১১ ডিসেম্বর মুক্ত যশোরে প্রথম বক্তব্য রাখেন তাজউদ্দিন

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১১ ডিসেম্বর ছিল এক অবিস্মরণীয় দিন। মুক্ত যশোরে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এ দিন প্রথম বক্তব্য রাখেন। এর আগে ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হয়।

প্রথম জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাজউদ্দন আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তে কাজ হল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। তিনি সর্বস্থরের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক রুকুন উদ দ্দৌলার লেখা ”মুক্তিযুদ্ধে যশোর”বইয়ের সুত্রে জানাযায় সেদিন জনসভায় অস্থায়ী রাষ্টপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য ফণিভূষণ মজুমদার, মরহুম রওশন আলী, মরহুম মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এম আর আকতার মুকুল, জহির রায়হান প্রমুখ।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী যশোরের তৎকালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম এবং কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষাল কে নির্দেশ দেন যে, আইন শৃঙ্খলায় যেন অবনতি না ঘটে। একই সাথে উপস্থিত জনতাকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।

তাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, স্বাধীন এই দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। এই জনসভা যখন হয় তখন যশোরের আশপাশে যুদ্ধ চলছিল। জনসভা শেষে তিনি সড়ক পথে কোলকাতা চলে যান।

মুক্ত স্বদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এস এইচ সানবার্গ, বালটিমোর সান পত্রিকার প্রতিনিধি, ওয়াশিংটন পোস্ট’র প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক।

এর আগে যশোর শহর থেকে হানাদার বাহিনী ৬ই ডিসেম্বর দুপুর থেকেই চলে যেতে থাকে। তারা যখন বুঝতে পেরেছিল পরাজয় সুনিশ্চিত তখনই তারা গ্রহণ করে পোড়ামাটি নীতি। চালাতে থাকে হত্যা, ধবংস ও নাশকতামূলক কাজ। ৭ ডিসেম্বর ভোর রাতে ৮ নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর মিত্র বাহিনীর নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিং যশোরে প্রবেশ করেন।

এরপর ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ জনশূন্য যশোর শহরে পেট্রেপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেন।

বর্তমান যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার রাজেক আহমেদ বলেন, ১১ ডিসেম্বরের সমাবেশ জাতীয় জীবনের একটি স্মরনীয় দিন। ঐ সমাবেশ আয়োজনের দায়ীত্ব পালন করেছিলাম আমি।
যুদ্ধকালিন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান মুক্তিযোদ্ধা রবিউলর আলম বলেন, ২সহস্রাধিক লোকের ঐ সমাবেশে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। দিনটি জাতীয় জীবনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত বাংলাদেশের মাটিতে এই ১১ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় যশোর টাউন হল ময়দানে। শুধু যশোর নয় দেশবাশির জন্যে দিন টি গৌরবের।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর