না.গঞ্জে প্রচার-প্রচারণা শেষ, ভোটের অপেক্ষা

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। তার আগে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সব ধরনের নির্বাচনী প্রাচার-প্রচারণা বন্ধ হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে এবার পৌনে ৫ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রযোগ করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের ডিআইজি।

প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন মঙ্গলবার প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা নগরীজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রার্থীদের বিশাল বিশাল সব মিছিলে নগরী ছিল মুখরিত। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন তারা।

নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু আছে বলে আশ্বস্ত করে ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোট দিতে অনুরোধ করেছেন উভয় দলের প্রার্থীরা।

তবে প্রচারণার শেষ দিনও বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাাখাওয়াত হোসেন সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে সাখাওয়াত হোসেন নগরীর ১৪ ও ১৭ নম্বর ওর্য়াডে গণসংযোগ করেন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উকিলপাড়া, গলাচিপা, নন্দীপাড়া, ভুইয়ারবাগ, দেওভোগ আখড়া এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বৃহত্তর পাইকপাড়া, ভুইয়াপাড়া, বড় কবরস্থান, ছোট কবরস্থান এলাকায় প্রচারণা চালান নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে। বিকালে প্রচারণা চালান নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাসদাঈর, জামতলা, ইসদাঈর এলাকায়।

গণসংযোগকালে সাখাওয়াত সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে আমি অনেক অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু কোনোটারই সুরাহা হয়নি। তারপরও আমি আশা করি নির্বাচন কমিশন ও সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে। এখনো সময় আছে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ করার জন্য সেনা মোতায়ন করার। আমি সেই দাবি জানাচ্ছি।’

সাখাওয়াত বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আজ ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ একটা পরিবর্তনের পক্ষে তাদের রায় দিতে চায়।’ ২২ ডিসেম্বর ভোট দিতে সবাই কেন্দ্রে যাবেন বলে আশা করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন অভিযোগ করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘তিনি (আইভী) সিটি কর্পোরেশনের সরকারি কর্মকতা- কর্মচারীদের নির্বাচনী কাজে নামিয়েছেন। সরকারি দলের প্রভাব বিস্তার করে তাদের লোকজনকে দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। আমার পোলিং এজেন্টরা যেন দায়িত্ব পালন না করে সেজন্য বিভিন্নভাবে তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এই ব্যাপারে আমি নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি, সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।

প্রচারণার শেষ দিনে আইভী নিজ ওয়ার্ড (১৬ নম্বর) এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। সকালে থেকে দুপুর অবধি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ, বাবুরাইল, বেপাড়িপাড়া, পাক্কারোড এলাকায় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চান তিনি। পরে বিকাল থেকে রাত অবধি ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিতাইগঞ্জ, শীতলক্ষ্যা, সুকুমপট্টি, আলামিন নগর, সৈয়দপুর এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।

এ সময় সাংবাদিকদের আইভী জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছে। তাদের প্রতি আমি আরো আহ্বান জানাব, নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেন নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে।

দলের জেলা সভাপতি শামীম ওসমানের ভূমিকা সর্ম্পকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘নির্বাচনে তার ভূমিকা কখনো নেগেটিভ ছিল না, নির্বাচনে তিনি সব সময়ই পজিটিভ। উনি তো দলের একজন নেতা। সুতরাং উনি সব সময়ই পজিটিভ ছিলেন এবং থাকবেন।’

গতবার ও এবারের নির্বাচনী মাঠ কেমন দেখছেন, জানতে চাইলে আইভী বলেন, ‘আমি তো কোনো পার্থক্য দেখছি না। গতবার আমি যখন যেখানে গিয়েছি, আমি এই রকমই সাড়া পেয়েছি। এবারও আমি একই সাড়া পাচ্ছি।’

বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের অভিযোগ সর্ম্পকে আইভী বলেন, ‘ওনার অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়। ওনাকে আমি নিজে বলেছি, যদি কোথাও কেউ আপনার সাথে অথবা আপনার নেতাকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে, তাহলে আমাকে নিজে যেন ফোন করে। তার সাথে তো আমার ভালো একটি সম্পর্ক আছে। এই শহরেরই তো আমরা। আমার মনে হয় না কোথায়ও তার সাথে অন্যায় করা হয়েছে।

সাখাওয়াত শুধু শুধু মিডিয়ার কাছে অভিযোগ করছে দাবি করে আইভী বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি, আপনার সাথে খারাপ আচরণের পেছনে যদি আমার ভাইও জড়িত থাকে তাহলে আমি তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দেব।’ একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান বলে জানান আইভী।

ভোটের দিন সবাই উৎসবের আমেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন আশা করেন আইভী।

ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলে গুলি: ডিআইজি

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হলে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর মাসদাইর পুলিশ লাইন এলাকায় নির্বাচনে দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

নুরুজ্জামান বলেন, “আইনে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষায় গুলি চালানোর বিধান রয়েছে। নির্বাচনে কেউ ভোট কেন্দ্র দখল ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা

বিঘœ করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছুঁড়বে। যদি কোন পুলিশ সদস্য গুলি না ছুঁড়ে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।” নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচনের কমিশনের চাহিদার অতিরিক্ত ফোর্স দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিআইজি নুরুজ্জামান বলেন, “প্রয়োজন হলে আরো দেওয়া হবে।” তিনি বলেন, “কে সরকারী দল বা কে বিরোধী দল এটা দেখার সময় নেই। সুষ্ঠ নির্বাচন ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সকল পদক্ষেপ নেবে। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নাই মন্তব্য করে নুরুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের বলা হয়েছে, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার না করে সকলকে সম্মান দিয়ে কাজ করুন’।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মইনুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন।

নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আশ্বাস রির্টানিং অফিসারের

নির্বাচন ঘিরে নগরে সাড়ে ৯ হাজার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে বলে এর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার। তিনি জানান এত বড় নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে কোনো অপরাধীই কোনো কর্মকা- চালাতে পারবে না।

এখন পর্যন্ত নির্বাচন পরিবেশ অত্যন্ত সুষ্ঠ এবং স্বাভাবিক আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই পর্যন্ত একটি ঘটনাও নির্বাচনী এলাকায় ঘটেনি। এটা পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো থাকার কারণেই হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর