হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ

‘হালদায় বৃষ্টির অপেক্ষায় মা মাছ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। গত দুইদিন থেকে বজ্রসহ হালকা মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। সামনে পূর্ণিমা তিথি। তিথির পূর্বে প্রচন্ড গরমের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টিপাত জনমনে স্বস্তির ভাব এনে দেয়। পূর্ণিমা তিথির পূর্বে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হালদা নদী থেকে মা মাছের ডিম আহরণকারীদের মনে খুশির জোয়ার এনে দেয়। বৃষ্টি দেখে ডিম আহরণকারীরা নৌকা ও ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে নদীর পাড়ে অপেক্ষা করতে থাকে। গত বুধবার রাতে নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ আংশিক ডিমের নমুনা দেয়।
নদীর পরিবেশ ডিম ছাড়ার জন্য উপযুক্ত কি না তা দেখতেই মা মাছ অল্প পরিমাণে ডিম দেয়। এটাই নমুনা ডিম। হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন এই তথ্য। তিনি জানান, নমুনা ডিম ছাড়ার পর অনুকূল পরিবেশে দ্বিতীয়বার ডিম ছাড়লেই তা সংগ্রহ করে হালদা পাড়ের জেলেরা।
নমুনা ডিমের সংবাদ অবহিত হয়ে নদীর মদুনাঘাট থেকে সত্তরঘাট পর্যন্ত ডিম আহরণকারীরা নদীতে অপেক্ষা করতে থাকে। ভাটির সময় নদীতে ডিমের নমুনা দেখে ডিম আহরণকারীরা রাতে জোয়ারের সময় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ডিম ছাড়বে বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু রাতে জোয়ারের সময় আর ডিম ছাড়েনি। বৃহস্পতিবার হালদা নদীর অংকুরিঘোণা, নয়াহাট, গড়দুয়ারা, পাতাইজ্জ্যারটেক, আজিমারঘাট, নাপিতেরঘাট, আমতুয়া, মাছুয়াঘোনা প্রভৃতি এলাকায় কিছু কিছু ডিমের নমুনার আলামত পাওয়া যায়। আলামত দেখে ডিম আহরণকারীরা মা মাছ ডিম ছাড়বে এ প্রত্যাশায় নদীতে অপেক্ষা করতে থাকে। এরমধ্যে বেলা ১২টার পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়। ডিম আহরণকারীরা মনে করেন বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আসন্ন পূর্ণিমা তিথিতেই কার্প জাতীয় মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। সেজন্য তারা লোকজন ও ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে অপেক্ষা করছে।
হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছহাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কাজী আবুল কালাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানান, নদীর কিছু কিছু স্থানে ডিমের নমুনার আলামত পাওয়া গেছে। তবে তা এত ব্যাপক নয়। ডিমের আলামত দেখে ডিম আহরণকারীরা নদীতে অপেক্ষা করছে। মৎস্য বিভাগের লোকজনও নদীতে রয়েছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জরুল কিবরিয়া জানান, ডিম আহরণকারীরা নৌকা ও ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে অপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন হালদা নদীর মদুনাঘাট, আমতুয়া, বাড়িয়াঘোনা, আজিমের ঘাট, কাকতিয়ারমূখ, গড়দুয়ারা, নয়াহাট, অংকুরিঘোনা প্রভৃতি এলাকায় কিছু কিছু ডিমের নমুনার আলামত পাওয়া গেছে। তবে এখনো ব্যাপক হারে মা মাছ ডিম ছাড়েনি। বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীতে পাহাড়ী ঢলের তোড় বৃদ্ধি পেলে মা মাছ হয়তো রাতে ডিম ছাড়তে পারে।
ডিম আহরণকারী নয়াহাট এলাকার কামাল সওদাগর জানান, ডিমের নমুনার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। যদি নমুনা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে নদীতে মা মাছ নাই। আর নমুনার আলামত ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে হয়তো মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়বে। ডিম আহরণকারীরা এভাবে প্রস্তুত রয়েছে।
হাটহাজারী-রাউজান উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে প্রতি বছর চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসে ডিম ছাড়ে মা মাছ। কৃত্রিম পোনার চেয়ে হালদার পোনা বাড়ে বলে এ পোনার কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। পোনা ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে হ্যাচারি তৈরি করে অপেক্ষায় থাকেন, মা মাছ কখন ডিম ছাড়বে সে আশায়। হালদা পাড়ের ডিম আহরণকারীর জানিয়েছেন, এই মৌসুমে হাটহাজারী ও রাউজান এলাকার দুই শতাধিক মৎস্যজীবী ডিম আহরণনের প্রস্ততি নিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর