ওসমান পরিবার আমার শত্রু নয়

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ২২ ডিসেম্বর। এতে ফের মেয়র প্রার্থী হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় নাসিক নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইভী নৌকা প্রতীকে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এ মুহূর্তে দিনরাত্রি নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র। দম ফেলবার ফুরসত নেই তার। এতো ব্যস্ততার মাঝেই পূর্বপশ্চিমকে আলাদাভাবে সময় দিয়েছেন আইভী। সাক্ষাৎকারে নির্বাচন, নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি, নগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা, ওসমান
পরিবারসহ নানা বিষয়ই কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন
সিয়াম সারোয়ার জামিল।

এবারের নির্বাচন কেমন হবে?
ভালো নির্বাচনেরই আশা করছি আমরা সবাই। নির্বাচন সুষ্ঠ, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে নগরীর সব মানুষের মতো অামরাও চাই, জনগণের রায়েই নির্বাচিত হবেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র।

নির্বাচনে এখন পর্যন্ত শামীম ওসমানের ভূমিকা কী?

নির্বাচনে শামীম ওসমানের ভূমিকা এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট। তবে এই নির্বাচনে ওসমান পরিবারের সবাই আমার পক্ষে কাজ করবে। হয়তো কেউ গোপনে, কেউ প্রকাশ্যে থাকবে। আমি মনে করি, ওসমান পরিবার আমার শত্রু নয়।

পূর্বপশ্চিম: শামীম ওসমান প্রকাশ্যেই বিভিন্ন সময়ে আপনার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে। শোনা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সবাই আপনার সঙ্গে নেই। আসলে নারায়াণগঞ্জের আওয়ামী লীগ কতটা ঐক্যবদ্ধ?

আইভী: সবাই আমাদের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধই কাজ করছে।, মানুষের জন্য আমি পথে পথে যাচ্ছি। সবার দোয়া নিচ্ছি। শামীমকে নিয়ে আমি চিন্তিত না। আমাকে নিয়ে তার ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, দলের স্বার্থে তিনি আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করবেন।

কেন্দ্রীয় নেতারা কেমন সমর্থন দিচ্ছেন?

কৌশল নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আমাকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। আমি সব মিলিয়ে খুশি। অনেকেই প্রচার করছে, আইভী আওয়ামী লীগের কে! কিন্তু ভেবে দেখুন তো, গত পনেরো বছর ধরে এই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড আমিই চালিয়েছে। অন্য একটা গোষ্ঠী শুধু সন্ত্রাস চালিয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের সাথে আপনার সম্পর্ক বেশ ভালই বলে শোনা যায়। এটা অন্যান্য এলাকায় বিরল বলা যেতে পারে।

তিনি দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করছেন। আইনজীবী হিসেবেও তার পরিচিতি আছে। আওয়ামী লীগের অনেক কর্মীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলা পরিচালনায় তিনি সহায়তা করেছেন। এসব কারণে সুসম্পর্ক আছে। এখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন। তাতে কী? আমি মনে করি, সব জায়গায় সব প্রতিদ্বন্দবীর মাঝেই এমন সুসম্পর্ক থাকা উচিত।

শোনা যাচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ভূমিকা ঠিক কতটা?

২০১১ সালের নির্বাচনেও সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল, এবারও শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমি চাই সব ধর্মের বর্ণের মানুষ যাতে সুখে শান্তিতে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতে পারে।’

একদিকে শামীম ওসমান আরেকদিকে আপনি। এরকম পরিস্থিতিতে জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? জনগন আপনাকে কেন গ্রহণ করবে?

পারিবারিক ঐতিহ্যের কথাও যদি ওঠে, আমার বাবা দল করে অর্থ-সম্পদ খুঁইয়েছেন। আমি এবং আমার পরিবার মানুষের জন্য দলের জন্য নিজেদের সর্বস্ব ব্যয় করেছি। শামীম ওসমান কী ভাবছে আমি জানিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশর পরও তিনি এখনও আমার পক্ষে অ্যাক্টিভ হননি। তবে সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। এই এলাকার মানুষ আমার পক্ষে আছে। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকলে আমি জয়ী হব।’

অভিযোগ আছে গত পাঁচ বছরে আপনি তেমন কোন উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। এবারে নির্বাচনে নতুন কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?

কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডেই রাস্তাঘাট বলতে কিছুই ছিল না। মানুষ হাটতে গিয়েও হোচট খেত বারবার। একরকম ভগ্নদশার মধ্যেই আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম। গত পাঁচ বছরে এই অনুন্নত জায়গাগুলোতে রাস্তাঘাট হয়েছে, জলাবদ্ধতাও কমেছে। এটাকে উন্নয়ন বলবেন না? নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর এলাকার দিকে তাকালেই আমার কাজের প্রমাণ পাবেন।

আবার নির্বাচিত হলে নারায়ণগঞ্জবাসী কী দেবেন?

আবার নির্বাচিত হলে নারায়ণগঞ্জকে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে আমি সেটাই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। নারায়ণগঞ্জকে শান্তি ও সমৃদ্ধির নগর হিসেবে গড়াই আমার লক্ষ্য।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর