কালো বিড়াল কি সত্যি অশুভ নাকি কুসংস্কার

পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতিতেই কালো বিড়ালকে অশুভ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশেষ করে কালো বিড়ালের রাস্তা পার হওয়াকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। অনেকেই বিশ্বাস করেন, কোনও শুভ কাজে বের হবার সময় যদি কোন কালো বিড়ালকে সামনে রাস্তা পার হতে দেখা হয় তাহলে সেই কাজে সাফল্য না আসার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটা ঘটলে বাড়ি ফিরে গিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করা করা, তা না হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর আবার কাজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়াকে ভাল বলে মনে করা হয়। গাড়ি চালকদের মধ্যে অনেকেই এই উপদেশ মেনেও চলেন। কিন্তু এই বিশ্বাসের সবটাই কি নিছক কুসংস্কার, নাকি এর বাস্তব ভিত্তি রয়েছে এ বিষয়টা এখনও পরিষ্কার নয়।

এই বিশ্বাসের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, জ্যোতিষ শাস্ত্রের একটি বিশেষ শাখা সগুণ শাস্ত্রে এই কালো বিড়ালের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। সগুণ শাস্ত্র এমন একটি শাস্ত্র, যা মূলত বিভিন্ন অশুভ লক্ষণ নিয়েই চর্চা করা হয়ে থাকে। এই শাস্ত্রে বিশেষভাবে কালো বিড়ালকে অশুভ মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কালো আসলে শনির প্রতীক। আর শনি কাজে বিঘ্ন ঘটায় কিংবা ব্যর্থতা আনে। কাজেই কালো বিড়াল রাস্তা পেরনোর অর্থ হল শুভ কাজ করতে যাওয়া মানুষটির উপর শনির কুদৃষ্টি পড়েছে। অতএব তার কাজে সাফল্য না আসার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কীভাবে এই কুদৃষ্টিকে অকার্যকর করা যাবে, তারও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সগুণ শাস্ত্রে। বলা হচ্ছে, কালো বিড়াল রাস্তা পার হলে বাড়ি ফিরে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ঈশ্বরের ধ্যান করার পরে আবার কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া উচিত।

তবে শুধু ভারতীয় সংস্কৃতি নয় কালো বিড়ালকে অশুভ মনে করার সংস্কার প্রচলিত রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতিতেই। জার্মানিতে রাস্তার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে কালো বিড়ালের ছুটে যাওয়াকে অশুভ মনে করা হয়। আবার জার্মান লোকবিশ্বাস মতে, কালো বিড়াল যদি বাম থেকে ডানে রাস্তা পার হয় তবে তা শুভ লক্ষণ।

পশ্চিম এবং দক্ষিণ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও সমজাতীয় বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। ১৯ শতকের জলদস্যুরা আবার বিশ্বাস করত, কোনও মানুষের কাছ থেকে যদি কালো বিড়াল দূরে পালিয়ে যায়, তাহলে তা দুর্ভাগ্য দূর হয়ে যাওয়ার লক্ষণ। জুয়াড়িরা জুয়া খেলতে যাওয়ার পথে কালো বেড়ালের দর্শনও অশুভ বলে মনে করে। এমনটা ঘটলে সেদিনের খেলায় তারা নির্ঘাৎ হারবে বলেই বিশ্বাস করে তারা।

এই সমস্ত বিশ্বাসের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অবশ্য নেই। জীববিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, কোনও কোনও প্রাণী আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস পেয়ে থাকে। কিন্তু ব্যক্তি বিশেষের দুর্ভাগ্যের সঙ্গে বিড়াল বা অন্য কোনও প্রাণীরই কোনও যোগ রয়েছে বলে বিশ্বাস করার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

লোকবিজ্ঞানীরা বলছেন, কালো বিড়াল অশুভ এই বিশ্বাসের প্রকৃত কারণ আবিষ্কার করা দুরূহ, তবে সাধারণভাবে বিড়াল তখনই দৌড়ে রাস্তা পার হয় যখন কোনও প্রাণী বা মানুষ তাকে তাড়া করে। অর্থাৎ কোনও বিড়ালকে রাস্তা পার হতে দেখলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, তার পিছনে ছুটে আসছে কোনও মানুষ বা অন্য কোনও প্রাণী। কাজেই সেই পিছু নেওয়া প্রাণীটির সুরক্ষার্থেই গাড়ি আস্তে করে দেওয়া, কিংবা থামিয়ে দেওয়া ভাল। এই বিষয়ে গাড়ি চালকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতেই ওই অশুভ লক্ষণ সংক্রান্ত আরবান মিথটি তৈরি হয় বলে মনে করছেন লোকবিজ্ঞানীরা।

আর কালো রং-কে এমনিতেই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অশুভ চিহ্ন বলে মনে করা হয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে কালো রং যেমন শনির প্রতীক, তেমনই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে স্যাটানিজমের সংযুক্ত করে দেখা হয় কালো রং-কে। সেই কারণেই এই বিশেষ সংস্কারটির ক্ষেত্রে কালো বিড়ালকে অপেক্ষাকৃত বেশি অশুভ বলে মনে করা হয়ে থাকে। সূত্র:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর