সাত খুন: নূর হোসেন, তারেকদের ফাঁসি চাইলো রাষ্ট্রপক্ষ

নূর হোসেনের পরিকল্পনায় নারায়ণগঞ্জে সাত জনকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে, এমন যুক্তি তুলে ধরে তার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। একই শাস্তি দাবি করা হয়েছে র‌্যাবের সাবেক কমান্ডার তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ অন্যান্যদেরও। বুধবার এই মামলার যু্ক্তিতর্কের শেষ দিনে এই দাবি তুলে ধরেন তারা।

আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে ১৬ জানুয়ারি। এই মামলায় মোট আসামি ৩৫ জন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নূর হোসেন হত্যার পরিকল্পনা ও লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত। তার পরিকল্পনায়ই হয়েছে সাত খুনের ঘটনা। আর এটা আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। আমি মনে করি অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। তাই নূর হোসেনসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘কারা এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী, কারা ষড়যন্ত্রকারী, কারা হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন, তারা সহযোগিতা করেছেন, কারা লাশগুলো গুম করেছেন তার সবই আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে। এই মামলা নিয়ে শুরু থেকেই কোনো সন্দেহ ছিল না।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ফতুল্লায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সে সময়ের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।

এই অপহরণের ঘটনার পর থেকেই নজরুলের স্বজনরা নুর হোসেনকে ঘটনার মূল হোতা বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, তার কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে এই খুন করেছে র‌্যাব।

এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় প্রথমে একটি মামলা করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। পরে আরও একটি মামলা করেন আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল।

হত্যার প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

এর আগেই নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যান। পরে ২০১৪ সালের ১৪ জুন তিনি ধরাও পড়েন। আর অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হওয়ার পর গত অক্টোবরে ভারত সরকার তাকে ফেরত পাঠায়।

আসামিপক্ষের আইনজীবীর উল্টো দাবি

রাষ্ট্রপক্ষের দাবি নূর হোসেনসহ সব আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন তারা। তবে আসামি চাকরিচ্যুত র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ হোসেনের আইনজীবী এম এ রশিদের দাবি উল্টো। তিনি বলেছেন, ‘এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে ত্রুটি আছে, যা আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। সাক্ষীদের বক্তব্যেও অনেক ত্রুটি ধরা পড়েছে। সার্বিক বিবেচনায় বিজ্ঞ আদালত যে রায় দিবেন আসামিপক্ষ সুফল পেতে পারেন।’

র‌্যাব-১৪ এর সে সময়ের কমান্ডার তারেক সাঈদ মোহাম্মদের আইনজীবী সুলতান উজ জামানও দাবি করেন তার মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার আসামি নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

সাত খুনের ঘটনায় মামলা করেছেন দুইজন। একটি মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আদালতে ১০৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। অপহরণ, হত্যা, গুম প্রত্যেকটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের ন্যায় সারাদেশের মানুষ এই মামলার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আমরা আসামিদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’

বাদী বিউটিও বলেছেন, তিনি আসামিদের ফাঁসি চান। বলেন, ‘খুন করে কেউ যে পার পায় না এটাই আবার প্রমাণিত হবে এই বিচারের মাধ্যমে। আমরা ন্যায় বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর