জাতীয় কাউন্সিল বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছে বড় ধরনের রদবদল

আগামীকাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির বহু প্রত্যাশিত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। নতুন করে দলকে সংগঠিত করে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র প্রত্যয় রয়েছে তাদের। সে লক্ষ্যে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দলটি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় মাঠে থাকা নেতাদের ‘ভূমিকা’ মূল্যায়ন করে এ পদবিন্যাস ঘটছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ত্যাগী ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হচ্ছে। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও তরুণদের সাহসী কর্মতৎপরতা কাজে লাগাতে এবার নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে আসবে অনেক ‘নতুন মুখ’।

বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছে বড় ধরনের রদবদল। পদ আঁকড়ে থাকা সুবিধাবাদী নেতাদের সরিয়ে সেখানে অভিজ্ঞ, ত্যাগী ও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের জায়গা করে দেয়ার চিন্তা করছে দলের হাই কমান্ড। এই কাউন্সিলেই ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সবশেষ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ৫ম জাতীয় কাউন্সিল। ৬ বছর বাদে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল।

ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেগম খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপার্সন ও তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলে এবারের কাউন্সিলে প্রায় ৫ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হতে যাচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন,‘মির্জা ফখরুল অনেক দিন জেল খেটেছেন। বার বার গ্রেফতার হয়েছেন। শারীরিক ঝুঁকি নিয়েও রাজনীতি করছেন। ভালো ইমেজ আছে। তো আমরা আশা করি তাকে ভারমুক্ত করা হবে।’

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে আসছে পরিবর্তন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া, অসুস্থ ও মৃতদের পদে আসছে নতুন মুখ। এসব পদে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুল্লাহ-আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এম ওসমান ফারুক ও বেগম সেলিমা রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।

সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব পদে আসতে পারেন রুহুল কবির রিজভী। যুগ্ম-মহাসচিব পদে শোনা যাচ্ছে ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং নাজিমউদ্দিন আলমসহ কয়েকজনের নাম। দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, পদায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে নেতাদের যোগ্যতা ও অতীত কর্মকাণ্ড।

হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিনজন ইতোমধ্যে মৃত্যু বরণ করেছেন, দুইজন অসুস্থ। যার ফলে নতুন মুখ আসা স্বাভাবিক। কারা আসবে সেটা নির্ধারণ করবেন আমাদের কাউন্সিলররা।’

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘বিএনপিকে অবশ্যই তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে একটি বেগবান কমিটি হবে। আর যারা নেতৃত্ব দেবেন তারা সব পরীক্ষিত নেতা-কর্মী হবেন।’

ভাইস চেয়ারম্যান পদে দেখা যেতে পারে মো. শাহজাহান, মিজানুর রহমান মিনু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক এম এ মান্নান, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নুল আবদীন ফারুক, আব্দুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, নূরে আরা সাফা ও গাজী মাজহারুল আনোয়ারসহ কয়েকজনকে।

হান্নান শাহ আরো বলেন, ‘দলে যারা বয়ঃজৈষ্ঠ আছেন। যাদের দীর্ঘদিন দলের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে জ্ঞান আছে তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনে পরামর্শ নেবেন।’

উপদেষ্টা পরিষদে থাকতে পারেন অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ ও ডা. জাফরুল্লাহ। কাউন্সিলে প্রভাবশালী অথচ বিতর্কিত কয়েকজন নেতা সাইডবেঞ্চে চলে যেতে পারেন বলেও আভাস দিলেন দায়িত্বশীল এই নেতা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর