জিনপিংয়ের সফরের অর্জনে’ উৎফুল্ল আ. লীগ

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের ঘটনায় আনন্দের জোয়ার বইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে।

এই চুক্তিগুলোর পাশাপাশি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সই হয়েছে আরও এক হাজার ৩৬০ কোটি ডলারের বাণিজ্য চুক্তি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের এই সফরে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে। কারণ এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেক বাড়বে।

তবে এই সফরে একটি রাজনৈতিক বিজয়ও দেখছে আওয়ামী লীগ। দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘এক শ্রেণির মানুষ আমাদের বলে আমরা শুধুমাত্র ভারতের সাথেই আমাদের সম্পর্ক ভাল। তাদের এই অপপ্রচার এখন থামবে বলে আমরা মনে করি।’

আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘ওই শ্রেণির মানুষ আগে ভারত বিরোধীতার কারণে আমাদের ভোট দিত না, কিন্তু এ সফরের ফলে ভোটের হিসাবেও ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।’

শি জিনপিং এর সফরে মধ্যে সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলা, সেতু নির্মাণ, বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতা, বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই, সমুদ্রাঞ্চলে সহযোগিতা; দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, জ্বালানী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহযোগিতা, ইনফরমেশন সিল্ক রোড, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সমঝোতা স্মারক সই হয়।

দুই দেশের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর নিচে একাধিক লেনের টানেল নির্মাণ ও দাশেরকান্দিতে সাগরকেন্দ্রিক ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের কাঠামোগত চুক্তি সই হয়েছে।

এছাড়া উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতায় চুক্তির পাশাপাশি ঋণ ও অর্থনৈতিক চুক্তি হয়েছে দাশেরকান্দি সমুদ্রকেন্দ্রিক ট্রিটমেন্ট প্রকল্প, কর্ণফুলি নদীর নিচ দিয়ে একাধিক লেনের টানেল নির্মান, পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চীনের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে প্রশস্তকরণ প্রকল্প, ব্রডকাস্টিং লাইসেন্স প্রটোকল ইস্যুতে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এ চুক্তি সমূহের মাধ্যমে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সহজ হবে। কারণ, চুক্তিগুলোর বেশিরভাগ প্রকল্পই ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এগুলো বাস্তবায়নে এখন অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেলো বলেই মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে বলেও আশা করছেন নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরকালে যদি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতো তাহলে ভারতের কাছে একটা ভুল বার্তা যেত। কিন্তু কোন রাষ্ট্রীয় প্রটোকল না থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথেও বৈঠক করেছেন জিনপিং। এতে করে ভারতের ভুল বুঝার কোন অবকাশ থাকলো না। এত করে আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তাও অটুট থাকবে।’

এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কোন আপত্তি তোলা হয়নি।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, `আমরা যেমন চীনের সঙ্গে কাজ করছি, আবার আমরা ভারতের সঙ্গেও কাজ করছি। আমাদের সবার সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে হবে। একা আমাদের পক্ষে কোনো কিছুই সম্ভব না।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনা নেতার বৈঠকে বিএনপি নেত্রী দেশ ‘গণতন্ত্রহীন’ অবস্থায় আছে বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু চীনের চীনের প্রেসিডেন্ট তা এড়িয়ে গিয়েছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। তারা জানান, জিনপিং বলেছেন, তার দেশ শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ও বাংলাদেশ দেখতে চায়।

জিনপিং এমন বক্তব্যকেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিজয় বলে মনে করছে দলটির নেতারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের এ সফর বাঙালি জাতির একটা বড় বিজয়। কারণ যে দেশটি কোনও এক সময় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সমর্থন করেনি, সেই দেশটিই আজকে আমাদের প্রতি তাদের কেবল সমর্থনই নয়, বড় বিনিয়োগ নিয়েও এগিয়ে আসছে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর