কৃষি উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যাচ্ছে সরকার

টেকসই কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে কৃষি উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা (এনএটিপি-২) দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নে যাচ্ছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক, ইউএসএআইডি ও ইফাদ।
সাত বছর মেয়াদি এই কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৭১ কোটি ৪ লাখ এবং তিন উন্নয়নসহযোগী সংস্থার ঋণ ও অনুদান থেকে ১ হাজার ৬০৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এনএটিপি-২ (ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম-দ্বিতীয় পর্যায়) কর্মসূচিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মোট ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৫৭১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ হাজার ৯১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম-দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়ন শেষ হবে ২০২১ সালে। এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মত্স্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট। ১৫ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনার প্রথম অংশ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে।
সামগ্রিক কৃষির উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উত্পাদন বৃদ্ধি, কৃষিজ আয় বহুমুখীকরণ, উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, গবেষণা সম্প্রসারণ, সেবা কার্যকর ও স্থায়িত্বশীলকরণ ও উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে এই কর্মসূচির আওতায়। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের একটি প্রকল্পও গতকাল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জামালপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, রেডিমেড গার্মেন্টস, ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের রাজ্যগুলোর শিল্প হাব হিসেবে বিবেচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গ্যাস খাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এগিয়ে আসলে ভালো হবে। আগামীতে সারাদেশে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। গ্যাস আমদানি করা হলে তখন আর সমস্যা থাকবে না।
একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা; প্রাণিসম্পদ উত্পাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা; পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় ৭০ হাজার ওভারলোডেড বিতরণ ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা; গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-ভারতখালী-সাঘাটা সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনটি অনুশাসন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার বিদ্যুতের উত্পাদন যেভাবে বাড়িয়ে চলেছে এবং বিদ্যুতের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০১৮ সাল নাগাদ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় আসবে। এ ছাড়া পল্লী এলাকায় যেসব ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার আছে সেগুলো দ্রুত প্রতিস্থাপন করা এবং সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে অতিথিদের বসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর