দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর কার কত সম্পদ

নারায়ণগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে সম্পদ বেশি বিএনপির মো. সাখাওয়াত হোসেন খানের। স্ত্রীসহ তার নামে কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সদ্য পদত্যাগী মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সম্পদ তার অর্ধেক। এ দুই প্রার্থীর নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই।

বিএনপি প্রার্থীর ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তাও নেই। এ ছাড়া সিটি মেয়র হিসেবে পাওয়া সম্মানী ছাড়া আইভীর আর কোনো আয় নেই। এ খাতে তার বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। সাখাওয়াতের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা। পেশায় আইভী চিকিৎসক। সাখাওয়াত আইনজীবী। দুই প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আইভীর সম্পদের প্রায় দ্বিগুণ সাখাওয়াতের। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সাখাওয়াত ও তার স্ত্রীর রয়েছে ৯৭ লাখ ৫ হাজার ১৩৭ টাকা। বার্ষিক আয়সহ এর পরিমাণ কোটির বেশি। আইভীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ৪২ লাখ ২৪ হাজার ২৫০ টাকার। অবশ্য যৌথ মালিকানায় ১১২ শতাংশ অকৃষি জমির আট ভাগের এক ভাগের মালিকও তিনি। এর আগের নির্বাচনেও এই পরিমাণ অকৃষি জমি দেখিয়েছিলেন আইভী। আর পাঁচ বছর আগে পৌর মেয়র হিসেবে আয় ১৬ লাখ ৪৭ হাজার এবং ব্যাংকে জমা ১০ লাখ ও স্বর্ণালঙ্কার বাবদ ৩০ হাজার টাকা হলফনামায় দেখিয়েছিলেন তিনি।

সাখাওয়াত হোসেনের বার্ষিক আয় ৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯ টাকা আর ব্যাংক থেকে সুদ ৩ হাজার ৮০১ টাকা। নগদ, যানবাহন, স্বর্ণালঙ্কার, ইলেকট্রনিক-আসবাব, ব্যবসার মূলধন মিলিয়ে তার অস্থাবর সম্পদ ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫৯ টাকা। তার স্ত্রীর রয়েছে ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৮ টাকা। স্থাবর সম্পদ রয়েছে সাখাওয়াতের ১৪ লাখ ৩২ হাজার ও স্ত্রীর ২ লাখ

৭৬ হাজার টাকার।

সেলিনা হায়াৎ আইভী : হলফনামা অনুযায়ী আইভীর জন্ম ১৯৬৬ সালের ৫ জুন। সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি)। বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত নন তিনি। পেশায় চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে আগেও কোনো মামলা ছিল না। আয়ের উৎস মেয়র হিসেবে সম্মানী ও বেতন-ভাতা বাবদ পাওয়া ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকার তথ্য উল্লেখ করেছেন। আর অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ১৫ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ টাকা। স্বর্ণ ও অন্য অলঙ্কার রয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ২ লাখ, আসবাবপত্র ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৭৯ ও অন্যান্য (পারিবারিক ঋণ প্রদান) ১৭ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে : যৌথ মালিকানায় ১১২ শতাংশ অকৃষি জমি; এর মধ্যে এক অষ্টমাংশ আইভীর। কোনো দায়দেনা নেই তার। এমনকি নিজস্ব বাড়ি ও গাড়িও নেই।

আইভীর ২০১১ সালের হলফনামায় দেখা গেছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস। পেশায় চিকিৎসক। আয়ের উৎস হিসেবে প্রার্থী ও তার নির্ভরশীলদের কোনো আয় দেখাননি তিনি। সম্পূরক হলফনামায় পৌর মেয়র হিসেবে সম্মানী ভাতা ১৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বার্ষিক আয় উল্লেখ করেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১০ লাখ টাকা ছিল; স্বর্ণালঙ্কার ৩০ হাজার টাকার। অকৃষি জমি যৌথভাবে ১১২ শতাংশ, যার আট ভাগের এক ভাগ আইভীর।

সাখাওয়াত হোসেন খান : হলফনামা অনুযায়ী অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত খানের জন্ম ২০ আগস্ট, ১৯৬৯ সালে। সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, এলএলবি। বর্তমানে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত নন তিনি। তবে নারায়ণগঞ্জ থানার একটি মামলা ১৮(১১)০৯ বিচারাধীন এবং ফতুল্লা থানার একটি মামলা ১০(০১)১৫ তদন্তাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অতীতে কোনো ফৌজদারি মামলা ছিল না।

হলফনামায় তিনি জানান, দণ্ডবিধির ১৮৬০ সালের নারায়ণগঞ্জ থানায় ২২ (১১)৯৯ ও ১৯০৮ বিস্ফোরকদ্রব্যের উপাদানাবলির মামলায় ২২ (১১)৯৯ খালাস পেয়েছেন। আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসায় বার্ষিক আয় ৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯ ও তার ওপর নিভর্রশীলদের আয় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাংকের সুদ থেকে বছরে ৩ হাজার ৮০১ টাকা পান তিনি।

অস্থাবর সম্পদের তালিকায় রয়েছে : নিজের নামে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৯০৮ ও স্ত্রীর নামে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ২২৯ টাকা। ব্যাংকে স্ত্রীর নামে ৫ হাজার ২৪৯, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত ৩০ হাজার টাকা। প্রার্থীর নিজের নামে একটি মাইক্রোবাস (টয়োটা নোহা) রয়েছে, যার দাম ১৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৭ টাকা। নিজের নামে স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে আড়াই লাখ টাকার আর স্ত্রীর নামে ৪০ ভরি, যার মূল্য ২ লাখ টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ৫০ হাজার ও আসবাব ৫০ হাজার টাকার এবং ব্যবসায় মূলধন ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৭৪ ও স্ত্রীর নামে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অকৃষি জমি নিজের নামে ১৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা রয়েছে স্থাবর সম্পদ হিসেবে। কোনো দায়দেনা নেই এই প্রার্থীর।

নির্বাচনে নয় মেয়র প্রার্থী : মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী, বিএনপির অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, জাসদের মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, এলডিপির কামাল প্রধান, কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ইজহারুল হক ও স্বতন্ত্র হিসেবে মো. সুলতান মাহমুদ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ভোটার স্বাক্ষর জটিলতায় স্বতন্ত্র সুলতান মাহমুদের প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে। বিডি প্রতিদিন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর