রোহিঙ্গাদের ‘যতদূর সম্ভব’ আশ্রয় দিন: খালেদা জিয়া

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদেরকে ‘যতদূর সম্ভব’ আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তিনি এও বলেছেন, কেবল শরণার্থীদের আশ্রয় ও সাহায্য দেয়ার মধ্যেই কোনো সমাধান নিহিত নেই।

সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি নেত্রী এ কথা বলেন। রোহিঙ্গারা যাতে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ দিতে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গত অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলায় নয় জনের প্রাণহানির পর ওই রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। অভিযানে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর জ¦ালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। তবে সীমান্ত থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর এই অভিযানকে ‘সুপরিকল্পিত ও বর্বরোচিত গণহত্যা আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলন, ‘এর ঘটনায় আমি গভীরভাবে বেদনাহত ও উৎকণ্ঠিত।’

অবিলম্বে ‘গণহত্যা’ বন্ধের জন্য আমি মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘যেন আর একটি মানুষও হত্যাকা-, উচ্ছেদ ও নির্যাতনের শিকার না হয়।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সংখ্যালঘু একটি জাতিগোষ্ঠীর ওপর এমন পৈশাচিক নির্মূলভিযানে প্রতিটি বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত। তাদের সকলের হৃদয় বেদনামথিত। এমন ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুর কার্যকলাপের নিন্দা জানাবার কোনো ভাষা নেই।’

বিএনপি নেত্রী বলেন, বর্তমানে ‘রাখাইন’ নামে পরিবর্তীত এককালের স্বাধীন ও গৌরবাজ্জ্বল ঐতিহ্যম-িত আরাকান অঞ্চলে পরিচালিত এই গণহত্যা অভিযানে সরকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় ভিন্ন সম্প্রদায়ের দাঙ্গাবাজরাও অংশ নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিধর্ম-বিদ্বেষী আক্রোশ চরিতার্থ করতে তাদেরকে গুলি ও জবাই করে এবং পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করে তাদেরকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গা নারীদের। দুগ্ধপোষ্য শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না।’

সুচির সমালোচনা
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির নীরবতায় হতাশাও প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘গভীর পরিতাপ ও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কোনো সামরিক জান্তা নয়, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান শুচির নেতৃত্বে পরিচালিত মিয়ানমারের প্রশাসনই এ অমানবিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হোতা। যিনি নিজে দীর্ঘকাল নির্যাতিত হয়েছেন তিনি কী করে এমন পৈশাচিক তা-বকে অনুমোদন করছেন, ভেবে আমরা স্তম্ভিত হচ্ছি।’

সারা বিশ^কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান
মিয়ানমারের এই ‘গণহত্যার’ বিরুদ্ধে দেশবাসীসহ সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সংঘ ওআইসিকে সোচ্চার হবার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। বলেন, ‘কেবল কথামালা নয়, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বলিষ্ঠ এমন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসুন, যাতে মিয়ানমার সরকার গণহত্যার কালো হাত গুটিয়ে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অপরাধীদের শাস্তিবিধানে বাধ্য হয়।’

আশ্রয় দেওয়াই সমাধান নয়
খালেদা জিয়া তার বিবৃতিতে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ছুটে আসার বিষয়টি নিয়েও উল্লেখ করেন। বলেন, ‘
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা সব সময়েই নিকট প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশকে স্পর্শ করেছে। ঘনবসতিপূর্ণ এবং লোকসংখ্যানুপাতে বাসযোগ্য জমির ক্রমসংকোচনের এ দেশে এখনো অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী আগে থেকেই আশ্রয় নিয়ে আছে। এতে আমাদেরকে সামাজিক অনেক সমস্যাও ভোগ করতে হচ্ছে।’
কিছুটা সমস্যা হলেও রোহিঙ্গাদের যতদূর সম্ভব বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণহত্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী জাতি হিসেবে জীবন রক্ষায় আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কারণে যতদূর সম্ভব আশ্রয় দেয়ার জন্য আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ একই আহ্বান তিনি প্রতিবেশি অন্যান্য দেশ ও মুসলিম বিশে^র প্রতিও রাখেন।

আশ্রয় দেওয়াই সমাধান নয়
শরণার্থীদের আশ্রয় ও সাহায্য দেয়ার মধ্যেই কোনো সমাধান নিহিত নেই বলেও উল্লেখ করা হয় খালেদা জিয়ার বিবৃতিতে। বলন, রোহিঙ্গারা যাতে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে জীবন-সম্পদ-সম্ভ্রমের অখ- নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে বসবাস করতে পারে সেই নিশ্চয়তা বিধান কল্পে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর