নৌকা বনাম ধানের শীষ যুদ্ধে কাঁপছে না’গঞ্জ

কাল বাদে পরশু বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর-পোরেশনের (নাসিক) ভোট। বলতে গেলে সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি এখন এই নির্বাচনের দিকে নিবদ্ধ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে এটিই শেষ সিটি নির্বাচন। সিটি করপোরেশনের নির্বাচন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে। সে কারণে পুরো নির্বাচনটি পরিণত হয়েছে কার্যত ‘নৌকা বনাম ধানের শীষ যুদ্ধে’।

নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে কাগজে-কলমে সাতজন প্রার্থী। বিদায়ী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী ‘নৌকা’ প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের একক প্রার্থী হিসেবে। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ ২০ দলের একক মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ২০ দলের শরিক এলডিপির কামাল প্রধান ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছেন সাখাওয়াতকে। ফলে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আইভী ও সাখাওয়াত। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৬ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৩৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবমিলিয়ে প্রার্থী সংখ্যা ২০১ জন।

নৌকা-ধানের শীষের লড়াই হওয়ায় নাসিক নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই। যে কারণে দু’দলের নেতারাই নিজেদের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে এতদিন চষে বেড়িয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আনাচে-কানাচে। তবে এক্ষেত্রে দলের শীর্ষ প্রায় সব নেতাসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দলে দলে নারায়ণগঞ্জে গেছেন। সংসদে না থাকায় নির্বাচনী আচরণবিধির আওতামুক্ত ছিলেন তারা। আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই মন্ত্রী-এমপি হওয়ায় আচরণবিধির কারণে তেমন একটা যেতে পারেননি।

গত ৫ ডিসেম্বর শুরু হওয়া প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার মধ্যরাতে। বহিরাগতদের গতকাল রাত

১২টার মধ্যে নাসিক এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গতকাল সোমবার থেকে আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে সকল বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

১৪৭ কেন্দ্রের ১৩৭টিতে ‘বিশেষ নজর’ ইসির

নাসিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে পুরো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা। ১৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টির প্রতি বিশেষ নজর রাখবে নির্বাচন কমিশন। শুধু ভোটকেন্দ্রে ও ভোটারদের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার নিরপত্তা বাহিনীর সদস্য। স্টাইকিং ফোর্স হিসাবে ইতোমধ্যে ২২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য নারায়ণগঞ্জে মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার, ভিডিপি সদস্য নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন। দেশের কোনো নির্বাচনে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় এত বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আর অতীতে মোতায়েন হয়নি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ ইত্তেফাককে বলেন, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সোমবার থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। গোলমাল করার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে পুরো শহর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

নির্বাচনী মাঠে বিজিবি

গতকাল থেকে মাঠে নেমেছে ২২ প্লাটুন বিজিবি। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাকে ‘বেশি ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনা করে সেখানে ‘বাড়তি ফোর্স’ মোতায়েন করা হচ্ছে। বিজিবি সদস্যদের ১০ প্লাটুনই থাকছে সিদ্ধিরগঞ্জে। এছাড়া শহর এলাকায় সাত প্লাটুন ও বন্দর এলাকায় আছে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি। আজ মঙ্গলবার র্যাব, বুধবার পুলিশ, এপিবিএন, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে নামবে। শিল্প পুলিশও থাকবে মাঠে। আজ র্যাবের ২৭টি মোবাইল টিম মাঠে নামবে। প্রতিটি দলে থাকবেন ১২ জন করে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশের তিনটি করে ৮১টি টিম টহলে থাকবে। প্রতিটি টিমের সদস্য ১২ জন। ভোটের সময় শিল্প পুলিশের ২০০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ

নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল মধ্যরাত থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থানরত বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে সোমবার রাত ১২টার মধ্যে বহিরাগতদের এলাকা ছাড়তে হবে।

আজ থেকে প্রচারণা ও যানচলাচল বন্ধ

নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে (ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে) ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত (ভোটের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় সব ধরনের জনসভা, মিছিল, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া আজ মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে আগামী ২২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল এবং ২১ ডিসেম্বর (বুধবার) রাত ১২টা থেকে ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, বাস, টেম্পো, কার, পিক-আপ, জিপ, ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত যানবাহন ও জরুরি কাজে যান চলাচলের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট

কালো টাকা আর সন্ত্রাসী রুখতে নারায়ণগঞ্জের সব প্রবেশপথে পুলিশি চেকপোস্ট বসেছে। একইসঙ্গে সাদা পোশাকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সক্রিয় আছেন। তবে সিটির গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে শনিবার থেকেই অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।-ইত্তেফাক

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর