সরকারি চাকুরেদের জন্য মিরপুরে ২৮৮টি ফ্ল্যাট

সরকারি চাকুরেদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে নির্মিত হচ্ছে ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট। এর মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যার সমাধান ও তাদের কাছ থেকে উন্নত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে বলে আশা করছে সরকার। ফ্ল্যাটগুলো তৈরিতে মোট ব্যয় হবে ১২০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

তবে ৬৫০ ফুট আয়তনের ফ্ল্যাট তৈরির ক্ষেত্রে ইতোপূর্বে মতিঝিল কলোনিতে বহুতল ভবন নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত নকশা অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অব্যবহৃত, অল্প ব্যবহৃত জমিতে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক সংকট সমাধানের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মিরপুর-৬ নং সেক্টরে অবস্থিত গণপূর্ত অধিদফতরের ই/এম ডিভিশনের স্টাফ কোয়ার্টারের পাকা, সেমি পাকা ও টিনশেড ভবন ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

সূত্রটি আরও জানায়, সরকারি চাকরিজীবীদের ঢাকা শহরে আবাসন সমস্যা একটি প্রকট সমস্যা। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত আবাসন পরিদফতর চাহিদা অনুযায়ী আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে সরকারি কর্মকর্তারা অধিকাংশই তাদের ক্ষমতার বাইরে অধিক মূল্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন নিম্নমানের ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। এতে তাদের অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছেন— যা তাদের কর্মদক্ষতা হ্রাস করছে।

বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ জন। এর মধ্যে প্রায় ৯ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ হাজার ৫২টি সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদফতরের প্রায় ৫ হাজার ৬২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। তার মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ ৩৭৫ জন চাকরিজীবীর জন্য সরকারিভাবে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।

সরকারি আবাসন পরিদফতরের পরিকল্পনার অনুযায়ী, ঢাকা শহরে সরকারি আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য বিদ্যমান ১৩ হাজার ৫২টি ফ্ল্যাট হতে স্বল্প মেয়াদে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৬ হাজার ৩২০টিতে, মধ্য মেয়াদে ২০১৭ সালের মধ্যে ১৬ হাজার ৯৬৮টিতে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ২০১৯ সালের মধ্যে ১৮ হাজার ২৭৬টিতে উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকার মিরপুরে গণপূর্ত অধিদফতরের ই/এম-৮ স্টাফ কোয়ার্টার কলোনির মধ্যে কিছু ৩ তলা, ১ তলা, সেমি পাকা ও টিনশেড ভবন রয়েছে। এগুলোতে ১৫০ জন কর্মচারী বাস করছেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অনেক অফিস ও আবাসিক কার্যক্রম সরকারি জমিতে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এ স্থানে গণপূর্ত অধিদফতরের কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল। এ অবস্থায় গণপূর্ত অধিদফতরের স্টাফ কোয়ার্টারের ২ দশমিক ৪০ একর জায়গায় দুটি ১৩ তলা ভবনে প্রতিটি ৮০০ বর্গফুটের ১৫০টি, একটি ১৩ তলা ভবনে প্রতিটি ৬৫০ বর্গফুটের ৭২টি এবং একটি ১২ তলা ভবনে প্রতিটি এক হাজার ফুট আয়তনের ৬৬টি অর্থাৎ মোট ২৮৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য এস এম গোলাম ফারুক পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হলে গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা হ্রাস করা সম্ভব হবে। তাই এ-সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশগুলো প্রতিপালন করে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পুনরায় পাঠায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরবর্তীকালে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমাদনের জন্য এটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে গণপূর্ত অধিদফতর।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর