প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আল্লামা শফী

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়াহ বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। স্বীকৃতির বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনাসহ একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখেছেন আহমদ শফী।

তার সেই চিঠি উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাবার অনুমতির অপেক্ষায় আহমদ শফীর প্রতিনিধি দল। আগামী বুধবার(২৩ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

স্বীকৃতির বিষয়ে শফীর প্রস্তাবনা প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার পর কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবে বেফাক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত স্বীকৃতি নিয়ে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারিসহ সরকারের কোনও পদক্ষেপে বেফাক অংশ নেবে না। বেফাকের একাধিক দায়ীত্বশীল ব্যাক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বেফাক সূত্র জানায়, এবছর চট্টগ্রামে ৩ অক্টোবরের একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের অবস্থান ও প্রস্তাবনা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয় বেফাক। এরপর ১৭ অক্টোবর ঢাকায় উলামা মাশায়েখ সম্মেলনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে বেফাক। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান

খান কামালে সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত পাওয়ার বিষয়ে সহায়তা চান বেফাকের নেতারা।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহমদ শফীর চিঠি পৌঁছানোর বিষয়ে শনিবার (১৯ নভেম্বর)রাজধানীর মালিবাগ জামিয়া শারইয়্যায় মাদ্রাসায় মাওলানা আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আযহার আলী আনওয়ার শাহ, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা আনাস এবং আহমদ শফির প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমেদ প্রমুখ।

বেফাক সূত্রে জানা গেছে, বেফাকের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আছেন শাইখুল হাদীস মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা নূরুল আমীন, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ), মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস এবং আহমদ শফির প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমেদ।

সূত্র জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা বেফাক সভাপতি শাহ্ আহমদ শফীর চিঠিতে প্রস্তাবিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষনীতি-২০১২ এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৩ এর খসড়া বাতিল, ২৭ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও কমিটির সকল কার্যক্রম বাতিল,পুরান ও নতুন মক্তব হাফেজিয়া ও কওমি মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা সরকারি নিবন্ধনের আওতামুক্ত রাখার দাবি রয়েছে।

এছাড়া, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এবং শিক্ষা আইন ২০১৬ এর খসড়া বাতিল, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী ভাবধারার গল্প, রচনা ও কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা,শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামি শিক্ষাকে প্রাধান্য, ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষাকে (যা ফরজে আইন) বাধ্যতামূলক করা, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন পর্যালোচনা কার্যক্রমে দক্ষ ও বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ গ্রহণের দাবিও তুলে ধরা হয়েছে শাহ্ আহমদ শফীর চিঠিতে।

এ প্রসঙ্গে আহমদ শফীর প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ বলেন, আহমদ শফির চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন জানানো হয়েছে। রোববার (২০ নভেম্বর) বেফাকের দশ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করার কথা ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে আগামী বুধবার (২৩ নভেম্বর) দেখা করার বিষয়ে জানিয়েছে।

বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আমরা বেফাকের সভাপতি শাহ আহমদ শফীর চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো। কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে বেফাক সভাপতি আহমদ শফীর প্রতিনিধি হিসেবে দশ সদস্যের একটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন।

আগামী বুধবার (২৩ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আহমদ শফীর চিঠির প্রেক্ষিতে প্রধনামন্ত্রীর কী সিদ্ধান্ত জানাবেন তার উপর নির্ভর করে বেফাকের আগামী দিনের পরিকল্পনা ঠিক করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর