সবচেয়ে ক্ষুদ্রায়তনের প্রাচীন মসজিদ

মসজিদটি এখন নেই, আছে ধ্বংসাবশেষ। পাবনার চাটমোহর পৌরসভার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল নদীপাড়ের বিলচলন ইউনিয়নের একটি বধিষ্ণু গ্রাম বোঁথড়। সেই গ্রামেই এই প্রাচীন মসজিদটি। ছাদবিহীন এ মসজিদটির মূল কাঠামো স্বযতেœ অক্ষুন্ন রেখেছেন এখনো গ্রামবাসী। তবে বর্ধিত অংশ নির্মাণ করে সেখানে এলাকার মুসুল্লিরা নামাজ আদায় করছেন।

একসাথে মাত্র ৫ জন মুসুল্লির বেশি নামাজ পড়া যাবে না। এমন দৈর্ঘ্য-প্রস্থের এক প্রাচীনতম মসজিদের ভগ্ন অবকাঠামো এখনো দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। এলাকাবাসীর দাবী মতে, মসজিদটি দেশের সবেচেয়ে ক্ষুদ্রতম ও প্রাচীন। পাঠান আমলে মসজিদটির নির্মানকাল বলে ধারণা এলাকাবাসীর।

চাটমোহর পৌর সদরের বড়বাড়ীর মোড় থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ মসজিদটি বর্তমানে ‘শেহরোজ জামে মসজিদ’ নামে পরিচিত। মসজিদটির সংস্কার করে নামাজ উপযোগী করতে আর্থিক সহায়তা করেন চাটমোহরে এক সময় কর্মরত মিজানুর রহমান নামের ধর্মপ্রাণ একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি তার ছেলের নামে মসজিদটির নামকরণ করে গেছেন।

বিলচলন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার ধারণা বাংলাদেশের আর কোথাও সম্ভবতঃ এতো ছোট আয়তনের মসজিদ নেই।’

ওই এলাকার বাসিন্দা শহরের স্টার হোটেলের মালিক আজিম উদ্দিন দাবী করেন বিশ্বে এত ক্ষুদ্রায়তনের মসজিদ আছে কিনা তা নিয়েও আমরা সন্দিহান। প্রবহমান কালের ধর্মীয় ঐতিহ্যের স্মারক এ মসজিদটির ভিতরের দৈর্ঘ্য ৯ ফুট (৬ হাত) ও প্রস্থ সাড়ে ৪ ফুট (৩ হাত)। দেয়ালের পুরুত্ব দেড় ফুটের মতো। চিকন ছোট লাল জাফরি ইট ও চুন সুঁড়কির মিশ্রণে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদটির দেয়াল গাত্রে রয়েছে স্থাপত্যকলার নকশা।

মসজিদটি কখন, কারা নির্মাণ করতে পারেন এমন তথ্য জানতে চাইলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হযরত আলী নাম ফলক সম্বলিত পুরাতন একটি সাইনবোর্ড দেখান। সেখানে লেখা রয়েছে পাঠান যুগে নির্মিত এ মসজিদটির বয়স ছয় শত বছর।

মসজিদটির সাবেক সভাপতি বোঁথড় গ্রামের ৮৩ বছরের বৃদ্ধ সোহরাব মোল্লা বলেন, ‘পূর্বে মসজিদটি জঙ্গলে ঢাকা পড়েছিল। ভয়ে কেউ এদিকে আসতোই না। স্বাধীনতার পর এর চার পাশ পরিস্কার করে মূল মসজিদের পাশে টিনের ছোট ঘর তোলা হয় নামাজ আদায়ের জন্য। আমার দেখাদেখি ধীরে ধীরে অন্য মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় শুরু করেন। এখন ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য ২৩ ফুট প্রস্থ পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।’

মসজিদ বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ আলী বলেন, ‘ডিএস রেকর্ডে মূল মসজিদের জায়গার পরিমাণ দুই শতাংশ। এখন ২৬ শতাংশ জায়গা রয়েছে মসজিদটির। পূর্বে মসজিদটির নাম ছিল ‘পিরপল’ মসজিদ।

২০০৬ সালে চাটমোহরে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের অর্থ সহায়তায় প্রাচীন পুরাকীর্তি অক্ষুন্ন রেখে বর্ধিত অংশ সংস্কার করা হয়েছে। তার ছেলে ‘শেহরোজ’ এর নামে মসজিদটির নামকরণ করা হেয়েছে।

তিনি দাবী করেন, এটা যে দেশের ক্ষুদ্রতম ও প্রাচীন মসজিদ তাতে কোন সন্দেহ নেই। মসজিদটি সম্পর্কে গবেষণা ও প্রাচীন এ প্রতœ নিদর্শন সংরক্ষণে সরকারের হস্তক্ষেপও কামনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর