চার বছরে সাগর-রুনি হত্যা তদন্ত ‘শূন্য’

প্রায় কোটি টাকা খরচ করেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুনের ঘটনার চার বছরের তদন্তের ফলাফল এখন পর্যন্ত ‘শূন্য’। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ, খুনিদের গ্রেফতার কিংবা চিহ্নিত কিছুই করতে পারেনি মামলা তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। এরই মধ্যে র‌্যাবে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছেন। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদকে। এর আগের তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি মোহাম্মদ জাফর উল্লাহ র‌্যাব থেকে মাতৃবাহিনীতে ফিরে যাওয়ায় নতুন কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় বলে র‌্যাবের পদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে তদন্তে কোনো অগ্রগতি না দেখে বিচারের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটি তারা জানেন না। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর মঙ্গলবার মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তারা এই মামলার তদন্ত নিয়ে একেবারেই হতাশ। এখন শুধু সাগর-রুনির একমাত্র উত্তরসূরি মাহীর সারওয়ার মেঘকে নিয়ে তাদের চিন্তা। তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদের তথ্য দিয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ মামলায় গ্রেফতার ৮ জনের মধ্যে ৩ জন জামিনে রয়েছেন। এরা হলেন স্কলাসটিকা স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর রহমান, সাগর-রুনির ফ্ল্যাটের দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল ও ডা. নিতাই হত্যা মামলার আসামি মিন্টু। এই মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন ডা. নিতাই হত্যা মামলার আসামি কামরুল হাসান অরুণ, পেশাদার ডাকাত রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, আবু সাঈদ ও সাগর-রুনির অ্যাপার্টমেন্টের আরেক সিকিউরিটি গার্ড হুমায়ুন ওরফে এনামুল হক। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হওয়ার পর ১৬ জানুয়ারি আদালতে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আরো একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ৪০টি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে র‌্যাব। তদন্তে এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২, রশিদ লজ অ্যাপার্টমেন্টের ৫ম তলার ফ্ল্যাটে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলানগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতের নির্দেশে র‌্যাব তদন্ত করছে।
র‌্যাবে মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা অন্তত অর্ধশত আলামতের ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাওয়া রিপোর্টগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয় যে, ঘাতক যারাই হোক দুটি পৃথক ডিএনএ নমুনার সঙ্গে ঘাতকদের ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো ওই ডিএনএ নমুনার রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, এ দুটি ডিএনএ নমুনা বহনকারীরাই ঘাতক (কিলার)। দুই ডিএনএ নমুনা জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারে ডিএনএ নমুনা থাকলে, তার সঙ্গে মিলিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ওই পরীক্ষাগার।
কেমন আছে মেঘ: রাজধানীর ইন্দিরা রোডের ৬৬/১২ নম্বর বাড়িতে মামার সঙ্গে বেড়ে উঠছে মেঘ। বাবা-মাকে হারানোর চার বছর পর মেঘ এখন গুলশানের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। মঙ্গলবার ইন্দিরা রোডের বাড়িতে সাংবাদিকরা যান মেঘের খোঁজখবর নিতে। কেমন আছ জিজ্ঞেস করতেই জবাব মিলল, ‘ভালো’। মেঘ জানায়, এখন ভর্তি হয়েছে গুলশানের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) স্কুলে। আগে পড়ত সেন্ট জোসেফ স্কুলে। বড় হয়ে কী হতে চাও? জানতে চাইলে মেঘ বলে, ‘ক্রিকেটার’। প্রিয় ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার, আর বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। তবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে থাকা সাকিব আল হাসানকে। ঘরে খেলা দেখার চেয়ে মাঠে খেলা দেখতেই তার বেশি ভালো লাগে। বলল, ‘আব্বু আর মামণিকে অনেক মিস করি, ওদের অনেক ভালোবাসি।’ চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। তারপর অনেকটা সময় একদম চুপ।

মানবকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর