সর্বময় ক্ষমতা পাচ্ছেন তারেক জিয়া

বিএনপির গঠনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ধারায় পরিবর্তন আসছে। চেয়ারপারসনের প্রায় সমপর্যায়ের ক্ষমতা দিয়ে ‘কো-চেয়ারম্যান’ পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতেই কো-চেয়ারম্যান এ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদ বিলুপ্ত হবে।

মূলত দলে তারেক রহমানে ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানও কো-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টির ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। আসন্ন ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে এ সংশোধনীর অনুমোদন দেয়া হবে।

এবারের সংশোধনীতে নির্বাহী কমিটির আকার কমাতে কেউ কেউ প্রস্তাব করলেও তা কমছে না। বরং বাড়ানো হচ্ছে দফতরের পরিধি। নেতৃত্ব বিকাশের স্বার্থে এক ব্যক্তির এক পদ এই বিধানটিও এবার গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। বর্তমানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ থাকলেও তা পরিবর্তন করে বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ করা হবে। গঠনতন্ত্র সংশোধনের সঙ্গে জড়িত নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে দলের গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন আনা হয়। বিগত কাউন্সিলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। আগামী কাউন্সিলেও নেতাকর্মীদের চাহিদা ও সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম কাউন্সিল। ওই কাউন্সিলে দলটির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। নির্বাহী কমিটির সদস্য ২৫১ থেকে বাড়িয়ে ৩৮৬ করা হয়। তারেক রহমানের জন্য গত কাউন্সিলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করা হয়। গঠনতন্ত্রে তাকে অনেক ক্ষমতাও দেয়া হয়।

কিন্তু পদটির নাম নিয়ে অনেকে আপত্তি তোলেন। তাদের মতে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের চেয়ে কো-চেয়ারম্যান পদটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ নেতাকর্মীদের মতে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের চেয়ে কো-চেয়ারম্যান নামের মধ্যেও অধিক ক্ষমতার একটি ধারণা রয়েছে।

সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের চেয়ে আরও কিছু ক্ষমতা দিয়ে কো-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ‘চেয়ারপারসনের সাময়িক অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারসম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন। অথবা যে কোনো কারণে চেয়ারপারসনের পদ শূন্য হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারপারসনের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।’

কিন্তু তার ক্ষমতা কি হবে সে ব্যাপারে গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এবার সে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হবে। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত নয় সরাসরি চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দেয়া হবে কো-চেয়ারম্যানকে। দলের চেয়ারপারসনের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তিনি। কেউ যাতে কো-চেয়ারম্যানের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য এ বিষয়গুলো গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে গঠনতন্ত্রে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দেন। এ উপদেষ্টা পরিষদকে চেয়ারপারসনের স্থলে ‘বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ’ করার জোরালো প্রস্তাব রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতা এমনকি দল সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরাও এ ব্যাপারে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন।

তাদের যুক্তি হল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা না হয়ে দলের উপদেষ্টা করা হলে তা আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবেন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলতে অনেকেই মনে করেন তারা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কাজে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে এবার বিএনপির উপদেষ্টা করা হতে পারে। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। যে যে সেক্টরে অভিজ্ঞ তাদের দিয়ে বিষয়ভিত্তিক কমিটি করা হবে। তাদের সুপারিশগুলো দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয়ও চূড়ান্ত করা হতে পারে।

নির্বাহী কমিটির সদস্যদের কাজ নির্দিষ্ট করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে এই প্রস্তাব সংযোজন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ গত কাউন্সিলে ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটি করা হলেও বাস্তবে দল সেভাবে সাংগঠনিক শক্তি গড়ে তুলতে পারেনি। দলের মধ্যেও ছিল না শৃঙ্খলা। তাই দলে শৃঙ্খলা এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত প্রত্যেককে কাজ ভাগ করে দেয়া হবে। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। তারা কি কাজ করেছে তার একটি প্রতিবেদন কয়েক মাস পরপর চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশনা থাকবে।

বর্তমান নির্বাহী কমিটিতে একজন দফতর ও তিনজন সহ-দফতর রয়েছে। এই সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি ও দ্রুত সঠিক তথ্য জানতেই দফতরের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পৃথকভাবে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। বর্তমানে দফতর ও সহ-দফতর ছাড়াও একটি অতিরিক্ত ও দুটি উপ-দফতর সম্পাদক পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

‘এক নেতার এক পদ’ এই ধারাটি গত কাউন্সিলে পাস না হওয়ায় তৃণমূলে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়। এক নেতা একই সঙ্গে কেন্দ্র, জেলা এমনকি থানাতেও গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন। ফলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না। নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে এবারের কাউন্সিলে এই ধারাটি গঠনতন্ত্রে সংযোজনের জোরালো দাবি উঠছে। তবে দলের একটি অংশ এর বিরোধিতাও করছেন। বিশেষ করে যারা একই সঙ্গে তৃণমূল ও কেন্দ্রে প্রভাব রাখছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আধুনিক চিন্তা-চেতনা থেকে দলের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় পরিবর্তন করতে হয়। আসছে কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের নেতারা নানা ধরনের প্রস্তাব ও পরামর্শ দিচ্ছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে যা চূড়ান্ত হবে তা কাউন্সিলের ভোটে পাস হলে গঠনতন্ত্রে যোগ করা হয়। তিনি বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে একটি কমিটি হবে। এর মাধমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, যা আগামীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। -যুগান্তর

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর