সদ্য প্রয়াত কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট বিপ্লবের কিংবদন্তী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জোটবহির্ভূত দেশগুলোর এক বৈঠকের পর কাস্ত্রো এ কথা বলেছিলেন।
ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি। কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায়, এই মানুষই হিমালয়। তাই আমার হিমালয় দেখা হয়ে গেলো।
ফিদেল কাস্ত্রো একজন কিউবান রাজনৈতিক নেতা ও সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী। কিউবা বিপ্লবের প্রধান নেতা ফিদেল ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯ থেকে ডিসেম্বর ১৯৭৬ পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং এরপর ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এ তার স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিউবা কিউবার মন্ত্রী পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কাস্ত্রোর এ কথা বাংলাদেশের মানুষ আজীবন মনে রাখবে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অসামান্য ভূমিকা ছিলো কিউবার বিপ্লবী এ নেতার। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকাকে
শ্রদ্ধা জানাতে জাতির জনকের কন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাস্ত্রোকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করেছেন। ২০১৩ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হয় কাস্ত্রোকে।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় ও বিভিন্ন দুর্যোগেও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই নেতা। সেই কারণে বাংলাদেশ আজীবন শ্রদ্ধা জানাবে কিউবার সাবেক এ নেতার প্রতি।
ফিদেল কাস্ত্রো কিউবা কমিউনিস্ট দলের প্রধান হিসেবে ১৯৬১ সালে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন। এর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০৮ সালে তিনি তার দায়িত্ব ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে অর্পণ করেছিলেন। রাউল বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টির সহকারী প্রধান এবং মন্ত্রী পরিষদের প্রধান হিসেবে আছেন। এর আগে তিনি ১৯৫৯-২০০৮ পর্যন্ত ফিদেলের মন্ত্রী সভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন।
হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়েআইন বিষয়ে পড়ার সময়, ফিদেল কাস্ত্রো তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এরপর কিউবার রাজনীতিতে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় প্রেসিডেন্ট ফালজেন্সিও বাতিস্তা এবং কিউবার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী সমালোচনা নিবন্ধ লিখে।
তিনি এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। অবশেষে তিনি ১৯৫৩ সালে মনকাডা ব্যারাকে একটি ব্যর্থ আক্রমণ করেন এবং তারপর কারারুদ্ধ হন ও পরে ছাড়া পান। এরপর তিনি বাতিস্তার সরকার উৎখাতের জন্য সংগঠিত হওয়ার জন্য মেক্সিকো যান। ফিরে এসে ১৯৫৬’র ডিসেম্বরে সরকার উৎখাতে নামেন।
পরবর্তীকালে কাস্ত্রো কিউবান বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন যা যুক্তরাষ্ট্রের মদদে চলা বাতিস্তার স্বৈরশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর কিছুদিন পরই কাস্ত্রো কিউবার প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৬৫ সালে তিনি কিউবা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হন এবং কিউবাকে একদলীয় সমজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে রূপ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি রাষ্ট্র ও মন্ত্রী পরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন।