বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ

বাংলাদেশে সম্প্রচার হয় এমন বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এই দাবিতে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকপক্ষের আন্দোলনের মুখে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলো।

সোমবার সরকারের এক তথ্যবিবরণীতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে তথ্য মন্ত্রণালয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন ২০০৬ এর ধারা ১৯ এর ১৩ উপধারার আলোকে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বাংলাদেশে ডাউনলিংককৃত বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্ট বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের অনাপত্তি ও অনুমতি এবং লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে সরকারি চ্যানেল বিটিভির পাশাপাশি সংবাদ ও বিনোদনভিত্তিক বেসরকারি অনুমোদিত টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৪১টি। এর মধ্যে সম্প্রচারে আছে ৩২টি। একটি জরিপে দেখা যায়, ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো যত দর্শক টানছে, দেশীয় চ্যানেলগুলো সেভাবে দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। মোট দর্শকের প্রায় ৮০ শতাংশই ভারতীয় বাংলা চ্যানেল দেশে।

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় কলকাতার বাংলা চ্যানেল স্টার জলসা, জি বাংলা, জি সিনেমা ও জলসা মুভিজসহ বিভিন্ন চ্যানেলে বাংলাদেশি বেশ কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোর তুলনায় এসব টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের রেট অনেক বেশি। কিন্তু দর্শকপ্রিয়তার কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানগুলো ইদানীং ভারতীয় এসব বাংলা চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।

এই অবস্থায় বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে দেশের টাকা ‘অবৈধভাবে’ বিদেশে ‘পাচার’ হয়ে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে তা বন্ধের দাবিতে গত ৫ নভেম্বর আন্দোলন শুরু করে বেসরকাটি টেলিভিশনগুলোর মোর্চা ‘মিডিয়া ইউনিটি’। এই দাবিতে গত ২০ নভেম্বর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গেও বৈঠক করে তারা। মিডিয়া ইউনিটি বলছে, বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলে দেশি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ওই বৈঠকেই তথ্যমন্ত্রী ইনু এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান। এর দেড় মাসের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত এলো।

টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের এই আন্দোলনের পক্ষে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অরগানাইজেসন-এফটিপিও। সংগঠনের সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত বলেন, ‘দেশজ শিল্প সুরক্ষার জন্য আন্দোলনকে আমলে নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি টেলিভিশ শিল্পের জন্য ভালো হবে। এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের রেট বাড়বে। এতে কলাকুশলীরাও স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারবে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর