বিবর্ণ ভালবাসার রঙিন গল্প…….

লেখকঃ নিলয় আহসান নিশো (বৃষ্টিহীন বর্ষাকাল)
..

(১)
দেশের স্বনামধন্য একটা মহিলা কলেজের সামনে চা এর দোকানে বসে বসে চা খাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ১১কাপ চা খাওয়া হয়ে গেছে। আমি একজন উত্তম শ্রেনীর বেকার উইথআউট ফরমালিন। আসলে আমি এখানে বসে চা খাচ্ছি আর উনার আসার জন্য অপেক্ষা করছি। উনি এখন ক্লাসে আছে।সেই সকাল ১০টা থেকে এখন ১:৪৫ বাজে। আর ১৫মিনিটের মধ্যেই উনার ক্লাস শেষ হবে।আর উনি আসবেন। আর হ্যা সকালে এখানে আমাকে উনিই বসিয়ে রেখে গেছেন ক্লাস করতে আবার কড়া নিষেধ ও করে গেছেন যে তার ক্লাস শেষ না হওয়া অবধি যেন এখান থেকে এক পা ও না উঠি।
..

ঠিক বেলা ২:০৭মিনিটে ম্যাডাম (নিরুপমা) এলেন। এসে বললেন চলো। আমি বললাম সর্বমোট ১৩কাপ চা খেয়েছি। রাগে কট মট করতে করতে ম্যাডাম পার্স থেকে ৬৫টাকা চাচা এর দাম দোকানিকে দিয়ে দিল। আর রাগে গজ গজ করতে করতে হাত ধরে টানতে টানতে রিক্সা ডাক দিল। রাগের কারন টা আসলে টাকা নয়। আসল কারন টা হল আমার চা খাওয়া। আমার প্রতিদিন সাধারণত ২৫-৩০কাপ চা লাগে। যেটা ম্যাডামের সহ্য না। তাই চা এর কথা শুনেই রেগে গেছেন। আর ম্যাডাম রেগে গেলে তার মুখে একটা লালচে আভার সৃষ্টি হয় যেটা দেখে আমি বারবার তার প্রেমে পড়ে যাই। সেজন্যই ম্যাডাম রেগে থাকলেও আমার কিন্তু হাসি পাচ্ছে আর সেই হাসি টা দেখে ম্যাডাম রাগের পরিমান গুণোত্তর ধারায় রেড়ে যাচ্ছে।
..

দুপুর বেলা তাই রাস্তায় রিক্সা পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তবুও অনেক্ষন পর একটা রিক্সা পেয়ে গেল ম্যাডাম। তাই উঠে বললো নীলক্ষেত চলেন। ও হ্যা আজকে ম্যাডামের শখ হয়েছে আমার পছন্দের উপন্যাস গুলো কিনবে। আর সেগুলো আমাকে সাথে নিয়েই কিনবে। যদিও টাকা টা সেই দিবে তবুও বই গুলো তে লিখে দিতে হবে যে আমি তাকে গিফট করলাম। আমি আবার এইসব গল্প উপন্যাস কম পড়ি। মানে পড়ার সময় পাইনা। কারন বেকার রা ইজি কাজে বেশি বিজি থাকে এবং আমি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
..

ঢাকার বিখ্যাত জ্যাম কে উপেক্ষা করে ১৫মিনিটের রাস্তা ১ঘন্টায় পেরিয়ে নীলক্ষেত এসে থামলো রিক্সা। দুজনে নামলাম আর ভাড়া টা ম্যাডামই দিয়ে দিল। তারপর দুজনে হাটতে শুরু করলাম আর স্টলে স্টলে বই ২টা খুজতে শুরু করলাম। ও হ্যা বলা হয়নি আমার ২টা পছন্দের উপন্যাস আছে। অনেক পুরোনোই বটে তবুও আমার ভাল লাগে।সেটা হল নিমাই ভট্টাচার্য এর #মেমসাহেব আর কাশেম বিন আবু বাকার এর #শ্রেয়সী।

কিছুক্ষন খুজাখুজির পর পেয়েও গেলাম।বই ২টা কিনে নিয়ে আবার হাটা শুরু করলাম। দুপুরের প্রচন্ড রোদে আমার হাটতে অনেক ভাল লাগে। কিন্তু বিপাকে পড়লাম ম্যাডাম কে নিয়ে। বেচারি এমনিতেই দুধে আলতা গায়ের রঙ তার উপর এই রোদে লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। তবুও উনি আমার সাথে হাটবেই। কারন মেয়েটা বড়লোক বাপের অতি আদরের কলিজার টুকরা একমাত্র বড় মেয়ে। ছোট একটা ভাই আছে অবশ্য, অন্তু…..
রোদে হাটার অভ্যাস তার কখনোই ছিল না। তাই ম্যাডামের অনেক কষ্ট হচ্ছিল রোদে হাটতে। অগত্যা আমার ইচ্ছা কে বলিদান দিয়ে একটা রিক্সা নিতে হল।
..

তারপর রিক্সায় কিছুক্ষন ঘুরে বিকেলের পর পুরান ঢাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেয়ে ম্যাডাম কে বাসায় নামিয়ে দিয়ে রিক্সা ভাড়া টাকা টা নিয়ে বাসায় আসার জন্য হাটা শুরু করলাম। যদিও রিক্সা ভাড়া টাকা টা দেবার আগে বার বার বলছে হেটে যেন বাসায় না যাই আর টাকা টা যেন চা খেয়ে না নষ্ট করি……
..

(২)
..

আমার বন্ধুর বড় বোনের বিয়ে। আমার বন্ধু বাড়ির একমাত্র ছেলে তাই বিয়ের ২দিন আগে থেকেই এসে তার সাথে মিলে সব কাজ করতে হচ্ছে বাড়ির ছেলে হিসেবে। ২দিন কাজ করে ঘুমানোরর সময় হয়নি। তাই মোটামুটি ক্লান্ত। বিয়ের দিন বর পক্ষ আসলে তাদের কে নাস্তা থেকে আপ্যায়ন & খাওয়ানোর সব কাজ আমার & আমার বন্ধুর ঘাড়ে পড়েছে।
..

সন্ধ্যে নাগাদ বর পক্ষ চলে আসলো। আমিও আমার মতই কাজ করে যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হল বর পক্ষের একটা মেয়ে আমাকে অনেক্ষন ধরে ফলো করছে। আমি পাত্তা দিলাম না কারন মেয়েদের পিছে ঘুরা বা ফ্লার্ট করা টা আমাকে দিয়ে হয় না। তবে মেয়েটা যে আগুনঝরা সুন্দরী এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। যথারিতি আমি আবার আমার কাজে মনোনিবেশ করলাম বর পক্ষের অতিথিদের নাস্তা দিচ্ছিলাম। সেখানে মেয়েটিও ছিল আমি তাকেও নাস্তার প্লেট টা ধরিয়ে দিয়ে নাস্তার পর্ব টা শেষ করে এক কোনায় এসে আনমনে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম একটু। কারন একটু পর আবার সবাইকে খাওয়াতে হবে আমাদের দুজনকেই।
..

মেয়েটিঃ আপনার কি অনেক ভাব? নাকি অনেক ইগো?
আমিঃ আমাকে কিছু বলছেন?
.
মেয়েটিঃ আপনি আর আমি ছাড়া এখানে কি আর কেউ আছে?
আমিঃ তা নেই কিন্তু আমার তো আপনার সাথে কথাই হয়নি তাহলে আমার ভাব কিনা বুঝলেন কিভাবে?
.
মেয়েটিঃ আমি আসার পর থেকে ছেলে থেকে বুড়ো এমন কেউ নেই যে একবার তাকাই নি। কিন্তু আপনি নির্বিকার হয়ে আছেন যে?
আমিঃ আপনি সুন্দরী বলেই সবাই তাকিয়েছে এতে তো দোষের কিছু নেই।
.
মেয়েটিঃ আমিও তো সেটাই বলছি। আপনি তাকান নি কেন? আর এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন কেন?
আমিঃ আমি এরকম ই… আবেগ আমার জন্য নয়…
.
মেয়েটিঃ হয়েছে… বুঝলাম.. এখন মাথা টা তুলুন আমার মনে হল আপনার অনেক খিদে পেয়েছে মানে এখনো নাস্তা করার সময় পাননি। তাই আমি আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে এলাম আসেন একসাথে খাই।
আমিঃ আপনার মাথা ঠিক আছে? আপনি মেহমান আর আমি হোস্ট।
.
মেয়েটিঃ আমি বরের কাজিন.. নিরুপমা…আপনার নাম টা আমি জানি। নিলয়.. নিলয় আহসান নিশো। আপনি বউয়ের ভাইয়ের বন্ধু। আমি আগেও এই বাড়িতে এসেছিলাম পাত্রী দেখার জন্য কিন্তু আপনাকে দেখি নাই। পাত্রীর ভাইয়ের কাজ থেকে আপনার সম্পর্কে জেনে নিলাম।
আমিঃ ওহ তাহলে তো বলার আর কিছুই নেই।
.
মেয়েটিঃ হম নিন এবার নাস্তা করি একসাথে…
আমিঃ এটা কি ভাল দেখাবে?
.
মেয়েটিঃ নাস্তা করবেন কিনা? (কপট রাগী রাগী

ভাব নিয়ে)
আমিঃ আচ্ছা দিন…..
..

মেয়েটির চোঁখে অদ্ভুত এক মায়া আছে। এজন্যই তার দিকে তাকাতে পারছিলাম না। মায়াবতীরা এমনি হয়। সেদিন বর পক্ষের সবাইকে খেতে দিচ্ছিলাম কিন্তু অনেক্ষন পর বুঝলাম মেয়েটি এখানে ছিল না। আমি ভাবলাম অন্য কোথাও অথবা ঘরে বউয়ের সাথে খাবে। তাই আমিও আর সেদিকে মন না দিয়ে সব কাজ শেষ করে নিলাম আর আবার কোনায় বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম রাত ১০টার দিকে…
হটাৎ কোথা থেকে যেন মেয়েটা ঝড়ের বেগে এল। সাথে এক প্লেট খাবার নিয়ে। এসে এমন ভাবে খেতে বললো যেন আমি তার হাজার বছরের চেনা।
..

আমি আপনার সাথে খাবো তাই সবার সাথে খেতে বসি নি। নিন খাওয়া শুরু করেন। আমি বললাম আপনাকে দেখে কিন্তু আপনার মাথা খারাপ বলে মনে হয় না। আপনি ভুল করছেন, যান আপনি রুমে গিয়ে খেয়ে নিন। আমার এইসব নেকামি ভাল লাগে না। যান একটু একা থাকতে দিন। একটু ধমক দিয়েই বললাম। বলেই আমি অন্য দিকে মুখ করে বসে মোবাইলে গেমস খেলতে শুরু করলাম।
২-৩মিনিট পর মনে হল কেউ পাশেই ফুপাচ্ছে। আমি মাথা ঘুরিয়ে দেখি মেয়েটি কাঁদছে। আমি তো অবাক…
ভাবলাম এটা নিয়েই আবার বিয়ে বাড়িতে কি না কি হয়ে যায়।যে আমি বরের কাজিন কে কি বলছি যার জন্য কান্না কাটি হয়ে গেছে…..
..

আমিঃ কি হল আপনার? কাঁদছেন কেন? (নরম সুরে)। মেয়েটিঃ আমাকে কেউ কখনো বকা দেয় নি। আপনি আমাকে বকেছেন। কেউ আমাকে বকলে আমার অনেক কান্না পায় (ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো)।
.
আমিঃ আচ্ছা আমি দুঃখিত। আমার মাথা ঠিম ছিল না। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
মেয়েটিঃ এমন করলে হবে না… আপনি এখন যদি আমার সাথে খেতে রাজি হন তাহলে সব ঠিক আছে নাহলে কিন্তু কান্না থামাবো না…
.
আমিঃ (মহাবিপাকে পড়লাম).. আচ্ছা ঠিক আছে খাবো..
মেয়েটিঃ নিন হা করুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি….
.
আমিঃ এক কাপ চা হবে…
মেয়েটিঃ আপনি চা খোর নাকি?
.
আমিঃ না মানে ভাত না হলেও চলে কিন্তু চা লাগবেই আমার…
মেয়েটিঃ আচ্ছা এখন ভাত টা খেয়ে নিন.. সময় হলে চা টা ও পেয়ে যাবেন…
..

সেইদিন যাবার আগেই মেয়েটি আপনি থেকে তুমি তে নামিয়ে দিয়ে তার পর গিয়েছিল ওই টুকু ধমকের জন্য ব্লাকমেইল করতে করতে…। তারপর কয়েক দিন পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে আমারমার কাছে…
ফোন টা নিরুপমার ছিল… সে আমার সাথে দেখা করতে চায়।এটা জেনেও যে আমি পুরাই অচল পয়সা….
অনেক জোড়াজুড়ির পর রাজি হতেই হয়…..
তারপর চলছে বছর তিনেক এভাবেই……..
..

(৩)
..

নিরুপমাঃ নিলয় বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ বাড়ছে।কি করবো আমি?
আমিঃ রাজি হয়ে যাও তাড়াতাড়ি…..
নিরুপমাঃ নিলয় তুমি কি কখনো সিরিয়াস হবা না? আমি আর বাড়িতে কি বলে বিয়ে আটকাবো বুঝে পাচ্ছি না.. তুমি প্লিজ কিছু একটা করো। আমি আব্বুকে মেনেজ করে নিবো। তুমি শুধু কিছু একটা করো।
.
আমিঃ তোমার আব্বু কি আমার কথা জানে?
নিরুপমাঃ কিভাবে বলবো? এখন তো দেখা করতে পারছি। তোমার কথা জেনে গেলে সেটাও বন্ধ হয়েই যাবে।
আমিঃ তাহলে আর বলিও না। আমার মত ভ্যাগাবন্ড বেকারের মধ্যে ভালবাসার কি খুজে পেলে বুঝলাম না আমি এখনো।।।
তোমার আব্বু আম্মু তোমার জন্য ভাল ছেলে খুজে দিবে।তাদের দেখেই বিয়ে করে নাও। সুখী হবে।
.
নিরুপমাঃ তোমার কাছে আমি তোমার ফালতু ফিলোসফি শুনতে আসি নাই। একটা চাকরি করার চেষ্টা করো। নাহলে ফলাফল ভাল হবে না। আর মনে রেখ আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। আর আমার আব্বু আম্মুর আমি একটাই মেয়ে।
ভেবে চিনতে কাজ করো।
বাই…..
আমিঃ অবাক হয়ে… এই মেয়ে তো পরোক্ষ ভাবে সুইসাইড এর হুমকি দিয়ে গেল….
আচ্ছা শুনো ২০টাকা দিয়ে যাও….
চা খাবো….
নিরুপমাঃ রাগে ফুসতে ফুসতে পার্স থেকে ১০০টাকা দিয়ে হন হন করে চলে গেল….
আমিও টাকা টা নিয়ে মেসের উদ্দেশে রওনা হলাম….
..

(৪)
..

বিষন্ন মনে পুকুর পাড়ে বসে আছি….
আমার জীবনের অনেক কিছুর সাক্ষী এই পুকুর পাড়।মন খারাপ থাকলে এখানে এসে বসে থাকি… দুপুরবেলা রোদের মধ্যে পুকুর পাড়ে বসে আছি।
হঠাৎ মধ্য বয়সী একজন লোক পাশে এসে দাড়ালো। দাড়িয়েই বললো তোমার নাম নিশ্চই নিলয়?
আমি চমকে গিয়ে বললাম জি হ্যা।কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
আর চিনলেন ই বা কিভাবে?
লোকটি মুখে বিরক্তি ভরা ভাব নিয়ে বললো ওসব জেনে কাজ নেই।আর এই ভর দুপুরে রোদের মধ্যে বসে পুকুর পারে ঢিল ছূড়তে দেখেই বুঝেছি এটা তুমি ছাড়া আর কেউ না।
আমি অবাক হয়ে ভাবছি এই লোকটা আমাকে পুকুর পাড়ে এসে মিট করেছে তার মানে ভাল করেই আমার সম্পর্কে জেনে এসেছে।
..

কিন্তু লোকটাকে আমি কখনো দেখি নাই বা আমার পরিচিত মনে হচ্ছে না।কিন্তু লোকটার কথা বলার ধরন টা পরিচিত মনে হচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়লো ইনি তো নিরুপমার আব্বু। নিরুপমার ফোনে একদিন তার আব্বুর সাথে নিরুপমার ছবি দেখেছিলাম।এতক্ষনে আমার কাছে সব কিছু পরিস্কার হল।
লোকটি আমার দিকে বিরক্তিভরা চোখে তাকিয়ে আছে।
..

লোকটিঃ তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
আমিঃ অবশ্যই বলবেন … তা এখানেই বলবেন নাকি বাইরে কোথাও?
লোকটিঃ এটা কি কোন কথা বলার জায়গা?
আমিঃ ওহ আচ্ছা.. তাহলে এক কাজ করেন কাছেই আমার মেস আছে ওখানেই গিয়ে বসি।আমি কোথায় থাকি সেটাও তো আপনার দেখা দরকার।
লোকটিঃ আচ্ছা চল…
আমিও লোকটিকে নিয়ে হাটা শুরু করলাম দুপুরের রোদে…
..

কিছুক্ষণ পর আমি আমার মেসের গলিতে চলে আসলাম। এসেই বুঝতে পারলাম ভদ্রলোকের সমস্যা হচ্ছে গলির গন্ধে নাকে রুমাল চেপে ধরে আছেন তিনি। আমিও বলা শুরু করলাম, এই গলির শেষ মাথায় আমার মেস। আমি এখানেই থাকি।আর আপনার মেয়ে ও ২দিন এসেছিল আমার জন্য ডাক্তার নিয়ে। ২দিন ধরে জ্বরে পড়ে ছিলাম তো তাই।
কথা বলতে বলতেই আমার মেস এ ঢুকে পড়লাম।
..

ঢুকেই দেখি আমার বিছানার পাশে দুপুরের মিল রাখা। আমি অবাক হলাম কারন আমার কাছে আজকে মিল এর টাকা ছিল না। তাই মিল দেয়া হয়নি। আমি সাদ্দাম কে ডেকে বললাম এটা কার মিল?
সাদ্দাম বললো ভাই আপনার। আপনার কাছে মিল দেবার টাকা ছিল না তাই বলে কি আপনাকে রেখে আমরা খাবো?
আমি বললাম ওহ তাই বল…
আর এইসব আমরা নিরুপমার আব্বুর সামনেই বলছিলাম।
উনি যে আমার উপর চরম বিরক্ত সেটা উনার কুচকানো ভুরু দেখেই বুঝতে পারছিলাম।
উনি বললেন এখানে কিভাবে থাকো?
এটা কি মানুষ থাকার মত অবস্থায়য় আছে?
আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়েই বললাম আপনার মেয়ে কিন্তু কখনো এমন করে বলে নি….
..

মেস থেকে বাইরে এসে একটা চা এর দোকানে বসলাম। আর ঊনাকে চা খেতে বললে তিনি নাক সিটকে বললেন এখানে কি চা খাওয়া যায়?
আমি বললাম আচ্ছা আমি খাচ্ছি আপনি দেখুন…
বলেই রহমান কাকাকে একটা চা দিতে বললাম।
আমি চা খাচ্ছিলাম আর উনি বলা শুরু করলো?
:তোমার পরিবারে কে কে আছেন?
:আমি ও বললাম আব্বু আম্মু ভাইয়া ভাবি ভাতিজা সবাই।
:কি করো তুমি? চাকরি বাকরি কিছু করবা নাকি আজিবন এমন ভ্যাগাবন্ড হয়েই থাকবা।
:আমি বললাম ওসব আমাকে দিয়ে হয়না।
: লেখাপড়া কতদুর করেছ নাকি ওটাও করোনি?
:বলার মত করি নি কিন্তু চলার মত করেছি।
ঃতাই….কি খাওয়াবে আমার মেয়ে কে বিয়ে করে?
বাতাস? নাকি ঘরজামাই থাকার ইচ্ছা আছে কারো?
:আমি না খেয়ে থাকি না। আর আপনার মেয়ে আমাকে বিয়ে করলে সে ও না খেয়ে থাকবে না।
:তোমার কি মনে হয় তোমার মত একটা ভ্যাগাবন্ড এর হাতে কেউ তার মেয়েকে তুলে দিবে?
:অবশ্যই না… আর আপনি সেটা বাসা থেকে বের হবার আগেই ঠিক করে এসেছেন যে আপনি আপনার মেয়ে কে ঠিক কি কি দোষ গুলো আমার দেখিয়ে অন্য কারো সাথে বিয়ে দেবার জন্য রাজি করাবেন…..
:বুদ্ধি আছে দেখছি।তাহলে এই বুদ্ধি দিয়েই আমার মেয়েটার মাথা খেয়েছো?
:ভুল বললেন আপনার মেয়ে কে ইম্প্রেস করার জন্য আমি কখনোই কিছু করি নি।
:আচ্ছা আমি আসি থাকো তুমি…
:আচ্ছা যান তবে চা এর বিল টা দিয়ে গেলে ভাল হত, মানে আমার কাছে টাকা নেই তো তাই….
:এইবার প্রচণ্ড রেগেই আমার হাতে ৫০০টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে হন হন করে চলে গেলেন……
..

(৫)
..

রাতে নিরুপমার ফোন।
নিরুপমাঃ তুমি আব্বু কে কি বলেছ?
আমিঃ তেমন কিছুই না।
নিরুপমাঃ আব্বু বাসায় এসে আমার সাথে এখনো কথা বলেনি। আম্মুকে দিয়ে বলে দিল কাল কে তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে।
আমিঃ ওহ আচ্ছা… কিন্তু তোমার আব্বু যে আমার কাছে আসবে সেটা তো তুমি আমাকে বলো নাই আগে।
নিরুপমাঃ তোমার কাছে থেকে এসে সেদিনের পর থেকে আমার মন মেজাজ সবসময় খারাপ থাকতো। আব্বু এটা লক্ষ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি সব কথা বলে দিছি। কিন্তু আব্বু যে তোমার কাছে যাবে সেটা আমাকে বলে নি।
আমিঃ ভাল করেছ। তোমার আব্বু আমাকে রিজেক্ট করেই গেছে। এখন বাসায় নিয়ে হয়তো শেষ অপমান টুকু করবে….
নিরুপমাঃ বাবু… আব্বু এমন করবে না। আব্বু কে আমি ভাল করেই বলেছি তোমাকে ছাড়া আমি হ্যাপি হব না। আর আব্বু আমার হ্যাপিনেস এর জন্য সব করতে পারে।
..

পরের দিন নিরুপমাদের বাসায়……
আমি বসে আছি। পাশে অন্তু বসে মোবাইলে গেমস খেলছে। নিরুপমা ঘরে বসে ছটফট করছে।
কিছুক্ষন পর নিরুপমার আব্বু আম্মু নিরুপমা কে নিয়ে এসে আমার সামনে সোফায় বসে আমার গতদিনের কার্যকলাপ সুবিস্তারে বর্ননা করে নিরুপমা কে শুনালো।
তারপর আমাকে বলতে বললো।
আমি সব মেনে নিলাম। এখন নিরুপমার আব্বু তার নিরুপমার কাছে জানতে চাইলো যে সে এখনো আমাকে বিয়ে করতে চায় কিনা?
নিরুপমা চুপচাপ মাথা ঝাকিয়ে হ্যা সুচক সম্মতি দিল….
..

আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল নিরুপমার আব্বু আমার উপর রেগে নেই। তাই তিনি মেয়ের সুখের জন্য মেনে নিবেন আমাকে।
শেষে তিনি বললেন, বিয়ের প্রস্তাব ছেলেদের পরিবার থেকে মেয়েদের পরিবারে আসে।
তুমি তোমার আব্বু আম্মু কে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বল….
নিরুপমার মুখে খুশি টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল….
..

আমি তখন বলা শুরু করলাম…
আনকেল কালকের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আপনি আমাকে রিজেক্ট করার উদ্দেশ্য নিয়েই আমার সাথে কথা বলতে গেছেন। তাই আমিও আপনার সাথে সেভাবেই কথা বলেছি। আর আমি কাউকে ইম্প্রেস করতে পারি না আর আপনাকে ইম্প্রেস করতেও চাই নি।
আনকেল আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন আমক চাকরি করবো কিনা?
আনকেল আমাদের রেন্ট এ কার এর একটা ছোট ব্যবসা আছে। আমি ঢাকার ব্যবসা টূকূ দেখাশুনা করি। কিন্তু ব্যবসায়ের টাকা টা আমি নেই না। গাড়ি গুলো রিপিয়ারিং টা আমি নিজে করি এবং সেই মেকানিক এর বিল টা দিয়েই চলি। যেটা আপনার মেয়ে ও এখনো জানে না। তাই আনকেল আমার চাকরি করার দরকার হবে না।আব্বুর মানে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা টা ভাল করে দেখলেই আমাদের মানে আপনার মেয়ে & আমার সংসার চলে যাবে।
..

এইবার নিরুপমার আব্বু আম্মুর মুখে একটা স্বস্তির হাসি দেখতে পেলাম।কিন্তু নিরুপমার দিকে তাকিয়ে ভয় পেলাম।
একটু পর নিরুপমার আব্বু আম্মু উঠে গিয়ে বললেন তোমরা কথা বল…..
..

নিরুপমার আব্বু আম্মু উঠে যেতেই নিরুপমা অন্তু কে রাগ দেখিয়ে বললো ভাইয়া… তোমার পড়াশুনা নাই??
যাও পড়তে বস… বলেই আমার হাত টা ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে গেল…
গিয়েই বললো আমি তোমাকে বিয়ে করবো না নিলয়…
আমি বললাম কেন?
তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলছো মিথ্যাবাদী কোথাকার….
আমি একটা মিথ্যাবাদী কে বিয়ে করতে পারবো না…..
নিরুপমা আমি আমাদের ভালোর জন্যই মিথ্যা বলেছিলাম। আমি চাইতাম না কেউ আমাকে ধনী ভেবে ভালবাসুক.. আমি চাইতাম এমন কাউকে… যে শুধু আমাকেই ভাল বাসবে….
আর তুমি সেই জন… তুমি আমার উপমা হীন নিরুপমা….
নিরুপমা এবার নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না…. আমাকে জরিয়ে ধরে বাঁচ্চাদের মত করে কাঁদতে শুরু করলো…….
নিরুপমা…..
“এতটুকু সময় ধরে হাসো যতক্ষন দম থাকে…..
এতটুকু সময় ধরে ভালবাসো যতক্ষন জীবন থাকে..

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর