বিদেশ থেকে ২১শ’ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে সরকার

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিদেশ থেকে ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকার (২৫ কোটি মার্কিন ডলার) ঋণ নিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি বিদ্যুৎ-রেলসহ আরও চার খাতের জন্যও ঋণ নেয়া হচ্ছে। এতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রায় এই ঋণের অঙ্ক ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার।

ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যাংক, দি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কর্মাশিয়াল ব্যাংক, চায়না ডেভেলমেন্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) ও সুমিটোমো মিতশু ব্যাংকিং কর্পোরেশন (এসএমবিসি)। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘অনমনীয় ঋণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির (এসসিএনসিএল)’ সভায় পৃথক ঋণের প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, কঠিন শর্তের ঋণের ঝুঁকি হ্রাস এবং নমনীয়তা পরীক্ষা ও অনুমোদনের জন্য অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। ‘হার্ড টার্ম লোন কমিটি’ বাতিল করে নতুন এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ঋণের ৩৫ শতাংশ বিদেশি ঋণ হলে সেক্ষেত্রে অনমনীয় ঋণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। এ কমিটি ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিয়ে থাকে।

সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসজনিত ব্যয় মেটাতে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার, রেলের কেনাকাটার জন্য ২৮ কোটি ডলার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য ২৫৪ কোটি ডলার, পটুয়াখালীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ১৫৫ কোটি মার্কিন ডলার ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে ৭৮ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের আগে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ফি বাবদ সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার (৪ কোটি ১০ লাখ ডলার) ব্যয় কমানো হয়েছে।

এসসিএনসিএল বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যে কোনো ঋণ চুক্তি অনুমোদনের জন্য অর্থায়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে বিদেশি ঋণের প্রস্তাব এসসিএনসিএল (স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল লোন) কমিটিতে দ্রুত পাঠাতে হবে। প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর পর ঋণ নেয়ার প্রস্তাব কমিটিতে উপস্থাপন করা হলে ফাইন্যান্সিং কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হবে।

এসসিএনসিএল’র কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এসব প্যাকেজের আওতায় নেয়া কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকার ঋণ নেবে সরকার। এর মেয়াদ ১৫ বছর। অর্থ সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার বৈঠকে বলেন, কোভিড মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এ ঋণ বেশ উপকারে আসছে। তবে অর্থায়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

এছাড়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি নেটওয়ার্ক টেকসই প্রকল্পের আওতায় ৭৬৪ কিলোমিটার নতুন লাইন সঞ্চালন নির্মাণ, ২২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন সংস্কার, বিভিন্ন ক্ষমতার ৪১টি নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ ও ৫৮টি উপকেন্দ্র সংস্কার এবং ৭টি বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং ফেসিলিটি নির্মাণ করা হবে। এজন্য ঋণ নেয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা (৭৮ কোটি মার্কিন ডলার)। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা।

ঋণ প্রস্তাব সম্পর্কে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, এই প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ পরিবাহিত করার লাইনের সঙ্গে সংযোগ থাকা এবং চীন সরকারের পক্ষে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে গত বছর বিষয়টি চুক্তি ছিল। এজন্য সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে চলতি বছরের ৭ জুন ঋণ প্রস্তাব চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণের সুদ হার ২ শতাংশ।

এনসিএনসিএল কমিটির সভায় ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৫৫ কোটি মার্কিন ডলার বা ১৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে এই কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ঋণের মেয়াদ ১৫ বছর। ৬ মাসের লাইবরসহ সুদের হার ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন।

পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ২১ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা বা ২৫৪ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এই ঋণ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়। এরপর ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যাংক অব চায়না। এই ব্যাংক থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরে আলোচনার মাধ্যমে ঋণের খরচ ১৮৭০ কোটি টাকা বা ২২ কোটি মার্কিন ডলার কমানো হয়। পরে এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে ব্যাংকের একটি সম্পত্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই ঋণের মেয়াদ ১৫ বছর।

সূত্র জানায়, কেনাকাটার জন্য ২৮ কোটি ২৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭ মার্কিন ডলারের ঋণ নেয়ার ব্যাপারে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) ও সুমিটোমো মিটসুই ব্যাংক কর্পোরেশনের (এসএমবিসি) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রেল মন্ত্রণালয়। ঋণের মেয়াদ ১৯ বছর। এখানে এজেন্সি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বছর ২০ হাজার মার্কিন ডলার। আর ব্যবস্থাপনা ফি ধরা হয়েছে ঋণের ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ঋণের প্রস্তাব পাসের জন্য উপস্থাপন করা হয় অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। কিন্তু কমিটি আপত্তি তুলে এজেন্সি ফি নিয়ে।

পরবর্তী সময়ে ঋণের এজেন্সি ফিসহ অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় পর্যালোচনার জন্য সিঙ্গাপুর ঋণ প্রদান কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়। এরপর ঋণ ইস্যু কর্তৃপক্ষ এজেন্সি ফি ২০ হাজার মার্কিন ডলার কমিয়ে ১০ হাজার ডলার নির্ধারণ করে এবং ব্যবস্থাপনা ফি ১ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির আপত্তির মুখে ঋণ খরচ ৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার সাশ্রয় হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর