বিএনপির মহাসচিব কবে

বিএনপিতে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব নেই ছয় বছর হয়ে গেলো। কথা উঠেছিল জাতীয় সম্মেলনে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পাশাপাশি মহাসচিব পদেও নির্বাচন হবে। কিন্তু হলো না।

কাউন্সিলের পর চারদিন হয়ে গেলো, এখনও জানা গেলো না বিএনপির মহাসচিব পদ ভারমুক্ত হবে কি না। মির্জা ফখরুলই পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হচ্ছেন কি না অন্য কেউ এই দায়িত্ব পাচ্ছেন।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, নেতাদের মধ্যে একটি অংশ মির্জা ফখরুলকে ঠেকিয়ে রাখতে চাইছেন। অভিযোগ উঠেছে- কাউন্সিলের উদ্বোধনের সময় দলের একটি পক্ষ চেয়ারপারসনের কাছ থেকে মির্জা ফখরুলকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টায় ছিলেন তারা। যে কারণে মঞ্চের দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে শীর্ষ দুই নেতা জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেছেন।

বিএনপির একাংশের নেতাদের অভিযোগ, ইচ্ছা করেই মঞ্চের দুই পাশে পতাকা তোলার সময় দলের শীর্ষ দুই নেতাকে দুই পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে কাউন্সিল উদ্বোধনের সময় বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চের পূর্ব দিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন। আর মির্জা ফখরুল দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন পশ্চিমপ্রান্তে। যে কারণে গণমাধ্যমে উদ্বোধনের ভালো ছবি আসেনি।

কাউন্সিলের উদ্বোধনের সময় খালেদা জিয়ার পাশে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে দেখা গেছে। অথচ আগে কাউন্সিল অনুষ্ঠানে দলীয় প্রধান এবং মহাসচিব পাশাপাশি থেকেই জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করতেন।

কাউন্সিলের সময় এ নিয়ে কোনো কথা না হলেও গত দুদিন ধরে দলের বিভিন্ন পর‌্যায়ে বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে।

মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ এরজন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে কথা বলছেন। তিনি কাউন্সিলের প্রচার-প্রকাশনা বিভাগে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কাউন্সিলের দিনে বেশ সোচ্চার ছিলেন। মূল মঞ্চে তাকে এবং সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গোটা সময় ব্যস্ত দেখা গেছে।

এসব বিষয়ে পক্ষ থেকে গয়েশ্বর রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি টেলিফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি বিষয়টিকে এমন করে দেখতে চাই না। যদি কেউ এমনটা চিন্তা করে এমনটা কাজ করে থাকেন তা হবে দুঃখজনক।এটা দলের জন্য ক্ষতিকর’। এই নেতা মনে করেন, পুরো নির্বাহী কমিটি ঘোষণায় সময় লাগলেও এর আগেই মহাসচিবের সমাধান হতে পারে।

গত শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির জাতীয় সম্মেলনে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচিত করার পাশাপাশি গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু সংশোধনীতে অনুমোদন দেয়া হয়।

একইসঙ্গে কণ্ঠভোটে খালেদা জিয়াকে মহাসচিব পদসহ পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেয়া হয়।দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কাউন্সিলদের বেশিরভাগের বক্তব্যে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে ভারমুক্ত করার আহ্বান ছিল।

তবে কাউন্সিলে মহাসচিব পদে অতীতে প্রার্থী হওয়া এবং এইদিনে এইপদের নেতার নাম ঘোষণার রেকর্ড নেই বলেও বক্তব্য দেয়া হয়। যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এখন অনেক ক্লান্ত। তাই তাকে একটু সময় দিয়ে ভেবেচিন্তে কমিটি করার জন্য সময় দেয়া উচিত। আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভুমিকা রাখতে পারেন এমন কাউকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দিবেন’।

যুবদল সভাপতির এই বক্তব্যের সময় কাউন্সিল প্রাঙ্গণে বসা নেতাকর্মীদের অনেকে ‘এই তো আবার মহাসচিব ঝুলে গেল’ এমনটা বলতে শোনা গেছে।’ এমনও শোনা গেছে, ‘মহাসচিব নিয়ে আলাল ভাইকে দিয়ে বলানো হলো। শিগগির আর হচ্ছে না।’

যে কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটির সঙ্গে মহাসচিবের পদটিও ঝুলে গেলো বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘যত শিগগির সম্ভব তিনি (খালেদা) নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করবেন।অতি অল্প সময়ের মধ্যে করবেন’।

বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস মির্জা ফখরুল সব ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার দায়িত্ব পালনকালেই তো সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিল হলো। সে হিসেবে তারই সম্ভাবনা বেশি।’

মহাসচিব পদ নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে নানা গুঞ্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কেউ এমন চিন্তা করলে তা হবে দল ও ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর’।

যদিও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, কাউন্সিল চেয়ারপারসনকে নির্বাহী কমিটি করার সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি টেলিফোনে বলেন,‘যেহেতু মহাসচিব পদে নির্বাচন হচ্ছে সেহেতু কাউন্সিলে শুধু একটি পদের ঘোষণা দেয়ার সুযোগ ছিল না। আশা করি শিগগিরই কমিটি চূড়ান্ত করা হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর