পরিবর্তন আসুক আমাদের মানসিকতায়

সাম্প্রতিক সময়ে উপমহাদেশের কোন দলের কাছে বাংলাদেশ হেরে গেলেই তা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ দেখা যায়। বিশেষ করে ২০১৫ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। চলমান বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে অবস্থা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলোয়ারের পেজে দুই দেশের বাগবিতণ্ডা এখন অকথ্য বা অশ্রাব্য পর্যায়ে চলে গিয়েছে, যেটা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়।

গতকাল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ভারতীয় সমর্থকদের অত্যন্ত তীর্যক ও অপ্রকাশ্য মন্তব্য করতে দেখা যায়। প্রত্যুত্তরে বাংলাদেশের সমর্থকরাও একই ধরনের অকথ্য মন্তব্য করতে থাকেন। এর আগে এশিয়া কাপে পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের সমর্কথকদের সাথেও একই পরিস্থিতির তৈরি হয়। এছাড়াও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচেও নেপালী সমর্থকদের সাথে এই বাকযুদ্ধ লক্ষ্য করা গিয়েছে। যদিও এডমিন থেকে অনেককেই ব্যান করা হয়েছে, তবুও সংখ্যায় তারা এত বেশি যে কিছু অংশ থেকেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ অনেকটাই বদলে গেছে, টাইগাররা এখন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি। বাংলাদেশ এখন ভাল খেলে বলেই অন্য দেশের সমর্থকরা বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবে, আমাদের বিপক্ষে তারা এখন জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু তাই বলে আমাদেরও ভাষা নির্বাচনে সংযত থাকা উচিত। ক্রিকেটের বদলে যাওয়ার পাশাপাশি একটা ‘স্মার্ট ক্রিকেটিং ন্যাশন’ হিসেবেও আমাদের আত্মপ্রকাশ করার এখনই সময়। সে কারণে আমাদের কখনই অন্য দেশের সমর্থকদের সাথে অশ্রাব্য বাক্য বাণে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। আমরা অবশ্যই খেলা অথবা খেলোয়ারদের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারি, কিন্তু তাই বলে কুরুচিপূর্ণ কোন বক্তব্য অবশ্যই না। আবেগ থাকবেই, তবে পার্শ্ববর্তী দেশের সমর্থকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটাই শ্রেয়।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মাশরাফিকে নিয়ে সুনীল গাভাস্কারের মন্তব্যের পর অনেকেই এর পক্ষে বিপক্ষে মত দিয়েছেন। অনেকে আবার ভাষার শেষ সীমাও অতিক্রম করে গিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর বাজে শট সিলেশনের পরও অনেকে তাদের নিয়ে খারাপ মন্তব্য করতে থাকেন। সমালোচনা বা গঠনমূলক আলোচনা চলতেই পারে, তবে সবারই উচিত মন্তব্য প্রকাশে সংযত থাকা। এর আগেও সাকিব কিংবা তামিমের ফর্মহীনতায়ও তাদের শুনতে হয়েছে খারাপ মন্তব্য। কিছু ভাল জয়ের পর যেমন কোন দল বা খেলোয়ারকে নিয়ে সহসাই অত্যুক্তি করা উচিত না, তেমনি আবার হেরে গেলেই সেই দল বা খেলোয়ারকে যা নয় তাই মন্তব্য করাও অনুচিত। খেলায় ভুল বা পরাজয় ঘটতেই পারে, আলোচনা-সমালোচনাও করা যাবে না তাও বলছি না। তবে সব কিছুই একটা নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থাকাটাই বাঞ্ছনীয়।

বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে আমরা এখন যথেষ্টই শক্তিশালী দল। আশা করি, সামনে আমরা আরও এগিয়ে যাব, একদিন হয়তো আমাদেরই হাতে থাকবে বিশ্বকাপ ট্রফি। কিন্তু খেলার উন্নতির পাশাপাশি সমর্থক হিসেবে আমাদের মানসিকতারও উন্নতি প্রয়োজন। ধীরে ধীরে আমরা যেন একটি সভ্য ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ক্রিকেট জাতি হিসেবে পরিগণিত হতে পারি, এখন থেকেই তার চর্চা করাটা দরকার। আমাদের মনে রাখা উচিত, সম্মান দিলেই সেটা পাওয়া সম্ভব। শেষমেষ প্রত্যাশা এটাই যে, খেলায় উন্নতির পাশাপাশি সমর্থক ও জাতি হিসেবেও আমরা বিশ্ব অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হব। সে প্রত্যাশার প্রাপ্তির অপেক্ষায় রইলাম!

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর