সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে তাবিথের মিশন কি

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ‘সঙ্গ’ দিতে এই মুহূর্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থান করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা  তাবিথ আউয়াল। শনিবার (১৩ জুন) রাতে আকাশপথে কলকাতা হয়ে শিলং পৌঁছেন তিনি।

এর আগে ছোট মেয়ের এ লেভেল পরীক্ষার কারণে শুক্রবার (১২ জুন) রাতে শিলং থেকে কয়েক দিনের জন্য দেশে ফেরেন সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিজের অবর্তমানে নানা ধকল কাটিয়ে ওঠা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত স্বামীর পাশে একজন শক্তপোক্ত লোক রাখার কথা ভাবছিলেন সালাহ উদ্দিনপত্নী। ভাতিজা সাফওয়ান করিম ও রাজু আহমেদ সালাহ উদ্দিনের পাশে থাকলেও অপেক্ষাকৃত তরুণ দুই আত্মীয়র ওপর ভরসা রাখতে পারছিলেন না হাসিনা আহমেদ।

এমন পরিস্থিতিতে দুই দফা শিলং ঘুরে আসা তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। পরে তাবিথের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে শিলং থেকে ঢাকার পথে রওনা দেন হাসিনা। পরের দিন ঢাকা থেকে শিলংয়ের উদ্দেশে রওনা হন তাবিথ। সেখানে পৌঁছেই সালাহউ দ্দিনের কটেজে উঠেন তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তদের হাতে অপহরণ, শিলং পুলিশের হাতে আটক, হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ, কারাগারযাপন, ফের হাসপাতালে ভর্তি, সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে কটেজে উঠা, সর্বশেষ তরুণ রাজনৈতিক সহকর্মী তাবিথ আউয়ালকে পাশে পেয়ে খোশ মেজাজে আছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

এদিকে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে শিলং অবস্থানরত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এরই মধ্যে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কেও তাবিথ আউয়ালের কাছ থেকে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, এর আগে তাবিথ আউয়াল দুই দফায় যখন শিলং যান, তখন পুলিশ হেফাজতে মিমহ্যানস, শিলং সিভিল ও নেগ্রিমস হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাই তার সঙ্গে দেখা করতে পারলেও মন খুলে কথা বলার সুযোগ পাননি তাবিথ।

এবার সেই সুযোগ পেয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে রাজনৈতিক দিক্ষা গ্রহণ করছেন আগামীতে বিএনপির নেতৃত্বদানে আগ্রহী তাবিথ আউয়াল।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাবা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় হঠাৎ বিএনপির রাজনীতিতে পদার্পণ এবং দলটির হাইকমান্ডের ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্তের বলি হয়ে ভোট বর্জনের পরও তিন লাখের ওপরে ভোট পান তাবিথ।

সূত্র জানায়, রাজনীতির মাঠে এসেই বিপুল সংখ্যক ভোট পাওয়ায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তরুণ তাবিথ আউয়ালের। এরই প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বদানের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। আর এই স্বপ্ন পূরণে খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন অধুনা বিপদাপন্ন সালাহ উদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন তাবিথ।

সে কারণেই সালাহ উদ্দিনের সন্ধান পাওয়ার পর শিলংয়ে ছুটে যান তিনি। প্রথম দফায় শিলংয়ে পৌঁছানো মাত্রই শাশুড়ির মৃত্যু সংবাদে দেশে ফিরতে হয় তাকে। দ্বিতীয় দফায় শিলং গিয়ে পুলিশ হেফাজতে চিকিংসাধীন সালাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা হলেও কথাবার্তা বলার সুযোগ খুব একটা পাননি তাবিথ। তবে এবার গিয়ে সোজা উঠেছেন সালাহ উদ্দিনের কটেজে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, সালাহ উদ্দিনকে সঙ্গ দেওয়ার পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাবিথ। সেখানে উন্নত চিকিৎসা করাতে চান সালাহ উদ্দিনকে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ চেষ্টায় সফল হতে পারেননি তিনি। শর্ত সাপেক্ষে জামিনে থাকা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে শিলংয়ের বাইরে নেওয়ার অনুমতি আদায় করতে পারেননি তাবিথ।

এদিকে ঢাকার একটি সূত্র মতে, শিলং থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ জুন)  কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তাবিথ আউয়াল। সেখান থেকে আকাশ পথে দেশে ফিরবেন তিনি। এর পরই শিলংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসিনা আহমেদ  বলেন, খুব শিগগিরই যাব। তবে তারিখ এখনো ঠিক করিনি।

স্বামীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি ভালো আছেন। আপনারা উনার জন্য দোয়া করবেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।

টানা অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এর দুই মাস পর ১১ মে ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার হন তিনি। পরে পুলিশ তাকে আটক করে শিলংয়ের মানসিক হাসপাতাল মিমহ্যানসে নিয়ে যায়। পরের দিন ১২ মে সেখান থেকে টেলিফোনে স্ত্রী হাসিনা আহমেদকে সালাহ উদ্দিন জানান, তিনি বেঁচে আছেন।

এর পর ১৩ মে সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট-৪৬’ এ দায়ের করা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘালয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এ চার্জশিট জমা দেয়া হয়। চার্জশিটে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারা অনুযায়ী বৈধ ডকুমেন্ট ছাড়া অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয় সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে।

গত ২৭ মে আদালতে তোলা হয় তাকে। শুনানি শেষে ১৪ দিন বিচারিক হেফাজতে রাখার নির্দেষ দেন শিলংয়ের একটি আদালত। এরপর ৫ জুন শিলংয়ের আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান সালাহ উদ্দিন আহমেদ। শর্ত অনুযায়ী বর্তমানে শিলংয়েই  অবস্থান করতে হচ্ছে তাকে।

তবে এতো কিছুর পরও সালাহউদ্দিনকে নিয়ে তাবিথ আসলে কি মিশন বাস্তবায়ন করতে চাইছেন তা নিয়ে বিএনপিতেই চলছে চরম কানাঘুষা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর