ইংল্যান্ডের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

নাহ, হলো না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পূরণ তো হলোই না, হলো না উপমহাদেশের দ্বিতীয় দল হিসেবে দেশের মাটিতে টানা সাত ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বপ্নও। বুধবার রাতে ইংল্যান্ডের কাছে শেষ ওয়ানডে ৪ উইকেটে (১৩ বল বাকি থাকতে) হেরে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ এ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। তবে ম্যাচের ৪৮ ওভার পর্যন্ত লড়াই করে গেছে স্বাগতিকরা, যে লড়াইটাও মনে রাখার মতো।

ইংল্যান্ডের সামনে ছিল ২৮৮ রানের বিশাল টার্গেট। আজকাল ২৮০-২৯০ তাড়া করে জেতা খুব কঠিন কিছু নয়।তবে সাগরিকায় খুব বড় স্কোর তাড়া করে জয়ের নজির নেই। এ কারণেই ঐ রানকে বড় স্কোর মনে করা হয়েছিল।

শুরুটা ভালো করে প্রথম পাওয়ার প্লেতে (প্রথম ১০ ওভার) বিনা উইকেটে ইংল্যান্ড তুলে ফেলে ৪৯ রান। বাংলাদেশ যেখানে করেছিল ৪২। নাসিরের হাত ধরে যখন প্রথম উইকেটের (ভিঞ্চ ৩২) দেখা পেল বাংলাদেশ, তখন ইংল্যান্ড তুলে ফেলেছে ৬৩ রান, ১১.৪ ওভারে।

ওপেনিং জুটির মতো দ্বিতীয় উইকেট জুটিও চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ায়। জুটি ভাঙলেন মোসাদ্দেক, (বিলিংস ৬২) তবে ততক্ষণে ২৪ ওভারে ১২৭ রান করে ফেলে ইংল্যান্ড। তারপরেও বিপদজনক বিলিংসকে ফিরিয়ে মোসাদ্দেক স্বস্তি আনেন বাংলাদেশ শিবিরে।

কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেয়নি ইংল্যান্ডের তৃতীয় উইকেট জুটি। ডাকেট ও বেয়ারস্টো মিলে রান নিয়ে যান ১৭২ এ (৩১.২ ওভারে)।১৫ রানে বেয়ারস্টোকে শফিউল ইসলাম ফেরালেও ক্রমেই বিপদজনক হয়ে উঠছিলেন ডাকেট। তবে তাকে ৬৩ রানে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে নিয়ে আসেন সেই শফিউল।

কিন্তু ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন যে বড়ই লম্বা। এ পর্যায়ে বাংলাদেশের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান বেন স্টোকস ও অধিনায়ক জস বাটলার। ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলতে এ জুটিকে দ্রুত ফেরানো দরকার ছিল।বাটলারকে (২৬ বলে ২৫) যখন ২৫ রানে মাশরাফি সরাসরি বোল্ড করলেন তখন ম্যাচ কিছুটা হেলে গেছে ইংল্যান্ডের দিকে।

মোস্তাফিজ নেই। ওর অভাবটা প্রতি ম্যাচেই পূরণ করে চলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাটলারের পর মঈন আলীকে ১ রানে আউট করে ম্যাচে নাটকীয়তার জন্ম দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শেষ ৬ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ৩৩ রান, হাতে ৪ উইকেট।বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান বেন স্টোকস। নিজের শেষ ওভারে চার দিলেন মাশরাফি। ৩০ বলে ২৯ দরকার ইংল্যান্ডের।

এরপর ২৪ বলে ২৭। ম্যাচে নাটকীয়তা। ৪৭তম ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে ওয়েকসের সহজ একটি ক্যাচ তুলেছিলেন তাসকিন। তখন ১৭ রানে ব্যাট করছিলেন ওয়েকস। কিন্তু সহজ সেই ক্যাচটি হাত ছাড়া করে ম্যাচই হাত ছাড়া করে দেন ইমরুল কায়েস। শেষ পর্যন্ত ১৩ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি ও শফিউল ২টি করে উইকেট নেন।

এর আগে তামিম, ইমরুল, সাব্বিরের তিনটি অর্ধশত ছুঁই ছুঁই ইনিংস এবং মুশফিক ও তরুণ তুর্কি মোসাদ্দেকের (দুজনই অপরাজিত) চোখ জোড়ানো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ তুলে ৬ উইকেটে ২৭৭ ।

এ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে উপমহাদেশের দ্বিতীয় দল হিসেবে দেশের মাটিতে টানা সাতটি ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখাবে বাংলাদেশ।

গত কয়েক দিন চট্টগ্রামে বৃষ্টি হওয়ায় এবং পিচ ঢাকা থাকায় এই উইকেটে প্রথমে ব্যাট করা সহজ ছিল না।তবে দুই ওপেনার তামিম ও ইমরুল সেই ব্যাপারটা বুঝতেই দেননি। সেট হতে যেটুকু লড়াই করার দরকার ছিল তার পুরোটাই করেছেন তারা। দেখেশুনে ব্যাট চালিয়েছেন। রান তুলতে সময় নিয়েছেন।

প্রথম পাওয়ার প্লেতে তুলেছেন ৪২ রান, বিনা উইকেটে। তবে এরপর থেকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে থাকেন তারা।তাদের এতটাই আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল যে, মনে হয়েছিল সাগরিকায় দুজনই বড় ইনিংস খেলে ফেলবেন। কিন্তু বড় ইনিংসের জানান দিয়েও ৫৮ বলে ৪৬ করে ফিরেন ইমরুল। এরকিছু পরেই ৪৫ করে আউট হন ‘লোকাল হিরো’ তামিম।

হাফ সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় গিয়ে আউট হলেও দলকে মোটামুটি ভালো অবস্থায় নিয়ে গেছেন তারা। গত ক’ম্যাচে ভালো করতে না পারলেও সাব্বির এদিন শুরু করেছিলেন নিজের স্টাইলে। বাহারি শটে তিনি জাগিয়ে তুলেন গ্যালারি। দারুণ মেরে খেলছিলেন।

কিন্তু তিনিও হাঁটলেন দুই ওপেনারের পথে। হাফ সেঞ্চুরির আগেই ফিরলেন ড্রেসিং রুমে।করেছেন ৪৬ বলে ৪৯ রান। এ সময় ৩২.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে ফেলে স্বাগতিকরা।

কিন্তু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৬), সাকিব (৪), নাসিরের (৪) দ্রুত বিদায় বড় স্কোরের বিপরীতে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন জুড়ে দেয়। ব্যাটসম্যান বলতে মুশফিক ও মোসাদ্দেক। এ জুটির উপরই নির্ভর করছিলো বাংলাদেশের বড় স্কোরের ভাগ্য। মোটেও নিরাশ করেননি তারা। ৫৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে সমালোচনার জবাব দেন মুশফিক। সাত ম্যাচ পর হাফ সেঞ্চুরি পেলেন দলের অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত ৬২ বলে ৬৭ রানের চোখ জোড়ানো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।

তরুণ মোসাদ্দেক তার জাত চিনিয়েছিলেন প্রথম ম্যাচেই। বহুদূর যাবেন সেই ঘোষণা বারবারই শোনা গেছে তার ব্যাটে। চট্টগ্রামেও ব্যাটে আলো ছড়ালেন তিনি।৩৯ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকার আগে মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাধেন ৮৫ রানের।
ইংল্যান্ডের পক্ষে স্পিনার আদিল রশিদ ৪৩ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর