বিএনপিতে নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্ক শুরু হয়েছে

সচল হয়ে উঠছে বিএনপি নেতাদের অনেক পুরনো মামলা। এমনকি পুরনো মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও নতুন করে সেখানে কোনো কোনো নেতার নাম আসছে। এ অবস্থায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা একটি মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলুসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ। গত সপ্তাহে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার আদেশের পরপরই নাশকতার পুরনো এক মামলায় গ্রেফতার হন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক এক মামলায় জামিনে মুক্তি পেলেও আরেক মামলায় তাকে জেলে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে শনিবার গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বৈদেশিক কূটনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক ও প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান। গ্রেফতার করা হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে। প্রতিনিয়ত আদালতের দ্বারে দ্বারে যেতে হচ্ছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। মহাসচিব ঘোষণার দিনও কয়েক ঘণ্টার জন্য জেল খাটেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করলেও বিএনপিতে মামলা ও গ্রেফতার নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। নেতা-কর্মীরা উদ্বিগ্ন। খালেদা জিয়াকে আদালতের দ্বারে দ্বারে প্রতিনিয়ত হাজির হওয়াকেও হয়রানি হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলের নেতারা জানান, দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর হঠাৎ করে এসব ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কাউন্সিলের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা আবারও সক্রিয় হওয়ায় তাদের দমনের জন্য গ্রেফতার শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য বিএনপি নেতাদের। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার হয়রানি নতুন কিছু নয়। এই ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করাই তাদের উদ্দেশ্য। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেওয়া হচ্ছে। নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই সরকার এ কৌশল করছে। কিন্তু এসব করে কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, বিএনপির চার লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ২৫ হাজার মামলার খগড় ঝুলছে। এসব মামলায় কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এখনো জেলের ঘানি টানছেন। জামিন নিয়ে বেরিয়ে এলেও দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সবসময় গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিএনপির মধ্যম সারির নেতারা আবারও বাসাবাড়িতে থাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করেই সরকারের দমনপীড়ন বাড়ছে বলে মনে করছেন নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার তার নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে বিএনপির ওপর নতুন করে গ্রেফতারের খড়গ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু নেতাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। উদ্দেশ্য, বিএনপিকে সুসংগঠিত হতে না দেওয়া। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানান, বিএনপি এখন ইউপি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত?এরই মধ্যে নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীদেরও বেকায়দায় ফেলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ অভিযানে গত ১৫ দিনে বিভিন্ন জেলায় ২০-দলীয় জোটের অন্তত সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তার আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় শনিবার সকালে সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানকে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের আগের দিন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে ফের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় নাশকতার একটি পুরনো মামলায় তাকে সালনা এলাকার নিজ বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে প্রেরণ ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। হঠাৎ করে বিএনপির ওপর সরকারের কঠোর মনোভাবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির কাউন্সিল হয়েছে। কমিটিও হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এটা সরকার হয়তো ভালোভাবে নিচ্ছে না। তাই নতুন করে দমনপীড়নের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। এভাবে নিপীড়ন চালিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে নিঃশেষ করা যাবে না বলে মন্তব্য করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপি তার আপন মহিমায় জ্বলে উঠবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর