বার্সার নতুন গৌরবগাথা

কোন অঘটন নয়। এবারের ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতলো এফসি বার্সেলোনাই। দর্শকরা যথারীতি দেখলেন ‘মেসি ম্যাজিক’ ও নান্দনিক বার্সার ফুটবল সৌকর্য।  এতে রচিত হলো কাতালানদের নতুন গৌরবগাথা। শনিবার বার্লিনে ফাইনালে ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসের বিপক্ষে বার্সেলোনার জয়টি পরিষ্কার ৩-১ গোলের জয়। এতে ইউরোপের পেশাদার ফুটবল মওসুমে বার্সেলোনার পূর্ণ হলো শিরোপার ‘ট্রেবল’। বার্সেলোনা মওসুমে তিন শিরোপার কৃতিত্ব দেখালো এ নিয়ে দুবার। ইউরোপের ফুটবলে এমন গৌরব নেই আর কোন দলের। ক্লাব ফুটবলের কুলীন আসর চ্যাম্পিয়ন্স লীগে গত ৯ বছরে এটি বার্সেলোনার চতুর্থ শিরোপা। আর মোট ৫। এবারের স্প্যানিশ লা-লিগা ও কোপা দেল রে’র শিরোপাও ঘরে তুলেছে কাতালানরা। ৬০ বছরের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসে তিন শিরোপার গৌরব রয়েছে কেবল ৭টি দলের। বার্সেলোনা এর আগে ট্রেবল জিতে ২০০৯’র মওসুমে। এবার সুযোগ ছিল জুভেন্টাসের সামনেও। এবারের ইতালিয়ান সিরি আ’ লীগ ও কোপা ইতালিয়া শিরোপা ঘরে রেখে বার্লিনে বার্সেলোনার মোকাবিলায় নামে জুভেন্টাস। তবে ফাইনাল শেষে জুভ ভক্তদের হতাশা বাড়ে রেকর্ড দেখেও। দুবারের শিরোপাজয়ী জুভেন্টাস চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে হার দেখলো ষষ্ঠ বার। ফাইনালে আর কোন দলের ছয় বার হারের ইতিহাস নেই। বার্লিনে লড়াইয়ে নামার আগে জুভেন্টাসের বিপক্ষে আলাদা আবেগের স্মৃতি ছিল বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকের। ২০০৩’র চ্যাম্পিয়ন্স লীগ কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগে জুভেন্টাসের কাছে হার ও ড্র নিয়ে স্বপ্ন ভাঙে বার্সেলোনার মিডফিল্ড তারকা এনরিকের। তবে এবারের লড়াইয়ে তার দলের শুরুটা ছিল সুখস্বপ্নের মতো। ম্যাচের একেবারে প্রথম মিনিটে বার্সা ডিফেন্সে কিছুটা নার্ভাসনেস দেখা গেলেও দ্রুতই স্বরূপে ফেরে বার্সা। আর দলীয় নৈপুণ্যের আরও এক উদাহরণ রেখে বার্সেলোনা ম্যাচে এগিয়ে যায় খেলার মাত্র চতুর্থ মিনিটে। ডান প্রান্ত থেকে জুভেন্টাস ডি বক্সের বাম কোনায় ৩০ গজি মাপা এক চিপ তুলে দেন ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’ লিওনেল মেসি। জর্ডি আলবা, নেইমার, ইনয়েস্তার দারুণ ওয়ান-টু শেষে বল জালে জড়ান বার্সেলোনার সার্বিয়ান মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ। ব্যস, একের পর ধারালো আক্রমণে জুভেন্টাস ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে কাতালানরা। তবে যথারীতি প্রতিরোধ দেখান জুভেন্টাসের বিশ্বসেরা গোলরক্ষক ৩৭ বছরের জিয়ানলুইজি বুফন। এতে ১-০ ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় দুদল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর ১০ মিনিটে একাধিক গোল পেতে পারতো বার্সেলোনা। তবে ম্যাচের ৫৫ মিনিটে প্রাণ ফেরে জুভ শিবিরে। ডি বক্সে জুভেন্টাসের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার কার্লোস তেভেজের জোরালো শট রুখে দেন বার্সার জার্মান গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগান। তবে ফিরতি বলে টোকা দিয়ে গোল আদায় করেন আলভারো মোরাতা। পরের ১০ মিনিট ছিল নার্ভাস বার্সার অগ্নি পরীক্ষা। উদ্দীপ্ত জুভেন্টাস চড়াও হয়ে সুযোগ তৈরি করে উপর্যুপরি। তবে ফের মেসি ম্যাজিক। ৬৮ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে আগুয়ান মেসি দারুণ দক্ষতায় দুজনকে কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে শট দাগান জুভেন্টাস গোলবারে। বুফন শট রুখে দিলেও বাকি ক্যারিশমা দেখান সুয়ারেজ। ফিরতি বল জালে ঠেলে ভক্তদের উল্লাসে মাতান এ উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। দুই মিনিট পরে আরও এক পেয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। নেইমারের হেডের গোল হ্যান্ডবলের দায়ে বাতিল করেন রেফারি। যদিও এ নিয়ে দ্বিতম দেখাচ্ছেন বোদ্ধা বিশ্লেষকরা। ২-১ গোলে এগিয়ে ফাইনালের শেষের কয় মিনিট স্বাভাবিক উৎকণ্ঠা ছিল বার্সা শিবিরে। তবে ইনজুরি সময়ের পঞ্চম মিনিটে মেসি-পেড্রোর সঙ্গে বল আদান-প্রদান শেষে গোল পান নেইমার। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে বাজান ফাইনালের শেষ বাঁশি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর