গুরুত্ব পাচ্ছে চা গবেষণা চা শিল্পের উন্নয়নে ৭ কোটি টাকার প্রকল্প

চা শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ খাতের উন্নয়নে ‘বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট টেকসই ও শক্তিশালীকরণ’ নামে ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, ব্যয় বিভাজন ও বিভিন্ন করণীয় বিষয়গুলো যাচাই করেই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের অনুদান ৬ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশ চা বোর্ড দেবে ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, বাংলাদেশে চা শিল্পের হালনাগাদ বা নতুন প্রবর্তিত প্রযুক্তির ব্যবহার হবে। এ ছাড়া উচ্চফলনশীল ক্লোন চা এর দ্রুত বংশবিস্তার বাড়ানোর লক্ষ্যে ভিট্রোকালচার প্রটোকলের উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি চা শ্রমিক স্বল্পতার কারণে প্রুনিং (পাতা সংগ্রহের পর গাছ ছেঁটে ছোট রাখা) ও প্লাকিং (গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ) কার্যক্রম যন্ত্রিকভাবে শুরু করে বিদ্যমান শ্রম শক্তিকে টেকসই করা হবে।

এ ছাড়া প্রুনিং লিটার, আগাছা ও চা বর্জকে জৈব পদ্ধতিতে কেঁচো ব্যবহার করে উচ্চমানসম্পন্ন জৈব সারে পরিণত করা হবে। শুষ্ক মৌসুমে নতুন চা গাছের চারা ও নার্সারি রক্ষা এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রাকৃতিক উৎস হতে পাওয়া পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার, নালা ইত্যাদি তৈরী করা হবে।

এ প্রকল্পের আওতায়, বিজ্ঞানীদের দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, উন্নতমানের বেশ কয়েকটি ল্যাবরেটরি স্থাপন ও যন্ত্রাংশ কেনা হবে এবং বেশ কিছু যানবাহন কেনা হবে। ফলে দেশের চা গবেষণা ইনস্টিটিউট শক্তিশালী হবে এবং চা শিল্পে আমল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তবে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি পাওয়া গেছে, যা চা বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। ওই বিচ্যুতিগুলোর সমাধান হলেই ‘বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট টেকসই ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে টেকসই ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের যাচাই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেছে তা সমাধান হলেই তা অনুমোদন দেওয়া হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। এ সময় বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য মজিবুল হক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের উপ-প্রধান মসলে উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী প্রধান লুৎফর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চা শিল্পের উন্নয়নে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল প্রকার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আজকের বৈঠকে যাচাই-বাছাইয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরুর বিষয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও কিছু বিচ্যুতি রয়েছে, তা সমাধান হলেই শিগগিরই প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশে চা শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে। এতে দেশে চা উৎপাদনের পরিমান বাড়বে, আমদানি কমবে। সার্বিকভাবে দেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বালম্বি হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, ব্রাহ্মবাড়িয়া পঞ্চগড় এ সাত জেলায় চা বাগান রয়েছে। বর্তমানে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে আবাদী জমির পরিমাণ ৫৮ হাজার ৭১৯ হেক্টোর।

বিশ্বব্যাপী চা উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ দশম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৩ সালে ৬৬.২৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। লক্ষ্যমাত্র ছিল ৬০.৫০ মিলিয়ন কেজি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ মিলিয়নের বেশি উৎপাদন হয়। ওই বছর দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার হয় ৬৪ মিলিয়ন কেজি।

২০১৪ সালে ৬৩.৮৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। লক্ষ্যমাত্র ছিল ৬২ মিলিয়ন কেজি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ মিলিয়নের বেশি উৎপাদন হয়। তবে ওই বছর দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার হয় ৬৭.১৭ মিলিয়ন কেজি।

২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৫৫.৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। সারা বছরের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৬৪ মিলিয়ন কেজি।

এদিকে বিশ্বে চা উৎপাদনের দিক থেকে প্রথম স্থানের রয়েছে ভারত। দেশটি বছরে ১ হাজার ৭৯০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কেনিয়া। দেশটিতে বছরে ৩৭০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বছরে ৩২৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর