ে থাকেন। কারণ, চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সঙ্গে আত্মীক সম্পর্ক রয়েছে। চিকিৎসকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পেয়ে থাকেন । ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করা এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল থেকে চিকিৎসকরা কী ধরনের সিদ্ধান্তে আসেন, তা নিয়েও বড় রকমের প্রশ্ন থাকে।

কোনো পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক না হলে বুঝতে হবে, রোগীর সমস্যা আছে। সুতরাং সমস্যা মোতাবেক চিকিৎসা শুরু করা জরুরি হয়ে পড়ে চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নর্মাল ভ্যালু বা স্বাভাবিক মানের সংজ্ঞা কী? রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা সুগার লেভেল কত হলে স্বাভাবিক কিংবা কত হলে অস্বাভাবিক হবে? এসব মান বহু ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভরশীল, যা কোনো কোনো চিকিৎসক অনেক সময়ই ধর্তব্যের মধ্যে না নিয়েই চিকিৎসা শুরু করেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ রোগীকে অসুস্থ করে তোলা হয়।

মেডিক্যাল টেস্ট বা প্যাথলজিক্যাল টেস্টকে আমরা যত বেশি বিশ্বাসযোগ্য বা প্রয়োজনীয় মনে করি, আসলে ততটা বিশ্বাসযোগ্য নয়, প্রয়োজনীয়ও নয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছু না পাওয়া সত্ত্বেও একজন মানুষ অসুস্থ বোধ করতে পারেন। আবার কেউ সুস্থ বোধ করলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অনেক তথাকথিত অস্বাভাবিক ফলাফল বেরিয়ে আসতে পারে, যা জানার পর তিনি মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতায় ভুগতে পারেন।

মনে রাখবেন, আপনার শরীর ভালো আছে বলে আপনি সুস্থ বোধ করছেন। আপনার শরীরে সম্ভবত কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা থাকলে তা আছে অনেক চিকিৎসকের মাথায়, প্রকৃত প্রস্তাবে, যার সত্যিকার ডায়াগনস্টিক টেস্ট ও চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে চিকিৎসকদের মধ্যেও ব্যতিক্রম রয়েছে।

লেখক: অধ্যাপক, ক্লিনিকাল ফার্মাসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর