১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা শহরে পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজরের মতো। সারাদেশের বেশিরভাগ জেলায় এরই মধ্যে শত্রুসেনারা বিতারিত হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বিমান আক্রমনের কারণেদেশের বিভিন্নস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করলেও তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বা ঢাকায় নিয়ে আসা দূরহ হয়ে পড়ে।

উত্তরে ময়মনসিংহ থেকে পাকিস্তানের ৯৩ এ্যাড-হক বিগ্রেড ঢাকা আসার সময়ে প্রথমে কাদের সিদ্দিকী পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে ভারতীয় প্যারাসুট ব্যাটেলিয়ন আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ১১ ডিসেম্বর বিকালবেলা ভারতের প্যারাসুট বাহিনীর মাত্র ৭০০জন সৈন্য কাদের সিদ্দিকীর বাহিনী অধ্যুষিত মধুপুর এলাকায় অবতরণ করে এবং পাকিস্তানী ব্রিগ্রেডের পশ্চাৎবর্তী ইউনিটতে আক্রমণ করে।

পশ্চাদপসরণে ব্যস্ত পাকিস্তানী বাহিনীর লক্ষ্যস্থল ছিল দক্ষিণের দিকে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চল। উপকূল থেকে জাহাজযোগে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভিন্ন দেশীয় পতাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করে পাকিস্তানী বাহিনী।

এদিকে সেক্টর কমান্ডার মেজর হায়দারের নির্দেশে পূর্বাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা অাক্রমণের চুড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে। ঢাকার পূর্বাঞ্চলের ইছাপুরা, নগরপাড়া, শেখের টেক, নন্দীপাড়া, মাদারটেক অঞ্চলেই ক্যাম্প করে মুক্তিযোদ্ধারা। এসব ক্যাম্পের মধ্যে গাজী গোলাম দস্তগীরের গ্রুপ, মায়া গ্রুপ, নজির গ্রুপ, লেয়াকত গ্রুপ, বাকি গ্রুপ অবস্থান নেয়। সবারই টার্গেট ছিল ঢাকা।

ঢাকার পূর্বাঞ্চলের ত্রিমোহনীতে পাকিস্তানি আর্মি অবস্থান নিয়েছিল। ত্রিমোহনী ছিল তিনটি খালের মোহনা। ওই জায়গা দিয়ে আশপাশের সব জায়গায় যাওয়া যেত। খবর পেয়ে ১১ ডিসেম্বর সকালবেলা মুক্তিযোদ্ধারা ত্রিমোহিনী আক্রমণ করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই এলাকায় যুদ্ধ চলে। ওই দিন সেখানে ১৫ জনেরও বেশি পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়্। সন্ধ্যার দিকে ত্রিমোহনীতে অবস্থানরত এক কোম্পানি পাকিস্তানি সৈন্যদল পিছু হটে। মুক্তিযোদ্ধারা জায়গাটির দখল নিয়ে নেয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর