অ্যাকশন মিনিস্টার ওবায়দুল কাদেরকে অভিবাদন

একজন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের লড়ছেন। ওয়ান-ইলেভেনের কারা নির্যাতন রাজনীতিকদের জন্য শিক্ষাগ্রহণের পাঠশালা বলে সেই যে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, আর থামেননি। একুশের গ্রেনেড হামলার স্প্রিন্টারের যন্ত্রণা শরীরে উঁকি দিলেও দমাতে পারেনি। দলের কাউন্সিলররা যেবার মরহুম আব্দুল জলিল আওয়ামী লীগের সাধারাণ সম্পাদক হয়েছিলেন, সেবারই তার নামে স্লোগান তুলেছিলেন।

দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার নিঃশর্ত আনুগত্য। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ বিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি বঙ্গভবনে প্রথম মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের দিন তাঁর ডাক পড়েনি। দিনভর তার ধানমন্ডির কার্যালয়ে সমর্থকদের ঢল ছিল। আসরের নামাজ পড়ে এসে তিনি দেখেন তার অফিস ফাঁকা। বাস্তব সত্য তিনি জানেন। মন্ত্রিসভায় নাম নাই জেনে সমর্থকরা কেটে পড়েছেন।

গণঅভ্যূত্থানে অংশ নিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসা আজকের ওবায়দুল কাদের ৭৫ উত্তর দুঃসময়ে কারাগারে বসে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নতুন করে সংগঠিত ও বিকশিত করার সেই কঠিন সংগ্রামে তার আবেগঘন বাগ্মিতা তারণ্যের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। ছাত্ররাজনীতি শেষে সাংবাদিকতা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এই রাজনীতিবিদের কোথাও ছন্দ পতন হয়নি।

একটা নিজস্ব ধারায় দল ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য রেখে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে একদিকে রাষ্ট্র পরিচালনা অন্যদিকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে সাফল্যের সিঁড়ি পথ অতিক্রম করছেন। ৯৬ শাসনামলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন সফল। ২০০৯ সালে প্রথম শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনে তার ডাক না পড়লেও পরবর্তীতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ঘিরে যখন দেশ ও আন্তর্জাতিক বির্তকের ঝড়, তখন ওবায়দুল কাদেরের ডাক পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তুলে দেন তার হাতে। এবার মন্ত্রী হবার মধ্য দিয়ে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে গিয়ে তিনি মানুষের আস্থা অর্জন করেন মাঠে নেমে। সচিবালয় ও সেতু ভবনে এয়ার কন্ডিশন কক্ষে নিজেকে বন্দি রাখেন না। নিয়মিত নামাজ পড়ে বইয়ের ভুবনেও ডুব দেন। পরিপাটি স্মার্ট এই মন্ত্রী কালো প্যান্টের ওপর শ্বেত শুভ্র শার্ট পরে ছুটে যান ভাঙ্গা-চুরা, খানা-খন্দ রাস্তায়। কখনো বা শ্বেত শুভ্র পায়জামার ওপর মোদি কোট।

সড়ক-মহাসড়কে ভাঙ্গা-চুরা বেহাল দশা আর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তদারকিই নয়, আকস্মিক পরিদর্শনে গোটা যোগযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতদের ঘুম হারাম করে দেন। সড়ক ভবনকে টেন্ডারবাজি মুক্ত করতে ই-টেন্ডার চালু করেন। জেলায় জেলায় সড়ক ভবন সিন্ডিকেট ভাঙতে বাকি তার। এখনও দুর্নীতির লাগাম টানা বাকি রয়েছে। নিজের গায়ে কলঙ্কের স্পর্শ না দিয়ে ফোর-লেন প্রকল্পসহ বিতর্কের কবল থেকে বের করে আনা শেখ হাসিনার স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করে দেন। দেশের এমন কোনো জেলা নেই এ ক’বছরে তিনি পরিদর্শন করেননি। অবিরাম ছুটছেন, খোলা বইয়ের মতো একজন যোগযোগমন্ত্রীর কাজ ও জীবন দেশের মানুষের সামনে দৃশ্যমান।

স্পষ্টবাদিতা ও অপ্রিয়সত্য উচ্চারণে দ্বিধাহীন তিনি। তার মন্ত্রণালয় এবং দলীয় কর্মীদের লাগাম টানতে বরাবর সতর্ক। সকাল-সন্ধ্যায়, কি রোদ, কি বৃষ্টি রাস্তায় রাস্তায় ছুটে বেড়ান। ছুটিহীন ও ক্লান্তিহীন নিরন্তর পথ চলা একজন ওবায়দুল কাদের। তার মেধা, ব্যক্তিত্ব এবং দক্ষতা আর আন্তরিকতায় মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। এত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও নিয়ম করে রোজ একবেলা হাঁটা এবং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বসেন। আমাদের রাজনীতিবিদগণ যেখানে নিজেদের দল ও বলয়ের মধ্য আটকে রাখেন নিজেকে, সেখানে একজন ওবায়দুল কাদের দলীয় বৃত্তের বাইরে সাধারণ মানুষের নজরই কাড়েননি, আগ্রহই কুড়াননি, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কাজ ও উদ্যেমী চরিত্র দিয়ে সম্পর্কের সুতো বেঁধেছেন। আস্থার সেতু করেছেন। প্রজন্মকে টানছেন সামজিক যোগযোগ মাধ্যমে। কেউ তার বিরূপ মন্তব্যে করলে দল বহির্ভূত ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করা ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও তার পক্ষে মতামত রাখতে দেখা যায়। তাদের অভিমত পরিবর্তনের চেষ্টা তিনি করছেন।

তার আন্তরিকতা ও চেষ্টা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। বিআরটিএ শুনলেই মানুষ ভয় পেত। দিনের পর দিন গণমাধ্যমকে পাশে রেখে অ্যাকশনে নেমে সেটিকে অনেক বদলেছেন। বিআরটিসি বাসকে নাগরিক সেবার দুয়ারে পৌঁছে দিতে তার আন্তরিকতার কমতি নেই। নগর পরিবহনে মানুষের দূর্ভোগ লাগবে তিনি যাত্রী বেশে বাসে উঠে যাচ্ছেন। একটা পরিবর্তনের ঢেউয়ের সঙ্গে নাগরিক সম্পৃক্ততার দৃশ্যমান উদ্যোগ ঘটেছে। যারা প্রকাশ্যে বা আড়ালে সমালোচনা করতেন, টিপ্পনি কাটতেন, আরামে শুয়ে শুয়ে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের বৈঠকে ফাইলে সই করতে করতে, ওবায়দুল কাদের যা করছেন তা মন্ত্রীর কাজ নয় বলে ঈর্ষার বাক্য ছুড়তেন, তাদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়ে একজন ওবায়দুল কাদের মন্ত্রীত্বের আরাম-আয়েশ হারাম করে প্রমাণ করেছেন এতদিনে তিনি নায়ক ফিল্মের অনিল কাপুরের মতো অভিনয়ে আসেননি।

মানুষের জীবনে গণমুখী সরকারের মন্ত্রী হিসেবে গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে হৃদয় ও মন দিয়ে ক্লান্তিহীন শ্রম, মেধা, যোগ্যতা আর দক্ষতা দিয়ে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনই নয়, পরিবর্তনের ঢেউ তুলে দিয়ে, মানুষকে আস্থায় নিয়ে কাজ করতে তিনি সক্ষম। তার কাটখোট্টা মেজাজ দুর্নীতিগ্রস্ত সুবিধাবাদি বা অলস-অকর্মণ্যদের জ্বালা ধরালেও মানুষের হৃদয়ে আস্থার আসন দিচ্ছে। একজন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেন বলে আইন অমান্যের ধারা যেমন হ্রাস পাচ্ছে, উন্নয়ন কর্মজজ্ঞ তরান্বিত হচ্ছে। তেমনি সরাসরি মানুষের সুবিধা-অসুবিধা জেনে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

একজন স্কুল পড়ুয়া বালিকা রাস্তায় পেয়ে তার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বলেছিল, স্কুল যাতায়াতে মেয়েদের সমস্যা কেন? পরদিন সকালেই সাস্বতীর জন্য অন্যান্য ছাত্রীদেরই নয় মহিলাদের গণপরিবহন সেবা লাভের সুযোগ ঘটেছিল। একজন মন্ত্রীর এই পরিশ্রম, এই আন্তরিকতা, এই দৌড়ঝাঁপ, এই দক্ষতা আর এতো সমীবদ্ধতার ভেতরে নিয়ে আসা সাফল্যের জন্য একজন যোগগোগমন্ত্রী, অ্যাকশন মিনিস্টার ওবায়দুল কাদেরকে অভিবাদন জানাতেই হয়। হ্যালো মিনিস্টার, ওবায়দুল কাদের আপনি এভাবেই এগিয়ে যান। সমস্যা অনেক, কাজ আপনার অনেক বাকি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর