পাক সেনার গুলিতে মৃত বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের দেহ ছিঁড়ে খেয়েছিল কুকুর

সম্ভব নয়৷ ভারতীয় সেনার আঘাত ক্রমাগত ভয়ঙ্কর হচ্ছে৷ সেটা বুঝতে পেরেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সেনাধ্যক্ষ জেনারেল এ এ কে নিয়াজি৷ পরাজয় নিশ্চিত জেনে মরণ কামড় দিতে চেয়েছিল পাকিস্তান৷ যার ফল-গণহত্যা৷ ঘটনার দিন ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ মৃতদেহের স্তূপে ঢাকা পড়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা৷ শোকের আবহেই দিনটি স্বাধীন বাংলাদেশে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবেই পালিত হয়৷

১৪ ডিসেম্বর রাতেই শুরু হয়েছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার চূড়ান্ত পর্ব৷ একাধারে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিকদের খুন করা হয়৷ পাকিস্তানি সেনা৷ উদ্দেশ্য বৃহত্তর বাঙালি জাতিসত্তাকে বিশ্ব মানচিত্রে মুছে দেওয়ার চেষ্টা৷ ভয়াবহ এই মৃত্যু যজ্ঞের পরিকল্পনাকারীর নাম মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি৷ তিনি ছিলেন পূর্বকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা৷

ডিসেম্বর সকাল৷ মৃতদেহের স্তূপে তখন ঢেকে রয়েছে ঢাকা শহর৷ কয়েকজন কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন৷ রাস্তায় কুকুর ছিঁড়ে খাচ্ছিল মৃতদেহ৷ ঘিরে ধরেছিল শকুনের দল৷ বীভৎস দৃশ্য৷ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন দেহ দেখে পরিচয় জানা অসম্ভব৷ দিন পার হচ্ছিল নিজের মতো৷ পচন ধরছিল দেহগুলিতে৷ আর লাসে ঢাকা পড়া মহানগর ঢাকা তখন ভারতীয় সেনার দখলে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা৷ সেই ছবি দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল বিশ্ব৷

ডিসেম্বর মাস পাকিস্তানের কাছে লজ্জার৷ এই মাসেই তারা সামরিক ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পরাজয়ের ইতিহাস তৈরি করেছে৷ ডিসেম্বর মাস ভারতের কাছে গর্বের৷ এই মাসেই দেশের সামরিক ইতিহাসে বৃহত্তম জয়ের নজির তৈরি হয়েছে৷ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কাছে স্বাধীনতার শুভ মুহূর্তের মাস৷ এই মাসেই দেশটি পাকিস্তানের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক সত্ত্বা তৈরি করেছে৷

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ করার দু দিন আগের কথা৷ ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে বুদ্ধিজীবী হত্যার রক্তাক্ত পরিকল্পনা চালানো হয়৷ খুন করা হয়েছিল দুশোর বেশি বুদ্ধিজীবীকে৷অনেকটা হিটলারের কুখ্যাত গেস্টাপো বাহিনীর অনুকরণ করেছিল পাক সেনা৷ বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে৷ গুলি করার আগেই বেয়নেট দিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল তাঁদের দেহ৷ তারপর চালানো হয়েছিল গুলি৷ রাতভর চলেছিল খুনের পর্ব৷ মৃতদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি৷ তবে ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রযুক্তিবিদ ও আরও ২ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷

আসলে এই হত্যা পর্বের শুরু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে৷ সেই রাতেই শুরু হয়েছিল অপারেশন সার্চলাইট৷ স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরির গণ সংগ্রামের বিরুদ্ধে এই দিনই সরাসরি সেনা অভিযান শুরু করে পাকিস্তান৷ পাকিস্তান বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে ২৫ মার্চ রাতেই খুন করা হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল৷ ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘কালরাত্রি’ নামেই কুখ্যাত৷ এর পর থেকে শুরু হয় মুক্তির চূড়ান্ত লড়াই৷ ১৮ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স(বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান)থেকে স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ গণসংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান৷ শুরু হল বাংলার মাঠে ঘাটে, গোয়ালের আড়ালে, ধান ক্ষেত-সবজি ক্ষেতের পিছনে ব্যারিকেড করে এক লড়াই৷ সীমান্তের পার থেকে সেই লড়াইয়ে প্রত্যক্ষ সাহায্য করেছিল ভারত৷ ফল পাকিস্তানের চূড়ান্ত পরাজয়৷ বাংলাদেশের জন্ম৷ -কলকাতা২৪

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর