রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশি নাগরিকত্ব’: জড়িতদের শনাক্তে চলছে তদন্ত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিন্ডিকেট সদস্যের সহযোগিতায় বাংলাদেশি নাগরিকত্ব হিসেবে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেয়ার এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে নির্বাচন কমিশনের। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনসহ কয়েক স্তরের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

এদের মধ্যে রয়েছে- এলাকার স্কুল শিক্ষক, চৌকিদার, দফাদার ও জনপ্রতিনিধি। তাদের একজন স্কুল শিক্ষক সিরাজুল হক। তিনি দেশের প্রচলিত আইন না মেনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অনেক রোহিঙ্গাকে নিজের আত্মীয় পরিচয়ে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে নিজে শনাক্তকারী হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করার কাজে সহযোগিতা করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

সরেজমিন ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা ঘুরে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় শিক্ষক নামধারী সিরাজুল হক তথ্য সংগ্রহকারীদের ওপর দলীয় প্রভাব বিস্তার করে সীমান্তে অবস্থান করা বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র করিয়ে দেয়ার জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।

ঘুমধুম ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর বলেন, রেজু আমতলী এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে সিরাজুল হকের অনুরোধে আমি একজনের ভোটার ফরমে স্বাক্ষর করি। পরবর্তীতে জানতে পারি সে রোহিঙ্গা নাগরিক।

একই কথা বলেন ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল কান্তি চাকমা। তিনি বলেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্তে শিক্ষক সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে ১৩ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব করার কাজে সংশ্লিষ্টতার সত্যতা মিলেছে।

এর মধ্যে আজিজুল হকের ছেলে বলে আমার কাছ থেকে একটি ফরমে মাস্টার সিরাজ স্বাক্ষর নেয়। সে যে রোহিঙ্গা তা আমি জানতাম না। বাকি ১২ জনের ফরমেও সিরাজুল হকের সুপারিশের ভিত্তিতে অন্যরা স্বাক্ষর করে বলে জানা গেছে। এরা সবাই নাকি রোহিঙ্গা।

স্থানীয় চৌকিদার বদিউর রহমান বলেন, সিরাজুল হকের সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা সহজে ভোটার হয়ে গেছে। এভাবে যদি রোহিঙ্গারা ভোটার হতে থাকে, তাহলে একদিন পুরো এলাকা রোহিঙ্গাদের দখলে যাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক সিরাজুল হক বলেন, আমি যাচাইকারী কিংবা শনাক্তকারী ছিলাম না, এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেনেছি অনিয়মের মাধ্যমে কিছু সিন্ডিকেট সদস্যের সহযোগিতায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্রধারী হয়েছে। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনসহ কয়েক স্তরের তদন্ত চলছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার ও তদন্ত কমিটির প্রধান এসএম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে সরেজমিন তদন্ত করেছি। তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর