অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা

‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…’ পুরনো জরা ও গ্লানি ঝেড়ে ফেলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি বরণ করে নেবে নতুন বছরকে। নতুন বছরের প্রথম দিনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে চলবে নানা উৎসব-আয়োজন। তাতে থাকবে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার প্রয়াস। দোকানিরা সারা বছরের হিসাব মিলিয়ে খুলবেন হালখাতা। দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা।

নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আরও অনেক রাজনৈতিক সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আগ্রহে এবারই প্রথম চালু হয়েছে বৈশাখী ভাতা, যা উৎসবে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

বাংলা ১৪২২ সালকে বিদায় এবং নতুন বছর ১৪২৩ বরণকে কেন্দ্র করে তিন পার্বত্য জেলার আদিবাসী সম্প্রদায় প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজন করেছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার।

নববর্ষের প্রথম দিনে বদলে যাবে রাজধানীর চেহারা। শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলায় বর্ণবহুল হয়ে উঠবে নগরী। বরাবরের মতো ভোর সোয়া ছ’টায় রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হবে বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা। দেশের সাম্প্রতিক সময়ের পরিবেশ তুলে ধরে ছায়ানট সভাপতি ড. সনজীদা খাতুনের বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হবে সংগঠনটির প্রভাতী অনুষ্ঠান।

‘মা ও শিশু’কে চেতনায় ধারণ করে ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তর তর হে’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনের রেখে চারুকলার শিক্ষার্থীরা সকালে বের করবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটি চারুকলা থেকে বের হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল চত্বরে ঘুরে আবার চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিবেন।

বাংলা একাডেমি সকাল ৮টায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে বর্ষবরণের সঙ্গীত দিয়ে দিবসটি উদযাপন শুরু করবে।

বর্ষবরণ উপলক্ষে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে সকাল ৭টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ । র‌্যালিতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

বৈশাখের প্রথম দিনে পুরান ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবে। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে রায়সাহেব বাজার, তাঁতি বাজার মোড়, বংশাল, সুন্দরবন স্কয়ার, নবাবপুর রোড হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবসায়ী সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ এতে অংশগ্রহণ করবে। এবারের শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘কচ্ছপ’। এছাড়াও শোভাযাত্রায় পুতুল, পাখি, বাঘের মুখোশ, পেঁচার মুখোশ, পাখির মুখোশ, রাজা-রাণীর মুখোশ, ঘোড়া ও অন্যান্য লোকজ ঐতিহ্য উপস্থাপন করা হবে।

বিকেল ৪টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে একক ও দলীয় লোকসঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’ ও সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’ পঞ্চমবারের মতো আয়োজন করবে হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। চ্যানেল আই-তে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে অনুষ্ঠানটি। এখানে থাকবে মেলার আয়োজনও।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাপ্রাঙ্গণে আয়োজন করেছে বৈশাখী মেলার। হাজারো পণ্যসামগ্রীর সমাহার ছাড়াও মেলায় আনন্দ ও বিনোদনের জন্য থাকবে নাগরদোলাসহ ঐতিহ্যবাহী নানা আয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর