মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে পারে সরকার

৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান অবস্থাকে স্বস্তিকর মনে করছেন না। এ কারণে তিনি একটি গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে যেতে পারেন।

এমনটি দাবি করছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

তিনি বলেন, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আমি জানি, তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি বর্তমান অবস্থাকে স্বস্তিকর মনে করছেন না। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী একটি গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে যেতে পারেন।”

বৃহস্পতিবার সহযোগী দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

জিএম কাদের বলছেন, “আসন্ন নির্বাচন জোটগত হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। কোনো বড় দলই এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবে না।”

এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ফের প্রধানমন্ত্রী হলে ও জিএম কাদের বিরোধী দলীয় নেতা হলে কেমন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার খারাপ লাগবে না।’

এদিকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির মতোই ‘নির্দলীয় সরকার’ চান জিএম কাদের। তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে দুটি প্রস্তাব আছে। নির্দলীয় সরকার হতে পারে। আবার প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) থাকলে নির্বাচনকালে তাঁর ক্ষমতা কিছুটা নয়, ব্যাপকভাবে হ্রাস ও নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।”

জি এম কাদের আরো বলেন, “ত্রয়োদশ সংশোধনী বিলের পক্ষে আমরা ভোট দিয়েছিলাম। তবে ৫ জানুয়ারি ও পরের নির্বাচনগুলো এবং বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনার ও বিচারকদের অপসারণের বিধান সংসদের হাতে নেওয়া মানে প্রধানমন্ত্রীর বলয়ে যাওয়া এবং সাংবিধানিক পদগুলো দলীয়করণের প্রেক্ষাপটে অবস্থা বদলেছে। সবকিছু ব্যক্তির হাতে চলে গেছে। বাস্তবে নিয়ন্ত্রণ চলছে কি চলছে না, সেটা আমি বলছি না, তবে ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের কারণে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী বিভাগের সামনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”

এদিকে জাতীয় পার্টিতে তাকে কো-চেয়ারম্যান করা নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় রওশন এরশাদের সঙ্গে তার স্বামী এইচএম এর শাদের দূরত্বের কথা বলা হলেও তা নাকচ করে দিয়েছেন জি এম কাদের।

এমনকি তাকে কো-চেয়ারম্যান করার আইডিয়াটি খোদ রওশন এরশাদের বলে দাবি জিএম কাদেরের।

তিনি বলেন, “আমি দুই সপ্তাহ আগে একটি পারিবারিক কারণে রওশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তখন তিনি নিজেই বললেন, দল বাঁচাতে হবে। তোমার ভাই তোমাকে কো-চেয়ারম্যান করতে পারেন। আমি বললাম, এমন পদ তো গঠনতন্ত্রে নেই। তিনি বললেন, চেয়ারম্যানের ক্ষমতা আছে পদ সৃষ্টি করার। পরে তা আমি ভাইকে জানাই। আর সত্যি বলতে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রবল দাবি ছিল আমি একটা কার্যকর ভূমিকা পালন করি।”

তার দাবি, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ চান দলের তিনজন মন্ত্রিত্ব ছাড়ুক এবং তিনি নিজে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালন করতে চান।

গত মেয়াদে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন জিএম কাদের। দলে নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর তাকে আবার মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলে কী করবেন? এর জবাবে তিনি জানালেন, “আমার তা নেওয়া ঠিক হবে না। এ মুহূর্তে মানুষের যে প্রত্যাশা, তার সঙ্গে এটা যায় না।”

জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সাংসদরা পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবির দিকে ঝুঁকছে কি না জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, “এটা আমি এখনই বলতে পারব না। তবে এটা জোর দিয়ে বলতে পারি, জাপার প্রায় সবাই চাইছে সরকার থেকে সরে এসে সক্রিয় রাজনীতি করতে।”

তিনি জানান, সংসদে জাতীয় পার্টির ৪০ জন এমপির মধ্যে ২৩-২৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়েছেন। সরকার বা ইসির প্রতি তাঁদের একটা আনুগত্য বা স্বাভাবিক কৃতজ্ঞতা থাকা স্বাভাবিক। জাপা এখন দুই ধারায় বিভক্ত। বলা চলে সংসদ রক্ষার দিকে ১০ ভাগ আর দ্রুত নির্বাচনের দিকে ৯০ ভাগ।

গত রবিবার রংপুরে এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তার ছোটভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। এরপরদিন সোমবার ঢাকায় জাতীয় পার্টির সরকার সমর্থক সাংসদ ও সভাপতিমণ্ডলীর নেতাদের একাংশের জরুরি বৈঠকে এরশাদের সিদ্ধান্তকে ‘গঠনতন্ত্রবহির্ভূত’ ঘোষণা হয়।

সেইসঙ্গে এরশাদের স্ত্রী এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশনকে দলের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন’ করা হয়েছে বলে জানান পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

এরপর মঙ্গলবার দুপুরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন এরশাদ। এতে তিনি জিয়াউদ্দিন বাবলুকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আগের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে ফের দলের মহাসচিব করেন।

বুধবার জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করা ও বাবলুকে সরিয়ে রুহুল আমিনকে মহাসচিব করার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন এরশাদ।

তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী রওশন এরশাদকে দলের কো-চেয়ারম্যান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তার বয়স এখন ৭৬ বছর। তিন বছর পর আগামী নির্বাচনের সময় তার বয়স হবে ৭৯ বছর। সে সময় তিনি চলতে পারবেন কিনা আমি জানি না। আমি নিজেও চলতে পারব কিনা জানি না।”

এরশাদ আরো বলেন, “বাবলুকে আমি আমার ছেলের মতো জানতাম। কিন্তু সে সেলফিসের মতো আচরণ করেছে। আমি যখন রংপুরে ছিলাম, আমার স্ত্রীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে বাবলু। এ কারণেই তাকে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দিয়েছি।”

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর