জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না আ. লীগ

উৎপল দাস

চলতি মাসের ২৮ তারিখ প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরইমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৬১ জেলায় দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী ও দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা নিজেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন। এরপরও চেয়ারম্যান পদে অন্তত ৩৬ জেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কয়েকটি জেলায় আবার বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা একাধিক। তবে এবারের নির্বাচনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে না আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) ফারুক খান পূর্বপশ্চিমকে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে দল থেকে জেলা পরিষদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এরপরও অর্ধেকেরও বেশি জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই নির্বাচনে যেহেতু শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দল অংশ নিচ্ছে না, তাই লড়াইটা এবার নিজেদের মধ্যে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার করার কোনো পরিকল্পনা দলের নেই। সর্বোচ্চ তাদের মৌখিকভাবে সর্তক করা হবে। এর বেশি কিছু এবার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে কোনো কোনো জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে যেন দলীয় কোন্দল প্রকট আকার ধারণ না করে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে খুলনা বিভাগে। সেখানকার ১০ জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ১৩। আবার ১৩ জেলায় আওয়ামী লীগের একজন ছাড়া আর কোনো প্রার্থী নেই। বলা যায়, ওই জেলাগুলোতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

এদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়পত্র জমা দিয়েছেন।

ঢাকা : বিভাগের ১৩ জেলার মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এগুলো হলো—ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ী। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ—এই তিন জেলায় কেবল আওয়ামী লীগেরই প্রার্থী আছেন একজন করে। অর্থাৎ, গাজীপুরে মো. আখতারুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেন ও মুন্সীগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের একজনসহ মোট প্রার্থী দুজন।

চট্টগ্রাম : বিভাগের চট্টগ্রাম জেলায় মোট প্রার্থী দুজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মো. আবদুস সালাম। কুমিল্লার দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) আবু তাহের দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়বেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন।

রাজশাহী : বিভাগের আট জেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট ১৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৪, বিএনপির দুই, জাতীয় পার্টির দুই এবং স্বতন্ত্র একজন। অন্যদিকে নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও জয়পুরহাটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তিনজনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন—এমন জেলার মধ্যে আছে রাজশাহী (দুজন), পাবনা (তিন), নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ (দুই) ও বগুড়া (এক)। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির দুজন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন আবদুল ওয়াহেদ ও খুরশিদ আলম বাচ্চু।

খুলনা : বিভাগের ১০ জেলার ছয়টিতে আওয়ামী লীগের ১৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাগেরহাট ও যশোরে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ছাড়া আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। খুলনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ হারুনুর রশিদ ছাড়াও বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন দুজন। সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম। এ ছাড়া নড়াইল, মেহেরপুর, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

রংপুর : আট জেলার মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগের চারজন প্রার্থীসহ মোট আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অর্থাৎ, সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন তিনজন। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। গাইবান্ধায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন পাঁচজন। এঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। লালমনিরহাটে চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী রয়েছেন। সবাই আওয়ামী লীগের। দিনাজপুরে দুজনই আওয়ামী লীগের।

বরিশাল : বিভাগের ছয় জেলায় চেয়ারম্যান পদে ১২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে ভোলা ও ঝালকাঠিতে একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বরিশালে চেয়ারম্যান পদে চারজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এঁদের সবাই আওয়ামী লীগ নেতা। অর্থাৎ, সেখানে তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। পটুয়াখালীতেও একই অবস্থা। সেখানে দুই বিদ্রোহী প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগের তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পিরোজপুরে অবশ্য আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে একজনই আছেন। তবে সেখানে সব মিলিয়ে প্রার্থী আছেন চারজন। বরগুনায় লড়াই হবে দুইজনের মধ্যে। এঁদের একজন আওয়ামী লীগের। আরেকজন জাতীয় পার্টির।

সিলেট : বিভাগের চার জেলার মধ্যে তিনটিতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের পাঁচজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে জাতীয় পার্টি কিংবা জামায়াতের কেউ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। চার জেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সিলেটে একজন, মৌলভীবাজারে দুজন ও সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও সেখানে নির্বাচন করছেন বিএনপি নেতা এনামুল হক।

ময়মনসিংহ : বিভাগের চার জেলার মধ্যে দুই জেলায় আওয়ামী লীগের মোট ছয়জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে জামালপুরে পাঁচজন ও শেরপুরে একজন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর