বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত চান জয়

নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে হস্তান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। পাঠকদের জন্য তার নিবন্ধটি অনুবাদ করে দেওয়া হলো:

‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়। বিপথগমী সেনারা আমার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিন মামাসহ (যাদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল মাত্র ১০) আমার পরিবারের ১৮ সদস্যকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।

আমার মা, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেবল জার্মানিতে ছুটিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

তার ৪০ বছর পরও আমার পরিবারের খুনিদের একজন রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন। একটি স্বচ্ছ নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় খুন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিচার হয়। যদিও সেনাবাহিনীর কর্নেল হিসেবে কোট মার্শালে তার বিচার করা যেত। যে বিচার ব্যবস্থা আর দ্রুততম সময়ে ও কম স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়।

আমার নানাকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমার বয়স ৪ বছর। কিন্তু তার মৃত্যু আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষতির অনেক ঊর্ধ্বে। পুরো জাতি শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম প্রেসিডেন্ট। তার প্রতি আবেগ থেকে জনগণ তাকে বঙ্গবন্ধু নামে ডাকে। যার অর্থ ‘ফ্রেন্ড অব বেঙ্গল’। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেন তিনি। ওই সময়ই আমার জন্ম হয়েছিল। রক্তাক্ত সংঘর্ষের ওই সময় পাকিস্তানিরা প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশিকে হত্যা করে। যাকে পুরো বিশ্ব গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আমার নানা গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার পর রাজনৈতিক সঙ্কট ও সামরিক শাসনের শুরু হয়। সামরিক জান্তারা খুনিদের রক্ষা করে। ওই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম বেনিফিসিয়ারি ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা। তিনিও খুনিদের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করেন। তার শাসনামলে খুনিরা শুধু দায়মুক্তিই পায়নি, সরকারি চাকরি ও কূটনীতিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদও দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। খুনিদের একজন প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালে আমার মা ক্ষমতায় আসার পর খুনিদের বিচার শুরু হয়। দ্রুত খুনিদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য জনগণের প্রত্যাশার চাপ ছিল। কিন্তু আমার মা চেয়েছেন বিচার যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। যাতে আইনের শাসন ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়। সংবিধান অক্ষুণ্ন রেখে বেসামরিক আদালতে বিচার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

১৯৯৮ সালে ১৫ জন সামরিক কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়। দীর্ঘ আপিল শেষে অবশেষে ২০০৯ সালে জাতির প্রতি সুবিচার করে সুপ্রিম কোর্ট।তবে ঘটনা এখানেই শেষ নয়।

১৯৯৬ সালে বিচার শুরুর আগে আরও কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারীর সঙ্গে রাশেদ চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। সান ফ্রান্সিসকোতে অ্যাসাইলামের আবেদন জানান তিনি। যদিও তার বর্তমান অবস্থা পরিষ্কার নয়। এরপর থেকেই তিনি লস অ্যাঞ্জেলস ও শিকাগোতে বসবাস করে আসছেন। বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা সত্বেও তিনি এখানে পালিয়ে আছেন। আমেরিকা সরকারের উচিৎ তাকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা।

রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর করা হলে তিনি মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির মুখোমুখি হবেন। যে শাস্তি আমেরিকাতেও বলবত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও দেশদ্রোহিতা, সন্ত্রাসবাদ ও খুনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আমার নানার খুনিদের মধ্যে আমেরিকায় আশ্রয় নেওয়া একমাত্র ব্যক্তি নন রাশেদ চৌধুরী। এর আগে ২০০৭ সালে কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছিল আমেরিকা।

স্থায়ীভাব বসবাসে তার আবেদন আমেরিকার একটি আদালত প্রত্যাখান করলে তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে অন্য চারজনের সঙ্গে তাকেও ফাঁসিতে ঝুলানো হয়।

আমাদের জানা মতে, রাশেদ চৌধুরী এখনও রিফিউজি স্বীকৃতি পাননি। ফলে তাকে হস্তান্তরে আইনি কোনো বাধা নেই। তাকে হস্তান্তরে সময়ক্ষেপনের কোনো যুক্তি নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশের আবেদনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা উচিৎ যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর