বিমানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না, লজ্জিত হবো

পীর হাবিবুর রহমান

আপনি পদত্যাগ করবেন না, পদত্যাগ করলে আমরা লজ্জিত হবো। নৈতিক বয়ান রাজনীতিবিদরা দিবেন কিন্তু নৈতিক দায় স্বীকার করে তারা পদত্যাগ করবেন না। এটাই আমাদের সংস্কৃতি। রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স বিমানের সুনাম কবে ছিলো, কবে হারিয়েছে মনে নেই। তবে দিনে দিনে জনগণের সম্পদ বিমান জাতীয় অর্থনীতিতে লোকসানের পাল্লাই ভারি করছে। সেবার মান বাড়েনি কখনো। যাত্রীসেবার মান এখন আর কেউ চাইছে না, চাইছে শুধু নিরাপদ ভ্রমণ, জীবনের নিরাপত্তা। আকাশপথে বিমান এখন ভয় আর আতঙ্কের নাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করা বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইটের নাট বল্টু খুলে যায়! রাষ্ট্রপ্রধানসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ যাত্রীদের জীবন হুমকির মুখে পড়ুক তাও আপত্তি নেই। তবুও আপনি পদত্যাগ করবেন না। বিমানের চেয়ারম্যান এমডিও যেন পদত্যাগ না করেন। কারণ আপনার মতো তারাও প্রচণ্ড ক্ষমতাধর ও দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে চেয়ারের শক্তিকে উপভোগ করছেন। প্রতিষ্ঠান পঙ্গু হয়ে গেলে, বিমান দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানী ঘটলে তাও পদত্যাগ করবেন না। আজকের সমাজে ব্যর্থ ও অযোগ্যদের কদর থাকলেও আদর্শিক মানুষদের দিনে দিনে মূল্যহীন করে দেওয়া হচ্ছে। আপনার চেয়ারম্যান এমডিগণ কোথা থেকে এসেছেন তা মানুষের জানার প্রয়োজন নেই। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অতীত নিয়ে জনগণের মাঝে আপনি আপনার দলীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলেও এদেশের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আপনার ভূমিকা ও রাজনীতিতে অবদান গৌরবের।

আদর্শিক রাজনীতিতে আপনি আপনার দল জনগণের আস্থা সমর্থন অর্জন করতে না পারলেও মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার নৌকায় চড়ে আজ ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পেয়েছেন। আপনি মন্ত্রী হয়েছেন এই অর্জন সামান্য নৈতিক দাযের জায়গা থেকে পদত্যাগ করে হারাতে যাবেন না। আমরা লজ্জিত হবো। সিলেটের ফ্লাইট কলকাতায় চলে যাক, চট্টগ্রামের ফ্লাইট মিয়ানমারে উড়ে যাক, বিমানের চাকা ফেটে আতঙ্কিত যাত্রীদের নিয়ে দ্রুত অবতরণ করুক! আমরা এতোটা বেহায়া নই যে লজ্জা পাবো। ভারতে রেল দুর্ঘটনার জন্য লাল বাহাদূর শাস্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন সেটি ইতিহাস। বলা যায় সহজে, শুনতে আনন্দ লাগে কিন্তু অনুসরণ করার মতো নৈতিক সাহস, ক্ষমতা ছেড়ে দেবার মতো নির্লোভ হতে হবে কেন। কারণ আমাদের লজ্জা আছে।

পদত্যাগ মানেই লজ্জা-সরম, ব্যর্থতা, অযোগ্যতা আড়াল করা সহজ স্বীকার করা কঠিন। কঠিনেরে জয় করে রাজনীতিবিদরা দীর্ঘ পথ হাটেন, নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের কথা বলেন কিন্তু ব্যর্থতার অভিযোগে বরখাস্ত বা পদত্যাগে বাধ্য করা না হলে, সেচ্ছায় কেউ পদত্যাগ করেন না। কারণ সবারই একটা লজ্জা আছে। জাতীয় এয়ারলাইন্স বিমান খাদের কিনারে কেন, খাদে গিয়ে পড়ে যাক, লোকসানে ডুবে যাক। তবুও পদত্যাগ করবেন না। বিশ্বের নেতিবাচক ২১টি বিমান সংস্থার তালিকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২য় স্থানে রয়েছে। তাতে কি আপনি পদত্যাগ করবেন না।

একটা সময় বিমানের স্লোগান ছিল- ‘আকাশে শান্তির নীড়’। সেই শান্তি কেউ পাক বা না পাক আপনি পদত্যাগ করবেন না। আপনার কাছে একটাই অনুরোধ আপনি দেশের মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে থাকলে, দেশের মানুষের জন্য বুক ভরা ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থাকলে বিমানের এই পরিণতি কেন, কেন একের পর এক ঘটনা ঘটছে এবং কেনই বা বিমান এতো লোকসান গুনছে। মন্ত্রী থাকাকালে কেনই বা বিমানের ইমেজ ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না, কার হাতে কতো লম্বা সব পাঠকদের জানিয়ে দিন। কারণ আপনি রাজনীতি করেন, মানুষের ক্রন্দন শুনেন। পদত্যাগকারীরা পদত্যাগ করলে মানুষ সম্মান জানায় তবুও আমরা আপনার পদত্যাগ চাচ্ছি না। জানি পদত্যাগ কতো কঠিন! বিমান নিয়ে আপনি চলমান বিপর্য্য়সহ নানা সমস্যা সংকট ও এর সমাধানের পথটা অন্তত আমাদের বলুন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর