ঢাকাকে ঢেলে সাজানোর চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরেই এ কাজ শুরু করবেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আগামী ১ বছরের মধ্যে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে ইউনিট থেকে শুরু করে থানা-ওয়ার্ডের সব কমিটি নতুন করে করা হবে।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ঢাকা মহানগর সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সংগঠনকে অগোছালো রাখার কোনো সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অল্প কিছু দিনের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় দুটি উপনির্বাচন হচ্ছে।

এগুলো শেষ হলে আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি; ইউনিটগুলোর সম্মেলন করে ওয়ার্ড কমিটি, সেগুলোর সম্মেলন করে থানা কমিটিগুলো করব। ঢাকা মহানগরে ওয়ার্ড আছে প্রায় দেড়শ’। থানা আছে প্রায় ৫৪টি। আগামী এক বছরের মধ্যে এ সম্মেলনগুলো আমরা শেষ করব।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এতে উত্তরের সভাপতি হন শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হন এসএম মান্নান কচি।

আর দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে আবু আহাম্মদ মন্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হুমায়ূন কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্বও দেয়া হয় নতুন নেতাদের হাতে। তারা তখন থেকেই কাজ শুরু করেন। কিন্তু করোনার কারণে সে কাজ ঝুলে যায়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পর গত মাসে উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ খসড়া কমিটি অনুমোদের জন্য জমা দিয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা ‘বেহাল’। বিশেষ করে থানা-ওয়ার্ডের সব কমিটি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। এর আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের।

অনুমোদের জন্য জমা দিয়েও নানা অভিযোগের কারণে তা ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও ক্ষুব্ধ ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের কাজ শুরু হয়। সে সময় বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু থানা-ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন হলেও ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত কোনো কমিটির সম্মেলন হয়নি।

এদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম দলের বেশ কয়েকটি মিটিংয়ে ঢাকা বিভাগে আওয়ামী লীগের নাজুক সাংগঠনিক অবস্থার কথা তুলে ধরেন। সর্বশেষ দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি বলেন, ঢাকা সবচেয়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিভাগ।

বিশেষ করে ঢাকা শহরে বেশি সমস্যা রয়েছে। কোনো একটি থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। আগামীতে কমিটি করতে হলে জেলা ছাড়া যেন কমিটি না হয় সেজন্য দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলন ছাড়া কমিটি গঠন করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে।

ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক যিনি সেই সময় ঢাকা দক্ষিণের সমন্বয়ক ছিলেন, তিনি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে গিয়ে বিগত কমিটির নেতাদের ডেকে পাননি বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, তাদের বারবার ডাকলেও সাড়া দেয়নি। সে কারণে প্রতিটি থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ঢাকার অন্তর্গত এক থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় আওয়ামী লীগের আগের কমিটিগুলোর সম্মেলন কোনোটাই নির্ধারিত সময়ে হয়নি।

এর আগে একবার সম্মেলন হয়েছিল ১২ বছর পরে, আরেক সম্মেলন হয়েছিল ১৩ বছর পরে। সে তুলনায় গত কমিটি সবচেয়ে কম সময় ছিল। নগরের থানা-ওয়ার্ডের কমিটিগুলোর ক্ষেত্রে একই অবস্থা ছিল। কোনো সময়ই সঠিক সময়ে এগুলোর সম্মেলন হয়নি।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দীর্ঘদিনের এ অবস্থা থেকে বের করে আনতে চান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ফলে এবার দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটকে ‘আপ টু বটম’ ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

করোনাকালীন সময়ে কিভাবে সম্মেলনগুলো হবে তা নিয়েও আলোচনা চলছে। বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগ নেতারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত খসড়া কমিটিতে বেশ কয়েকটি থানার শীর্ষ পর্যায়ের নেতার নাম রাখা হয়েছে। সে বিষয়গুলো নিয়েও চিন্তা করছেন তারা।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, আমরা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য অপেক্ষায় আছি।

নগর কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরে আমরা থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করব। আমরা ঘরে বসে কমিটি দিতে চাই না।

চেষ্টা করব সংশ্লিষ্ট থানা-ওয়ার্ডে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রোগ্রাম করে কমিটি দিতে। সেটা কিভাবে করা যায় তা নিয়েও আমরা ভাবছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর