বিদেশে পড়তে ইচ্ছুকদের শঙ্কা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উচ্চ মাধ্যমিকে অটোপাসের ঘোষণা আসার পর এখন চলছে ফল নির্ধারণের কৌশল গ্রহণের প্রক্রিয়া। এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি আগামীকাল বৈঠকে বসছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোপাসের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এগুলো সমাধানে সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও শিক্ষাবিদরা মতামত দেবেন। এরপর চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। অটোপাসের ঘোষণা আসার পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বলছেন, অটোপাসের কারণে তারা শঙ্কায় পড়েছেন। কারণ অটোপাসের সনদ বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা এখনো তা বলা যাচ্ছে না।

অটোপাসের ঘোষণার পরপরই এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেছেন বোর্ড প্রধানরা। বোর্ড চেয়ারম্যানদের প্রথম বৈঠকে মানোন্নয়ন, এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য, বোর্ড পরিবর্তন, বিভাগ পরিবর্তন, কারিগরি থেকে জেএসসি পাস করে সাধারণ শিক্ষায় এসএসসি দেয়া এবং উন্মুক্ত থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মাদ ইউনুস বলেন, এসব বিষয়ে সমাধানে প্রত্যেক বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টরা বৈঠক করবেন। এ ছাড়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরাও আলোচনা করবেন। এরপর এই প্রস্তাবনাগুলো চেয়ারম্যানদের কাছে দেবেন। এরপর বোর্ড চেয়ারম্যানরা তাদের প্রস্তাবনা টেকনিক্যাল কমিটির কাছে জমা দেবেন।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি অনেক জটিল। আমাদের এমন আরো অনেক বৈঠক করতে হবে। এরপর একটি প্রতিবেদন টেকনিক্যাল কমিটির কাছে জমা দিতে পারবো।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিয়মিত, অনিয়মিত, মান উন্নয়ন ও অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এই নিয়ে একটি গাইডলাইন প্রস্তুতকরণের কাজ চলছে। বিষয়টি খুবই জটিল। মন্ত্রী যেহেতু ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল দেয়ার কথা বলেছেন সেহেতু এই সময়রেখা নিয়েই কাজ করছি।
অটোপাসের ঘোষণার পর দ্বিধায় পড়েছেন ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীর সিংহভাগের লক্ষ্য থাকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার। ইংরেজি মাধ্যমের ফলাফলে ‘প্রেডিকটেড রেজাল্ট’ লেখা হয়। কিন্তু অটোপাস দেয়া হলে ট্রান্সক্রিপ্টে লেখা হবে ‘অটোপাস’। তাদের দুশ্চিন্তা এতে আন্তর্জাতিক মানের উপরে কোনো প্রভাব পড়তে পারে।
জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের ছাড়াও অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিকে উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। অটোপাসে তারা গড় ফলাফলে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা। তবে অনুমেয় এই সংখ্যাটা খুবই কম। আবার জেএসসিতে কোনো বিভাগ না থাকায় এইচএসসি’র সঙ্গে কোনো তুলনা চলে না। জেএসসি থেকে বাংলা ও ইংরেজি বাদে অন্য বিষয়ে মূল্যায়নের সুযোগও তেমন নেই। অন্যদিকে এসএসসিতে এক বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীরা পরে উচ্চ মাধ্যমিকে অন্য বিভাগে চলে যায়। আবার মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড থেকেও সাধারণ শিক্ষায় আসে অসংখ্য শিক্ষার্থী। আর সব থেকে বেশি শঙ্কায় পড়েছেন মানোন্নয়ন ও অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা। যদিও তাদের পাস করিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
আবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন যাদের স্বপ্ন তাদের মনেও উঁকি দিয়েছে ভয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের একটি গড় করে নম্বর নির্ধারণ করা থাকে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে ৮০ নম্বর। আর প্রকৌশল ও মেডিকেলে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত ও জীববিদ্যার গ্রেড নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ফলে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে বাংলা, ইংরেজির থেকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রথমেই আমি বলবো আমাদের উৎকণ্ঠা দূর হয়েছে। উৎকণ্ঠা দূর হলেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কীভাবে মূল্যায়ন হবে। এটা স্বাভাবিক এবং এই মূল্যায়ন একটি কঠিন কাজ। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আসবেই। এই নিয়ে পরামর্শক কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। আমি বলবো, এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের দাবি করা উচিত যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে একটা সুন্দর মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকে। আর যাদের উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য আছে তাদের প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, এইচএসসি’র ফলাফল নির্ধারণের নীতি ও কৌশল তৈরির কাজ করছে কারিগরি কমিটি, সঙ্গে বিশেষজ্ঞরাও আছেন। পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আগেই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের কাজ শেষ করা হবে। শিক্ষার্থীদের যে গ্রেড দেব, তা নিয়েই উচ্চশিক্ষায় যাবে তারা। তাছাড়া উচ্চশিক্ষায় আলাদা মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকায় এটা বড় কোনো প্রশ্ন নয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর