খোঁজ মিলল হারিছ চৌধুরীর

খোঁজ মিলল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর। ২০০৭ সালে দুদকের করা দুর্নীতিবাজদের তালিকায় নাম দেখেই গা-ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। এরপর কিছুদিন হবিগঞ্জ ও পরে সিলেটে থাকার পর সীমান্ত পার হয়ে মামার বাড়ি চলে যান তিনি।

সেখান থেকে ভাই আবুল হাসনাত চৌধুরীর কাছে ইরান হয়ে মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে আসেন বিএনপির এই নেতা। এক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকলেও এখন আর নেই।

হারিছ চৌধুরীর আট একর জমিতে গড়ে তোলা বিলাসবহুল বাড়িটি একরকম জনমানবহীন। এত বড় বাড়িতে থাকেন শুধু হারিছ চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ ভাই কামাল আহমদ।

হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। হারিছ চৌধুরীর খবর জানেন না তিনি। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হওয়ার আগে থেকেই হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী ও এক ছেলে এক মেয়ে লন্ডনে চলে গিয়েছিল।

হারিছরা পাঁচ ভাই। তার মধ্যে ঢাকায় থাকেন সেলিম চৌধুরী, সিলেটের কানাইঘাটের বাড়িতে থাকেন কামাল আহমদ চৌধুরী। কানাইঘাটে তাদের বাড়িতে থাকেন না কেউ।

জানা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের সময় বিএনপির কোণঠাসা জ্যেষ্ঠ নেতারা এখনো হারিছ চৌধুরীর ওপর ক্ষুব্ধ। তার কারণে ওই নেতারা খালেদা জিয়ার কাছে ঘেঁষতে পারতেন না। তারেক রহমানও হারিছ চৌধুরীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন।

জোট সরকারের সময় ঢাকা থেকে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় গ্রামের বাড়িতে তিনি আসা-যাওয়া করতেন হেলিকপ্টারে।

গ্রামে অবস্থানকালে এক মুহূর্তের জন্যও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটত না।

প্রভাব খাটিয়ে বাড়ির ভেতরেই পোস্প অফিস, কৃষি ব্যাংক, মডেল স্কুল, তফশিল অফিস, দাতব্য চিকিৎসালয়, এমনকি পুলিশ ফাঁড়িও স্থাপন করিয়েছিলেন।

আশপাশের সব রাস্তা কাঁচা হলেও তার বাড়িতে যাওয়ার আড়াই কিলোমিটার রাস্তা পিচঢালা। বাড়ির ভেতর নির্মাণ করা হয়েছিল নজরকাড়া বাংলো, ছিল চিড়িয়াখানাও। তবে চৌধুরীবাড়ির সেই জৌলুস এখন আর নেই। কারণ হারিছ চৌধুরী ৯ বছর ধরে নিখোঁজ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দুটি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে বিস্ফোরক আইনের মামলা ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও আসামি হারিছ চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগে কমপক্ষে ছয়টি মামলা হয়েছে।

পাঁচ বছরের বিএনপির ক্ষমতায় হারিছ চৌধুরী গুলশানে কেনেন চারটি বাড়ি। অস্ট্রেলিয়া ও লন্ডনে কেনেন একাধিক ফ্ল্যাট। গুলশানের চারটি বাড়ির মধ্যে একটি তার এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নামে বরাদ্দ নিয়েছিলেন হারিছ চৌধুরী।

দুদকে মামলা হওয়ার পর হারিছের পরিবারের পক্ষ থেকে বাড়িটি ফেরত দেয়া হয় ২০১৪ সালে। ঢাকার হাওয়া ভবনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে দুর্নীতির বরপুত্র হয়ে উঠেন হারিছ চৌধুরী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথমদিকেই আত্মগোপনে চলে যান।

জানা গেছে, ২০১১ সালে লন্ডনে দেখা করতে গেলে তারেক রহমান দেখা দেননি হারিছ চৌধুরীকে। ঢাকার নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র হারিছ চৌধুরী শুরুতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

১৯৭৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে জাগদলে যোগ দেন তিনি। সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতিসহ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

তবে সর্বশেষ কাউন্সিলে বিএনপির কোনো পদেই রাখা হয়নি হারিছ চৌধুরীকে। দেশে ফিরে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত থাকলেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার কারণে আসছেন না তিনি।

২০১২ সালের ৭ ডিসেম্বর হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আবুল হাসনাত চৌধুরী ঢাকায় মারা যান। তখন হারিছ চৌধুরী ইরানে অবস্থান করছিলেন।

১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন হারিছ চৌধুরী। তবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হওয়ায় পরাজয়ের সব গ্লানি মুছে যায়।

হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনা আরা বেগম, ছেলে নাঈম সাফি চৌধুরী ও মেয়ে সামিরা তানজিম (মুন্নু আরা)। মেয়ে ব্যারিস্টার ও ছেলে নরওয়েভিত্তিক একটি তেল কম্পানিতে কাজ করছেন।

হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্বাচন হলে কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাহের চৌধুরী মনোনয়ন পেতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর