জিয়ার ঘড়িতে তখন সাড়ে সাতটা

একদিন প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে হেলিকপ্টারে উঠলাম। তখন সময় সকাল সাড়ে ন’টা। প্রেসিডেন্ট সাহেবের হাতের ঘড়িতে দেখি ঘড়ির কাটা সাড়ে সাতটা। তখন, আমি বললাম স্যার আপনার ঘড়িটা বোধহয় ঠিক না। তিনি হেসে বললেন যে, আমার একটা ভালো ঘড়ি ছিল। আর্মিতে থাকার সময় কুমিল্লার এক মিটিং এ হারিয়ে ফেলেছি। তারপর ঘড়িটি খুলে তিনি এডিসি সাহেবকে দিলেন ঠিক করে নিয়ে আসার জন্য। পরে এডিসি সাহেব আমাকে বললেন, স্যার এই সাড়ে চারশ’ টাকার ঘড়ি আর কতদিন যাবে বলেন তো? ঘড়ি মেরামতের দোকানিরা বললেন, এটার ভেতরে সবকিছু পুরনো হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এর পার্সগুলো নতুন লাগিয়ে দেই। আমি বললাম যে, এটা যদি প্রেসিডেন্ট সাহেব জানেন তাহলে একেবারে ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে দিবেন। যেমনটি আছে ঠিক তেমনটিই ঠিক করে নিয়ে আসেন। অবশেষে একজন প্রেসিডেন্ট হয়েও সাড়ে চারশ’ টাকার ঘড়ি পড়ে মারা গেলেন।
জাতীয় পার্টি দলীয় সংসদ সদস্য এ.কে.এম মাঈদুল ইসলাম মুকুল তার লেখা ‘আত্মসত্তার রাজনীতি এবং আমার ভাবনা’ শীর্ষক গ্রন্থে এসব কথা লিখেছেন। তিনি জিয়াউর রহমানের কেবিনেটের সদস্য ছিলেন।
এ.কে.এম মাঈদুল ইসলাম মুকুল আরও লিখেছেন, অথচ বঙ্গভবনে সেসময় ১৪-১৫টি দামি ঘড়ি ছিল যেগুলোর এক একটির মূল্য ছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। কেএম কায়সার সাহেব তখন বাংলাদেশের জাতিসংঘ প্রতিনিধি। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াকে একটি দামি ঘড়ি উপহ্রা দিয়েছিলেন। আরেক বার ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছে মরহুম আকবরকে তেলের জন্য পাঠিয়েছিলেন। দেখলাম যে সেখান থেকে একটি ঘড়ি দিয়ে দিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সোহার্তোকে উপহার দেয়ার জন্য। এ ঘড়িগুলো বিদেশিরা উপঢৌকন হিসেবে দিতেন। কিন্তু তিনি কোনদিনই নিজের জন্য এগুলো ব্যবহার করেন নাই। বঙ্গভবনে সাজিয়ে রাখতেন। এগুলো আমাদের চোখের সামনে দেখা আদর্শ।
নোট: এ.কে.এম মাঈদুল ইসলাম মুকুল এমপি’র লেখা বইটির বিভিন্ন অংশ মানবজমিন অনলাইনে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর