তবুও স্বপদেই থাকছেন পার্ক

সংবিধান ও আইনের গুরুতর লংঘনের অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইকে অভিশংসন করা হয়েছে। তবে এখনই বিদায় নিচ্ছেন না তিনি। চূড়ান্ত বিচারে পার্ককে যদিও সরে যেতে হয়, তবে এতে প্রায় ছয় মাস সময় লেগে যেতে পারে। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তিনি আবার ক্ষমতায় পুনর্বহাল হতেও পারেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপির।

সংসদে অভিশংসন প্রস্তাব পাসের পর দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুসারে পার্কের নির্বাহী ক্ষমতা এখন অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওয়াং কিও-অন পার্কের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি। তিনিই এখন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

সংসদ পার্ককে অভিশংসন করায় এখন বিষয়টি গড়াবে দেশটির সাংবিধানিক আদালতে। আদালতকে ছয় মাসের মধ্যে অভিযোগের সুরাহা করতে হবে এবং বলতে হবে অভিশংসন বৈধ কি না। এ সময় পার্কের প্রেসিডেন্ট পদবি বহাল থাকবে এবং তিনি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ব্ল– হাউসে থাকার সুযোগ পাবেন।

আদালত যদি তার অভিশংসন অবৈধ ঘোষণা করে তবে তিনি আবার নির্বাহী ক্ষমতাসহ স্বপদে বহাল হবেন। সেক্ষেত্রে তিনি পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করার সুযোগ পাবেন এবং ২০১৮ সালের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। আর আদালত যদি তার বিপক্ষে রায় দেয় তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এবং স্থায়ীভাবে অপসারিত হবেন। তবে যতদিন পর্যন্ত আদালত থেকে চূড়ান্ত রায় না আসে ততদিন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা থাকবে। কারণ সাংবিধানিক আদালতের নয়জন বিচারকের ছয়জনকেই তিনি নিয়োগ দিয়েছেন এবং তারা দলীয় সমর্থক বলে অভিযোগ রয়েছে। বাকি তিনজনও তার পূর্বসূরী নিয়োগ দিয়েছেন এবং তারাও পার্কের দলের প্রতি অনুগত বলে মনে করা হয়। পার্কের অভিশংসন বহাল থাকবে যদি ছয়জন বিচারক তার বিপক্ষে রায় দেন অর্থাৎ সংসদের প্রস্তাব সমর্থন করেন।

তবে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে অভূতপূর্ব আন্দোলনে যেভাবে পার্ক অভিশংসিত হয়েছেন এবং তার জনপ্রিয়তা যেভাবে কমেছে তাতে আদালত থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসার জন্য বিচারকদের ওপর চাপ বাড়বে। বিচারকদের মাথায় রাখতে হবে পার্কের দলের বহু সংসদ সদস্যও সংসদে তার অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী ওয়াং জনগণ ও বিরোধীদলের কাছে তেমন গ্রহণযোগ্য নন। সংসদে বিরোধী দলের অধিপত্য থাকায় তিনি রুটিন কাজের বাইরে কোনো কাজ করতে বাধার সম্মুখীন হবেন।

পার্ক আশার আলো দেখতে পারেন যে এর আগে ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্টে রোহ মু-হিউনকে অভিশংসন করেছিল সংসদ। কিন্তু আদালত তাকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সেবার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ছিল লঘু অভিযোগ এবং তার জনপ্রিয়তাও ছিল বেশ। কিন্তু পার্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর এবং তিনি কার্যত তা স্বীকার করেও নিয়েছেন।

সাংবিধানিক আদালত যদি পার্কের অভিশংসন বহাল রাখে তবে রায় ঘোষণার পর ৬০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দিতে হবে। এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সরকারি বা বিরোধী কোনো দলই প্রস্তুত নয়। জনমত জরিপ বলছে, প্রধান বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মুন জে-ইন জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পার্কের কাছে হেরে যান তিনি। তবে পার্কবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে জনপ্রিয়তার পারদ ঊর্ধে তুলেছেন সিয়ংগামের মেয়র লি জে-মাইউং। এছাড়া জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব বান কি মুনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছর শেষে তার মেয়াদ শেষ হলে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর