কোনো দেশে রাষ্ট্রধর্মের কী দরকার আশীষ চক্রবর্ত্তী

আশীষ চক্রবর্ত্তী… সাংবাদিকের ডায়েরিকোনো দেশে রাষ্ট্রধর্মের কী দরকার?বাংলাদেশে সমস্যা রাষ্ট্রধর্ম নয়, মানসিকতামৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ একটি দুঃখজনক ভুলটেকসই উন্নয়নে প্রয়োজন টেকসই রাজনৈতিক ব্যবস্থাবাংলাদেশ কি পারবে তার সাফল্য ধরে রাখতে?এমডিজি থেকে এসডিজি: সমস্যা নীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের আগে দরকার ‘সমতায়ন’ঢাকার মতো মেগাসিটিতে যানজট রোখার উপায়ঢাকাবাসী হাঁটুন, সাইকেল চালানঢাকার উন্নয়ন ও কিছু অপ্রিয় কথাএকজন সাহসী মানুষ, যাঁকে ভোলা যাবে নাঅভিজিৎ-রা হারলে হেরে যাবে বাংলাদেশশান্তিপ্রিয় মুসলমানদের দেশে মৌলবাদের ছায়াযে ছবি বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাবায়সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে এক্ষুনিধিক্কার তাদের, যারা সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাইতেও ভয় পায়দুর্নীতির ওষুধ হলো সমৃদ্ধি আর সুশাসন বাংলাদেশে সবসময় জনসংখ্যা এবং দুর্নীতি বাড়ে বাঙালি ও বাংলা: প্রান্তিক জাতি, প্রান্তিক ভাষামাত্র তিন বছরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিভৎসতাপশুরাজ্যে হাসির পাত্র বাংলাদেশপ্রগতি কি শুধু মানুষের জন্য?শাস্তি বকাবকি নয়, শিশুর সঙ্গে গল্প করুন, বন্ধু হনআমরা ‘শিশু’ থেকে যত ‘বড়’ হই, ততই কি নিষ্ঠুর হই?জার্মানিতে ছোটদের মারধর প্রায় উঠে গেছেশীতে শীত নেই – কারণ জলবায়ু পরিবর্তন?শুধু আইন নয়, নারীর সিদ্ধান্তকে সম্মান দিতে হবে‘বিয়ে একটা খেলা, ডিভোর্স যার অন্ত’তালাকই যেন একমাত্র সমাধান না হয়বন্দুকবাজদের রাজ্যে বুদ্ধিজীবীদের বিপদপার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও বাঙালি সেটলারদের আগ্রাসন সামরিক বাহিনী কি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিচ্ছে?ব্লগার, বিদেশি, পুলিশের পর আক্রান্ত সেনা সদস্যরাজনমতকে উপেক্ষা করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় সরকারদেশত্যাগী এক নারী ব্লগারের কথাবাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা ভয়ংকরভাবে নারী বিদ্বেষী শিল্পীর মতো মেয়েরাই বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রার প্রতীকজলবায়ু পরিবর্তনের শিকার নারী, প্রতিবাদীও তাঁরাবাংলাদেশে ব্লগার, বিদেশি হত্যা কেন হচ্ছে?শাহবাগের চেতনা আজও প্রদীপ্ত কোটি বাঙালির হৃদয়ে

বাংলাদেশে কথায় কথায় আসে সংবিধানের প্রসঙ্গ৷ আর আসে ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ৷ সংবিধানেরও ধর্মের প্রতি ভীষণ পক্ষপাত৷ ‘রাষ্ট্রধর্ম’ করে পক্ষপাতিত্বটা দেখানো হয়েছে ইসলামের প্রতি৷ আচ্ছা, কোনো দেশে রাষ্ট্রধর্মের কী দরকার?

ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীকী ছবি

শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক দেশের সংবিধানেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রধর্মের উল্লেখ আছে৷ আমি মনে করি, সংখ্যাগুরু ধর্মভীরু মানুষকে খুশি রাখতেই তা করা হয়েছে৷ সবই ক্ষমতা বা ভোটের খেলার অংশ৷ বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের অনেক দেশেই বিশেষ কোনো ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘তোমরা বাপু সব সময় পেছনের কাতারে থাকবে, কারণ, এ দেশে তোমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক৷’

বেশির ভাগ রাজনীতিবিদই কথাটা সরাসরি মানতে চান না৷ কথার মারপ্যাঁচে তাঁরা বোঝাতে চান, ‘সংবিধানে যা-ই লেখা থাকুক, বাংলাদেশে সবাই সমান৷’

সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷

এর চেয়ে হাস্যকর কথা হয় কিছু? দেশে ভোট হলে কারো-না-কারো মার খাবেই সংখ্যালঘু৷ জামায়াত-বিএনপি মারবে ভোট দেয়নি বলে, হেরে গেলে কোনো কোনো আওয়ামী লীগ নেতাও সমর্থকদের লেলিয়ে দিতে দেরি করবেন না৷ দিনের আলোয়, রাতের আঁধারে ভাঙবে, পুড়বে বাড়ি-ঘর-মন্দির৷ নারীর সম্ভ্রমহানির যাতনা লুকিয়ে সময় বুঝে দেশ ছাড়বে শত পরিবার৷ ভোট না হলেও রেহাই নেই৷ সংখ্যালঘুর সম্পত্তি আছে না? তা করায়ত্ত করতেও সুযোগসন্ধানীরা সদা তৎপর৷ জামায়াত-বিএনপি, আওয়ামী লীগ এমনকি বামও শক্তি থাকলে আজকাল এ সুযোগ খুব একটা ছাড়ে না৷

ভোট বা সম্পত্তি না থাকলেই বা কী! যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বা ধর্ম অবমাননার গুজবও সংখ্যাগুরুদের ওপর হামলার অজুহাত হিসেবে যথেষ্ট৷ একবার-দু’বার নয়, বহুবার দেখা গেছে৷

তবুও নাকি সবাই সমান৷ এক সময় সংখ্যায় প্রায় কাছাকাছি ছিল, এখন কমতে কমতে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কোনোরকমে টিকে আছে ১০ ভাগ সংখ্যালঘু৷ তারপরও কোনো কোনো রাজনীতিবিদ, কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীকে বলতে শোনা যায়, ‘ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হতে পারে, তবে বাংলাদেশে আসলে সবাই সমান৷’ এর চেয়ে বেদনাদায়ক প্রহসন আর কিছু হতে পারে!

সংখ্যালঘু বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই সুবিধাবঞ্চিত৷ কোথাও কম, কোথাও হয়ত একটু বা অনেক বেশি৷ যেসব দেশে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ আছে কিন্তু গণতন্ত্র নেই, সেসব দেশে তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ৷

রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে অনেকেই ‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশ’ ভারতের দৃষ্টান্ত টেনে জানতে চান, ‘সেখানেও কি সংখ্যালঘুরা খুব সুখে আছে?’ না, নেই৷ তবে সংবিধান ‘বিমাতার মতো’ নয় বলে, আদালত এখনো সেখানে ‘শেষ আশ্রয়’ হয় বলে সংখ্যায় কম হলেও এখনো সব সম্প্রদায়ের মানুষের পায়ের নীচে মাটি আছে৷ নিজেকে সমান ভাবতে গেলে পায়ের নীচে সমতল ভূমিটুকু তো অন্তত থাকা চাই!

‘রাষ্ট্রধর্ম’ মনোজগতে ওই ভূমিটাকেই উঁচু-নীচু করে দেয়৷ একজনের জন্য যেন সাজানো থাকে পোডিয়ামের উচ্চতম স্থান, বাকিদের দাঁড়াতে হয় নীচে৷ এভাবে ওপরে-নীচে দাঁড় করিয়ে কেউ যদি বলে, ‘সবাই সমান’, তাহলে কেমন লাগবে? পুরো ব্যাপারটাকেই ভণ্ডামি মনে হবে না?

সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ রেখে সবার সমান অধিকারের কথা বলা সেরকমই ব্যাপার৷ যেন দারোগা সাহেব সিপাহীকে ডেকে বলছেন, ‘ওহে দেখো তো, ওখানে কী হয়েছে? তিন-চারটে ছেলেকে দেখতে পাচ্ছো তো? মাঝের ওই ছেলেটি কিন্তু আমার সন্তান৷’ সিপাহী তারপর কোন ছেলের সঙ্গে কী আচরণ করতে পারে তা একটা বোকাও বোঝে৷

আমি বুঝি না, সিপাহীকে যদি দারোগা সাহেব যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিতেই চান, তাহলে ‘ওই ছেলেটি আমার’ বলার দরকার কী! এটাও বুঝি না, কোনো রাষ্ট্র যদি সব মানুষের প্রতি সমান সহানুভূতিশীল থাকতেই চায় তাহলে সংবিধানে ‘ওই ধর্মটি আমার’ লিখে দেয়ারই বা কী দরকার৷ – ডয়চে ভেলে

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর