প্রাণঘাতী রোগ নির্মূলে এক হতে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

এইডস, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মার মতো প্রাণঘাতী রোগ নির্মূলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

pm-canadaশুক্রবার কানাডার মন্ট্রিলে ‘ফিফথ রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান বলে তার প্রেসসচিব ইহসানুল করীম জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য। প্রয়োজন কেবল প্রতিশ্রুতি, সঙ্কল্প ও সংহতি। চলুন এগুলো নির্মূল করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।”

বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তাও কামনা করেন তিনি।

“আমাদের সরকার স্বাস্থ্য বিষয়ক অবকাঠামো, পণ্য ও সেবায় বিনিয়োগের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে।…আশা করছি, গ্লোবাল ফান্ড আমাদের উদ্যোগের সঙ্গে থাকবে।”

২০৩০ সালের মধ্যে এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার মতো ঘাতক ব্যাধির ব্যাপক বিস্তার রোধে করণীয় ঠিক করতে মন্ট্রিলের হায়াত রিজেন্সি হোটেলে দুই দিনের এ সম্মেলন হয়।

সম্মেলনের উদ্বোধনীতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সল, টোগোর প্রেসিডেন্ট ফরে গ্নাসিঙ্গব, গ্লোবাল ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক মার্ক দিবাল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লা ফ্রাঙ্কোপনির সেক্রেটারি জেনারেল মিশেল জঁ বক্তব্য রাখেন।

কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ও লা ফ্রাঙ্কোপনের মেরি ক্লঁদ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও বেসরকারি সংস্থার প্রধান, বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত আছেন।

মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জন নিশ্চিতে কাজ করার ইচ্ছা থেকে জন্ম নেয়া গ্লোবাল ফান্ড এরই মধ্যে শতাধিক দেশে এক হাজারেরও বেশি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এ সংক্রান্ত চিকিৎসা সেবায় অর্থায়ন করে থাকে গ্লোবাল ফান্ড। এটি বিশ্বজুড়ে কাজ করলেও যেসব দেশে রোগগুলোর ঝুঁকি বেশি থাকে সেখানে বেশি নজর দেয়।

প্রতি তিন বছর পরপর এই ফান্ডের রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে সর্বশেষ ওয়াশিংটনে এ সম্মেলন হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে উন্নয়নের জন্য ‘অত্যাবশ্যকীয় উপাদান’ অভিহিত করে বলেন, সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত, সাশ্রয়ী ও টেকসই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এখনও বেশ চ্যালেঞ্জের কাজ।

উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষার কারণে বিশ্ব এখন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বল্পমাত্রার সক্ষমতা ও সম্পদ থাকার পরও বাংলাদেশ এমডিজিতে সাফল্য অর্জন করেছে।

“গত দুই দশকে আমরা মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়েছি ৭০ শতাংশ; গত দেশ দশকে পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুহার কমেছে ৬৬ শতাংশ, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ৬২ শতাংশ।”

সরকারের নেওয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচির কারণে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর।

২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলে অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী গত দুই দশক ধরে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা কম রাখার ব্যাপারেও তার সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরেন।

নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা বলার সময়ও প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের স্বাস্থ্যসেবার উপর গুরুত্বারোপ করতে আহ্বান জানান।

“সবার প্রথমে আমরা মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দিই। নারীর ক্ষমতায়নে এ বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে।”

এটা বাল্যবিয়ে রোধ এবং মাতৃ ‍ও শিশুমৃত্যু হার কমাতে ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে তার সরকারের নেওয়া ‘জিরো টলারেন্সের’ কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

“সহিংসতা নারীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা নারীর উপর সবধরনের সহিংসতা ও বৈষম্য রোধে জিরো টলারেন্স দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার দেশজুড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়নগুলোতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছে।

“কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যে কর্মচারীরা কাজ করেন তাদের অধিকাংশই নারী।”

দরিদ্রদের সুলভে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্যসেবার এ উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি গ্লোবাল ফান্ডের মত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংগঠনগুলোর ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গ্লোবাল ফান্ডের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্ণা ও এইচআইভি আক্রান্ত অনেকেরই জীবনমানে উন্নতি ঘটেছে।

‘ফিফথ রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)’ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার মন্ট্রিলে পৌঁছান। সেখান থেকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ১৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক যাবেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর