ভোট পুনর্গণনা: উৎসাহী হয়ে উঠেছেন হিলারি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিন অঙ্গরাজ্যের ভোট পুনর্গণনা নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ট্রাম্প ও হিলারি শিবির। তিন রাজ্যে ভোট পুনর্গণনার আবেদন হওয়ার পর পরাজিত ঘোষিত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটিন জানিয়েছেন, তিনিও ভোট পুনর্গণনার পক্ষে। যদিও ট্রাম্প একে কেলেঙ্কারি বলছেন। খবর সিএনএনের।

ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে নেয়া ভোটে হ্যাকিং এর অভিযোগ এনে উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ায় ভোট পুনর্গণনার আবেদন করেছেন গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন। তিনি এরই মধ্যে উইসকিনসনে ভোট পুনর্গণনার জন্য প্রয়োজনীয় কয়েক মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছেন।

জিল স্টেইন বলেছেন, তিনি ভোটে জিতবেন না, কিন্তু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চান তিনি।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এই পুনর্গণনার সমালোচনা করে বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। জনগণ আমার পক্ষে রায় দিয়েছে। ভোটের ফলাফলের পর হিলারিও এটা মেনে নিয়েছেন। তিনি আমাকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। আমাদেরকে ভোটের ফলাফল মেনে নিয়ে সামনের দিকে তাকাতে হবে।’

কেলেঙ্কারি

গ্রিন পার্টির ভোট পুনর্গণনার চেষ্টাকে কেলেঙ্কারি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গ্রিন পার্টি নেতা যত টাকা তুলছেন সেটা পুরোপুরি এই কাজে লাগবে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘জিল স্টেইন এক শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছেন। অনেক রাজ্যে তিনি কোনো ভোটও পাননি। এখন তারা কেলেঙ্কারি ঘটাতে চাইছে। ভোটের এই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ না করে একে সম্মান জানানো উচিত।’

পুনর্গণনার জন্য তোলা সব টাকা খরচ করবেন না- এমন অভিযোগের বিষয়ে জিল স্টেইন বলেন, ‘ট্রাম্প অতীতে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। তা ছাড়া তিনি নিজেই বলেছেন, তিনি ভোটে না জিতলে কারচুপির অভিযোগ তুলবেন।’

অসামঞ্জস্য

উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ভোটে গড়মিল বা অসামঞ্জত্যর প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর গ্রিন পার্টির কর্মকর্তারা স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোট পুনর্গণনার আবেদন করেন।

গ্রিন পার্টির উইসকনসিনের সহ-সভাপতি জর্জ মার্টিন বলেছেন, তারা কাগজের ভোটের পুনর্গণনা চাচ্ছেন। এই আবেদন একটি সাধারণ ভোট গণনার চেয়ে একধাপ এগিয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহেই এই ভোট পুনর্গণনা শুরু হতে পারে। তিনি আশা করছেন, মার্কিন ভোট পদ্ধতিতে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।

মার্টিন বলেন, ‘এটি একটি প্রক্রিয়া। আমাদের ইলেকটোরাল গণতন্ত্র পরীক্ষার এটি প্রথম ধাপ।’

জিল স্টেইন শনিবার এক টুইট বার্তায় জানান, তিনি অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলোতেও ভোট পুনর্গণনা চান।

তিনি বলেন, ‘যেসব অঙ্গরাজ্যে আবেদনের সময়সীমা এখনো শেষ হয়ে যায়নি সেখানে ভোট পুনর্গণনা আবেদন করতে চাই। নির্দিষ্ট সময়ে আগেই আমাদের কর্মীদের সহযোগিতা করুন।’

হিলারি শিবিরের আইনজীবী মার্ক এলিয়াস বলেছেন, প্রচারণা শিবির অভিযোগের বিষয়ে বেশ ভালো করেই তারা তদন্ত করেছে। ভোট পুনর্গণনার বিষয়ে তাদের কাছে শতাধিক অনুরোধ এসেছে।

‘আমরা এখনো হ্যাকিং বা ভোটং প্রযুক্তি পরিবর্তনের চেষ্টার কোনো অকাট্য প্রমাণ উদঘাটন করতে পারিনি। ভোট পুনর্গণনার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। কিন্তু এখন উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনা শুরু হচ্ছে। আমরা এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছি। কারণ আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই, প্রক্রিয়াটি যেন সবদিক দিয়ে সঠিক হয়। জিল স্টেইন যদি তার কথামতো পেনসিলভানিয়া এবং মিশিগানে ভোট পুনর্গণনার পদক্ষেপ নেয়; তাহলে আমরাও এই দুই অঙ্গরাজ্যে একই পদক্ষেপ নেব।’

হিলারি শিবিরের মুখপাত্র জানান, তারা নির্বাচনে কারচুপির কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাননি। এ কারণে তারা নিজে থেকে ভোট পুনর্গণনার দাবি তোলেননি।

হস্তক্ষেপ?

মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণে উদ্বেগ বৃদ্ধি অব্যাহত আছে বলে এলিয়াস জানান, মিশিগান, উইসকনসিন এবং পেনসিলভানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক লাখ সাত হাজার ভোট পেয়েছেন। আর ফ্লোরিডাতে বুশ-গোর ভোটের ব্যবধান ছিল ৫৩৭।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের কারণে এবারের নির্বাচনটি একেবারেই ব্যতিক্রম ছিল। ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি এবং হিলারির ব্যক্তিগত ই-মেইল ফাঁসের পিছনে রাশিয়ান নেতারা নৈপথ্যের ভূমিকা পালন করেছেন বলে মার্কিন সরকার নিশ্চিত করেছে। গতকাল ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সপ্তাহে অনলাইনে ‘মিথ্যা বা প্রোপ্যাগান্ডা’ সংবাদ ছড়ানোর পিছনে রাশিয়া সরকারের ভূমিকা ছিল।

মার্কিন সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে জানান, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে এমন কোনো সাইবার কার্যক্রম নজরে আসেনি মার্কিন প্রশাসনের। সাইবার নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এবারের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর