প্রাণে বাঁচতে এএসআই জহিরের হাতে তুলে দিই তিন লাখ টাকা

উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া। টার্গেট অনুযায়ী ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর হুমকি দেয়া হয় নাসিম আহমেদ নামের ওই ব্যবসায়ীকে। বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়ন্দা পুলিশের ৫ সদস্যকে। সাময়িক বরখাস্তরা হলেন- এসআই আমিরুল ইসলাম, এএসআই জহির উদ্দিন, কনস্টেবল শাহ আলম, গোলাম সামদানি ও সোহেল ওমর। ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর পাঁচলাইশ থানার কেবি ফজলুল কাদের সড়কে ল্যানসেট হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় অবস্থিত একটি অফিসে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নাসিম আহমেদ এ ঘটনায় শহরের পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার অফিস থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই জহির উদ্দিন। সোমবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। জহির উদ্দিনের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ দল ওই অফিসে গিয়ে তার কাছে ইয়াবা আছে বলে জানায়। একপর্যায়ে অস্ত্র আছে বলে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেয়। ঘটনা থেকে বাঁচতে নিরাপরাধ নাসিম ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের চাহিদামতো ৩ লাখ টাকা তুলে দেয়।
পরে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তার অফিসে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে থানায় জিডি করেন নাসিম। জিডিতে আরও বলা হয়, ডিবি পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা ১০ জন লোক আমার অফিসে ঢুকে আমাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়। তারা আমার টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন দিয়ে দেয়ার জন্য বলে। এই কাজে ছিলেন পুলিশের জহির উদ্দিন, সোর্স আবু তাহেরসহ আরও বেশ কয়েকজন। বাইরে গাড়ি ছিল। কোমরে পুলিশের ব্যবহৃত পিস্তলও ছিল।
নগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ ধরনের অপারেশন চালিয়েছে পুলিশের ওই কর্মকর্তা জহির। যা ঊর্ধ্বতন মহলের কেউ জানতো না। গতকাল ভিডিও ফুটেজ শনাক্তের পর পুলিশ বিভাগ ৫ জনকে এ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করে। ঘটনার অনুসন্ধানে তারা জানিয়েছে মূলত পারিবারিক বিরোধ থেকেই একপক্ষকে সমর্থন দিতে জহির ব্যবসায়ী নাসিমের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তার উদ্দেশ্য ছিল ভয়-ভীতি প্রদর্শন।
জিজ্ঞাসাবাদে ব্যবসায়ী সৈয়দ নাসিম আহমেদ পুলিশকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি ছোটবোন সৈয়দা শারমিন আহমেদের স্বামী ডা. ফজলে রাব্বির বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন তিনি। সেই মামলা তুলে নিতে পুলিশের ওই ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভাড়া করেন ফজলে রাব্বি। আগামী ১৪ই জুন এ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার কামারুজ্জামান এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে কয়েকজনকে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই খতিয়ে দেখে তদন্ত করে তারপর বলা যাবে। তবে ভিডিও ফুটেজ সত্যি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ বিভাগ।
জানতে চাইলে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা কায়সার বলেন, ঘটনা সত্যি। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা সবাইকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। পুলিশ বিভাগ ঘটনাটি নিয়ে বৈঠক করেছে।
ব্যবসায়ী সৈয়দ নাসিম আহমেদ বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে পুলিশের লোক ছিল। ওরা যখন জানতে পারে আমার কাছে ফুটেজ আছে তখথন দ্রুত আমার অফিসে আসে। এরপর ক্ষমা চায়।
তিনি আরও বলেন, আমি পুলিশের জহিরের হাতে ৩ লাখ টাকা তুলে দেই। সে আমাকে বলেছিল যাতে কাউকে কিচ্ছু না বলি। বললে নাকি মেরে ফেলবে। আমি তারপরও গতকাল আদালতে গিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর