কওমি মাদ্রাসার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না: আহমদ শফী

আলেমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কওমি মাদ্রাসার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়াহ বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতি ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। তিনি জানিয়েছেন, তারাও কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি চান, তবে এই মাদ্রাসার নীতি ও আদর্শের পরিপন্থি কোনো স্বীকৃতি তারা মেনে নেবেন না।

সোমবার রাজধানীতে আয়োজিত উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে আহমদ শফী এসব কথা বলেন। মিরপুর আরজাবাদ মাদ্রাসার মাঠে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই সমাবেশে সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার আলেমরা যোগ দেন।

সম্মেলনের শুরুতে আল্লামা শফীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ।

লিখিত বক্তব্যে আল্লামা শফী বলেন, ‘এদেশের কওমি মাদরাসা ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দেরই অনুসারী। দেওবন্দের মতই এসব প্রতিষ্ঠান ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি, ঈমান-আমল, আখলাক ও নৈতিক চিন্তাধারা গঠণে মৌলিক ভূমিকা পালন করে আসছে এবং কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী চরিত্রবান দেশপ্রেমিক সুনাগরিক তৈরি করা এবং ইসলাম মহান বাণী সর্বস্তরের জনসাধারানের পৌঁছে দেয়াই কওমি মাদরাসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। কওমি মাদরাসার সাথে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। এ মাদরাসাসমূহ সম্পূর্ণভাবে স্বায়ত্বশাষিত। দেওবন্দের অষ্ট মূলনীতিই হলো এ প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্দেশিকা। এ মূলনীতির অন্যতম হলো- এসব প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা ও মৌলিকত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে সরকারি সাহায্য গ্রহণ না করা ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকা।’

আহমদ শফী বলেন, ‘গত দেড়শ’ বছর থেকে স্বাধীনভাবে চলে আসা কওমি মাদরাসাসমূহের শিক্ষা সনদের মান দেয়ার লক্ষ্যে কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশন গঠন, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারিসহ সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব প্রক্রিয়ার পিছনে কারো কারো অতি মাত্রায় আগ্রহ সম্পর্কে আমরা কম-বেশি অবগত। কিন্তু এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই কারো কারো অতি উৎসাহমূলক তৎপরতা দেখে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা, স্বায়ত্বশাসন অক্ষুণ্ণ রাখার বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমরা মনে করি, শত বছর ধরে চলে আসা কওমি মাদরাসার স্বকীয় নীতি আদর্শ, স্বাধীন শিক্ষাক্রম, পরিচালনা বিন্দু মাত্রও নষ্ট হবে না এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না এমন নিশ্চয়তা পেলেই আমরা সরকার থেকে দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনায় বসতে পারি। অন্যথায় আমরা যেভাবে আছি সেভাবে থাকাই আমাদের জন্য নিরাপদ।’

বেফাক সভাপতি বলেন, ‘২০১৬ সালের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের বেশ কিছু ধারা কওমি মাদরাসা স্বাধীনভাবে চলার পরিপন্থি, তারপরেও আমাদেরই কারো কারো অতি উৎসাহে সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েই চলছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত অবস্থান নির্ণয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। আর এ পরিপ্রেক্ষিতেই আজকের জাতীয় কওমি উলামা মাশায়েখ সম্মেলন।’

তিনি সম্মেলনে আগত উলামা-মাশায়েখকে ধন্যবাদ দিয়ে আগামীতেও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যের ডাক এলে সর্বাত্মক সাড়া দেয়ার আহ্বান জানান হেফাজতে ইসলামের আমির।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবসমূহের মধ্যে রয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এবং তদালোকে প্রণীত শিক্ষা আইন ২০১৬-এর খসড়া অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে চক্রান্তমূলকভাবে বাদ দেয়া ইসলামী ভাবধারার গল্প, রচনা ও কবিতাসমূহ পুনঃ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং হিন্দুত্ববাদী ও ইসলাম বিদ্বেষী কবিতা, গল্প ও রচনাবলী শিক্ষা সিলেবাস থেকে বাদ দিতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষাকে (যা ফরজে আইন) বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন পর্যালোচনা কার্যক্রমে দক্ষ ও বিজ্ঞ আলেমগণের পারমর্শ নিতে হবে। প্রস্তাবিত কওমি মাদরাসা শিক্ষনীতি-২০১২ এবং এর আলোকে তৈরিকৃত কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৩ এর খসড়া বাতিল করতে হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ এর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও কমিটির সব কার্যক্রম বাতিল করতে হবে। যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নামে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতা বিলুপ্ত হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সরকারকে বিরত থাকতে হবে। পুরান ও নতুন মক্তব হাফেজিয়া ও কওমি মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা সরকারি নিবন্ধনের আওতামুক্ত থাকতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর