মোশাররফ-মওদুদের ‘সরে যাওয়ার’ প্রস্তাব,খালেদার না

বিএনপির স্থায়ী কমিটি চূড়ান্ত করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।আর এতেই আটকে আছে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা।দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলকে চাঙ্গা করতে নতুন ছয় জনকে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা করে দিতে চাচ্ছেন।১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে দুই জন মারা গেছেন এবং একজন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অবসর নিতে চাইছেন।সমস্যা দেখা দিয়েছে স্থায়ী কমিটির তিন জন সদস্যকে নিয়ে।চেয়ারপারসন যদি তিন জনকে নতুন কমিটিতে জায়গা করে দিতে চান এবং কমিটির কলেবর যদি না বাড়ানো হয় তাহলে বর্তমান কমিটি থেকে তিন জনকে বাদ পড়তেই হচ্ছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে,খালেদার মনোভাব বুঝতে পেরে এবং বিদ্যমান জটিলতা নিরসনে এগিয়ে আসেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সম্প্রতি তিনি খালেদার সঙ্গে দেখা করে তিনিসহ স্থায়ী কমিটির মোট তিন জনের নাম উল্লেখ করে বয়সের কারণ দেখিয়ে তাদেরকে স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেন।বাকি যে দুই জনের কথা মোশাররফ উল্লেখ করেছেন তাঁরা হচ্ছেন-ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মোশাররফ হোসেনের ওই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।খালেদা জিয়ার কমিটির কলেবর বাড়ানোর পরিকল্পনাও নাকচ করে দেন।

বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তবে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।তবে এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেন জানান।তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ড.মোশাররফ হোসেন ব্যক্তিগতভাবে এমন কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা তা আমার জানা নেই।

আর সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

বিএনপির কাউন্সিল হয়েছে চারমাস হতে চললেও এখনো ঘোষণা হয়নি বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি।কবে কমিটি হবে তাও বলতে পারছেন না কেউ।

গত ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার পর কয়েক ধাপে মোট ৪২জন কেন্দ্রীয় নেতার নাম ঘোষণা করা হয়।এরপর অনেক দিন চলে গেলেও কবে কমিটি ঘোষণা করা হবে তা নিয়ে কারো কাছে কোনো উত্তর নেই।অন্যদিকে কাউন্সিলে কমিটি করার ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়ায় দলের শীর্ষ নেতারাও খুব বেশি কিছু জানতে পারছেন না বলে জানা গেছে।

বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৯ সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী কমিটির পদাধিকার বলে সদস্য। সে হিসেবে বাকি থাকে ১৬টি পদ।

এরা হচ্ছেন- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান,ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া,মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সরোয়ারি রহমান, শামসুর রহমান এবং প্রয়াত ড, আর এ গণি ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

তবে সারোয়ারি রহমানের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। তিনি বার্ধক্যের কারণে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হওয়া ছাড়া কোনো দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছেন না। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি এই পদ থেকে সরে গেলে সেলিমা রহমানের জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে।

আর প্রয়াত ড. আর এ গণি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জায়গায় নতুন মুখ আসবে। এছাড়া অসুস্থ এম শামসুল ইসলামও কমিটি থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করায় সেখানে নতুন মুখ আসবে।

জানা গেছে,সারওয়ারি রহমানের পদ ছাড়া বাকি তিন পদের জন্য অন্তত ৮ জন সিনিয়র নেতার নাম ঘুরে ফিরে এলেও শেষ পর্যন্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন,আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন খালেদা জিয়ার গুডবুকে আছেন বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর